মোদীকে পাল্টা নিশানা মমতার, তোপ কমিশনকেও

IMG-20250826-WA0114

কয়েকদিন আগে রাজ্যে এসে দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল সরকারকে কড়া ভাষায় বিঁধেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের প্রশাসনিক সভা থেকে মোদীর আক্রমণের জবাব দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে পাল্টা নিশানা করে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার সবচেয়ে বড় চোর’।
পূর্ব বর্ধমানের সরকারি মঞ্চ থেকে জাতীয় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ইলেকশন কমিশন, আপনাকে অনেক প্রণাম জানাই, অনেক সেলাম জানাই। দয়া করে বিজেপির ললিপপ হবেন না। তা-হলে দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।’’ সেই সঙ্গে ভিন্‌রাজ্যে বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর আক্রমণ নিয়েও সরব হন মমতা। মঙ্গলবার বর্ধমানে সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস এবং পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে যোগ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে রাজ্য সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরেন। এর পাশাপাশি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সরব হন।নিশানা করেন নরেন্দ্র মোদীকে।গত শুক্রবার বঙ্গ সফরে এসে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এমনকি দুর্নীতি নিয়ে মমতার মন্ত্রিসভারও সমালোচনা করেন।
মোদীর ওই মন্তব্যের বিরোধিতা করে ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারকে ‘চোর’ বলে আক্রমণ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আমি প্রাইম মিনিস্টারের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি। আমি তাঁর চেয়ারকে সম্মান করি। তাঁরও উচিত, আমাদের চেয়ারগুলোকে সম্মান করা। উনি কেন বলবেন, বাংলায় সব চোর? তাই তিনি নাকি টাকা বন্ধ করেছেন।’’ মমতার পালটা জবাব, ”আপনাদের ডবল ইঞ্জিন সরকার উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র সবচেয়ে বড় চোর। আপনি চোর সর্দারদের নিয়ে মিটিং করেন।”
মমতা বলেন, ‘‘বাংলাকে অপমান করার জন্য ক’টা টিম পাঠিয়েছিলেন? ১৮৬টি টিম। ভাবতে পারেন? সব পঞ্চায়েত তো আমাদের নয়। সব বিধায়কও আমাদের নয়। তা-ও সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়েছে। তার পরেও কোনও স্টুডেন্টকে যদি জ়িরো নম্বর দেন, সে কি মেনে নিতে পারে? সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেও বাংলাকে চোর বলছেন! আর চোর, গদ্দারদের নিয়ে মিটিং করছেন। লজ্জা করে না?’’ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে বারংবার। কোথাও মারধর, কোথাও থানায় নিয়ে গিয়ে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে। সবজায়গাতেই একটা বিষয় ‘কমন’ বাংলা বলার অপরাধে তাঁদের অত্যাচার করা হয়েছে। বাংলা থেকে ২২ লক্ষ শ্রমিক বাইরের রাজ্যে কাজ করেন। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, তাঁদের জামাই আদর করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মমতার কথায়, “দয়া করে ওঁদের নিয়ে যাওয়া হয়নি। কেউ সোনার কাজ ভালো করে। কেউ জামা-কাপড় ভালো তৈরি করেন। কেউ কনস্ট্রাকশনের কাজ ভালো পারে। ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জামাই আদর করে। কিন্তু তাঁদের ভাগ্যে আজ জুটছে লাঞ্চনা, বঞ্চনা, অত্যাচার, অনাচার।”বাংলার শ্রমিকরা বাইরে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গে ভিনরাজ্যের দেড় কোটি মানুষ রয়েছেন। তাঁদের উপর এই বাংলায় কোনও অত্যাচার করা হয় না। সেই কথা জানিয়ে মমতার প্রশ্ন, “তাহলে কেন ওড়িশা, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গুজরাটে বাঙালি শ্রমিকদের হেনস্তা করা হচ্ছে? আমাদের মানুষকে কি মানুষ বলে মনে করেন না?” তাঁর আরও সংযোজন, “বাংলার ছাত্রছাত্রীদের মেধা, গবেষকদের মেধা সারা বিশ্ব সম্মান করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুজরাটের লোকদের কোমরে শিকল বেঁধে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাংলার মেধাকে তাড়াতে পারে না। ওদের ছাড়া হার্ভার্ড, কেমব্রিজ চলবে না। নাসা থেকে ভাষা ওঁরাই আছে।” মঞ্চ থেকে আরও একবার পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। শ্রমশ্রী প্রকল্পের কথা জানিয়ে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। সঙ্গে শ্রমিকের সন্তানদের পড়াশোনা থেকে সমস্ত সরকারি প্রকল্প আওতায় তাঁদের নিয়ে আসা হবে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement