ড্রাগন এবং হাতির জোট!

IMG-20250831-WA0146

বেইজিং: ট্রাম্পের শুল্কনীতির জেরে আমেরিকার সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে ভারতের। এই প্রেক্ষাপটেই চিন সফরে গিয়ে সে দেশের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে দু’দেশের সম্পর্ককে দৃঢ় করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বৈঠকের আগে রবিবার সকালে চিনের তিয়ানজ়িনে মিলিত হন দুই দেশের শীর্ষ নেতা।সীমান্ত, অর্থনীতি থেকে শুরু করে চিন এবং ভারতের স্বার্থরক্ষা-সহ একাধিক বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করেন দুই রাষ্ট্রনেতা। এশিয়ার অন্যতম দুই শক্তিধর দেশের রাষ্ট্রনেতার বৈঠক আন্তর্জাতিক স্তরে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে মোদীর বার্তা, চিন এবং ভারতের বন্ধুত্বে কল্যাণ হবে সমগ্র পৃথিবীর। দুই দেশের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে এই সম্পর্কের সঙ্গে। এদিন বৈঠক চলে ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় ধরে। সেই বৈঠকের দু’মিনিট পাঁচ সেকেন্ডের ভিডিয়ো মোদী নিজেই সমাজমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, মোদী এবং জিনপিং মুখোমুখি বসে আছেন। চিনা প্রেসিডেন্টের সামনে নিজের বক্তব্য হিন্দিতে পড়ে শোনাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী।বৈঠক আয়োজনের জন্য প্রথমেই জিনপিংকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী। দুই রাষ্ট্রনেতার শেষ বারের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘গত বছর কাজ়ানে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছিল। তাতে আমাদের সম্পর্ক ইতিবাচক একটা দিশা পেয়েছিল। সীমান্তে বিরোধের পরবর্তী সময়ে ভারত এবং চিনের মধ্যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কৈলাস মানস সরোবর যাত্রা আবার শুরু হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান পরিষেবাও চালু হয়েছে।’’ এর পরেই চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বার্তা দিয়ে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের পারস্পরিক সংহতির উপর ভারত এবং চিনের ২৮০ কোটি মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। এতে সারা পৃথিবীর কল্যাণ হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস, সম্মান এবং সংবেদনশীলতার ভিত্তিতে আমরা এই সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহী।’’ পুরো বক্তব্যই হিন্দিতে পড়ে শোনান মোদী। পরে তা স্থানীয় ভাষায় অনুবাদ করে দেওয়া হয়। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন জিনপিং বলেন, ‘ভালো বন্ধু এবং প্রতিবেশী হয়ে অবস্থান করা পরিবর্তিত দুনিয়ায় ভারত এবং চিন দুই রাষ্ট্রের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ চিনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে। চিন এবং ভারত অন্যতম সভ্য দুই রাষ্ট্র। ড্রাগন এবং এলিফ্যান্ট-এর একসঙ্গে আসা উচিত।’ ভারত এবং চিন যে একে অন্যের কাছে থ্রেট নয়, তাও দাবি করেন জিনপিং। শুধু মাত্র সীমান্ত সম্পর্ক দিয়ে ভারত-চিন সম্পর্ক বিবেচনা করা উচিত নয় বলে জানান তিনি। জিনপিংয়ের মতে, ‘‘কূটনৈতিক এবং দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বহুত্ববাদ, বহুকেন্দ্রিক বিশ্ব এবং গণতন্ত্রকে জাগ্রত করে আমাদের শান্তি, সংহতির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’’ দীর্ঘ সাত বছর পরে চিনে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আমেরিকার শুল্ক আগ্রাসনের মাঝে এই বৈঠককে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। উল্লেখ্য, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শুল্কের অস্ত্র হাতে দাপাদাপি শুরু করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রুশ তেলের অজুহাতে ভারতের উপর চেপেছে ৫০ শতাংশ শুল্কের কোপ। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে লাগাতার রাশিয়াকেও শাসানি দেওয়া হচ্ছে। এমনকী একদফা শুল্কযুদ্ধের পর বিরল খনিজ রপ্তানি না করলে চিনের উপরও ২০০ শতাংশ শুল্ক চাপানোর হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। ইচ্ছেমতো নিষেধাজ্ঞা ও শুল্কের খামখেয়ালিপনায় ট্রাম্পের উপর বিতশ্রদ্ধ এশিয়ার দেশগুলি। বাণিজ্য ক্ষেত্রে আমেরিকার এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ ছুড়তে গ্লোবাল সাউথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এর মাঝে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন নরেন্দ্র মোদী ও শি জিনপিং।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement