পাঁচদিন ধরে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে লুকোচরি খেলেও শেষরক্ষা হল না। অবশেষে পুলিশের জালে ধরা পড়লেন বিতর্কিত বিজেপি নেতা রাকেশ সিং। প্রদেশ কংগ্রেসের সদর দফতর বিধান ভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার রাত দুটো নাগাদ কলকাতার ট্যাংরার এক ফ্ল্যাট থেকে বিজেপি নেতা রাকেশ সিংকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের খবর জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান রূপেশ কুমার। তিনি জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাতে রাকেশ সিংকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রাকেশ সিং গত কিছুদিন ধরেই পলাতক ছিলেন ৷ পুলিশও তাঁর খোঁজে সক্রিয় তদন্ত চালাচ্ছিল। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ২৫, ২৭ ধারা, রাষ্ট্রের সম্মান নষ্ট করার অভিযোগে, ২, ১০৯, ১১৫(২), ১১৮(১), ২২৬(২), ৩(৫), ৩২৪(২), ৩২৬, ৩২৯(৪), ৩৫১, ৭৯ ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
গত সপ্তাহে বিহারে রাহুল গান্ধীর ভোটার অধিকার যাত্রার মঞ্চ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রয়াত মাকে কুকথা বলা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়ায়। কলকাতায় রাকেশ সিংয়ের নেতৃত্বে বিধান ভবনের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। কংগ্রেস অফিসে ভাঙচুর, রাহুল গান্ধীর ছবিতে কালো কালি মাখানো, এই অভিযোগে কংগ্রেস সরব হয়।
এন্টালি থানায় রাকেশ ও তাঁর অনুগামীদের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা দায়ের হয়। তদন্তে নেমে তিন বিজেপি কর্মী এবং রাকেশের এক সহযোগীকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু দলের হেভিওয়েট এই নেতার হদিশ মেলেনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি বারবার ভিডিও পোস্ট করে পুলিশের চোখে ধুলো দেন। যেখানে পুলিশকে হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানান তিনি। এছাড়াও কলকাতা পুলিশের নগরপাল মনোজ কুমার ভার্মার বিরুদ্ধেও একাধিক কুকথা বলতে শোনা যায় এই বিজেপি নেতাকে। তবে ছেলে শিবম ধরা পড়ার পর শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস সহ কলকাতা পুলিশকে হুমকি দিয়ে পোস্ট করতেই পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন রাকেশ, এমনটাই ধারনা নেট নাগরিকদের।
বিধানভবনে হামলা চালানোর পর থেকে কোনও হদিনশই মিলছিল না রাকেশের। এরপর সোমবার গ্রেফতার হন রাকেশের ছেলে শিবম সিং। রাকেশ পুত্র শিবমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবাকে পালাতে তিনি সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন। এর পাশাপাশি রাকে্শ ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিজয়প্রসাদ ধানুক, সন্তোষকুমার রাজভর এবং দিব্যেন্দু সামন্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তবে পাঁচ দিন ধরে অধরাই ছিলেন ভাঙচুরের ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত রাকেশ। একদিকে বিজেপি অভিযোগ তোলে, ইচ্ছে করেই রাকেশকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, অন্যদিকে কংগ্রেস চাপ বাড়াতে থাকে। অবশেষে পাঁচ দিন পর গ্রেফতার হন রাকেশ।
তাঁকে পুলিশের গাড়িতে তোলার সময়ও শরীরী ভাষায় ঔদ্ধত্য ছিল স্পষ্ট গাড়িতে তোলার সময় মোদির নামে জয়ধ্বনি দেওয়ার পাশাপাশি বলেন, ‘রাকেশ সিং ভয় পায় না।’
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, একাধিকবার বিতর্কে জড়িয়েছেন রাজ্য বিজেপির এই নেতা। ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের ঠিক আগে পামেলা গোস্বামী মাদক মামলাতেও নাম জড়িয়েছিল এই রাকেশ সিং-এর। চিড়িয়াখানায় গোলমাল–সহ বেশ কিছু বিতর্কেও উঠে আসে তাঁর নাম।
প্রসঙ্গত, ড্রাগ কাণ্ডে ধৃত বিজেপি নেত্রী পামেলা গোস্বামীর মুখে সেইসময় বারবার উঠে এসেছে বিজেপির প্রভাবশালী নেতা রাকেশ সিংয়ের নাম। গ্রেফতার হওয়ার পর প্রথম যেদিন পামেলাকে আদালতে তোলা হয়, সেই সময় তিনি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে বারবার ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলেছিলেন। পরে এই মামলায় গ্রেফতারও হতে হয় রাকেশ সিংকে। ২০২১–এর ফেব্রুয়ারি মাসে রাকেশকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, ৯ মাস পরে তিনি জামিনে ছাড়া পান। অভিষোগ প্রমাণ করতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ারও দাবিও করেছিলেন রাকেশ সিং।
এর পাশাপাশি বন্দর এলাকায় যথেষ্ট ডাকাবুকো নেতা হিসেবে পরিচিত রাকেশ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের ঠিক আগে কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দেন। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ছিল। প্রায়শই বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে থাকা তার পছন্দের ব্যাপার বললে ভুল হবে না। রাকেশ সিংয়ের বিরুদ্ধে অতীতে পঞ্চাশটির বেশি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। চিড়িয়াখানার কর্মী সংগঠনের দখল নিয়ে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বিজেপি-তৃণমূলের খণ্ডযুদ্ধেও নাম জড়ায় এই বিজেপির এই নেতার। ফলে এখন পুলিশের লক্ষ্য তাঁকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার।