দিনহাটা: জন্মাষ্টমীর দিন ৯০টি কীর্তন দলকে হারমোনিয়াম, খোল ও করতাল দিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। শনিবার দিনহাটা শহরের শহীদ হেমন্ত বসু কর্নারে এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ১৬ টি অঞ্চল এবং একটি পুরসভা এলাকার ৯০ টি কীর্তনের দলকে এই সামগ্রী তুলে দেন মন্ত্রী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান অপর্না দে নন্দী, ভাইস চেয়ারম্যান সাবির সাহা চৌধুরী, তৃণমূলের দিনহাটা ২ ব্লক সভাপতি দীপক ভট্টাচার্য, দিনহাটা এক বি ব্লক সভাপতি অনন্ত কুমার বর্মণ, শহর ব্লক সভাপতি বিশু ধর, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন গুহ,এসসি ওবিসি সেলের হীরালাল দাস, দিনহাটা ভিলেজ ১ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান রুমা খাসনবিশ, অভিজিৎ বর্মন, প্রিয়াঙ্কুর রায় ছাড়াও অনেকেই। মন্ত্রীর উদ্যোগে বিভিন্ন কীর্তনের দলকে খোল, করতাল ও হারমোনিয়াম দেওয়া হলে একে কার্যত কটাক্ষ করেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক বিরাজ বসু বলেন,”মন্ত্রী বুঝে গিয়েছেন তৃণমূলের বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে। তাই এসব সরঞ্জাম দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। এতে লাভ কিছু হবে না।” এদিকে এ দিন কীর্তনের দলগুলি হাতে বাদ্যযন্ত্র দেওয়ার আগে দলের সদস্যদের মঞ্চে উঠিয়ে তাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া ছাড়াও মিষ্টিমুখ করানোর পর এই বাদ্যযন্ত্র তুলে দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন কীর্তনের দলগুলি নতুন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে দিনহাটা শহরে কীর্তনের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা করেন। শহরের রাস্তাজুড়ে ভেসে আসে বাঁশি, খোল ও করতালের ধ্বনি। ধর্মীয় আবহের পাশাপাশি এক অনন্য সাংস্কৃতিক ঐক্যের ছবিও ফুটে ওঠে দিনহাটার রাস্তায়।মন্ত্রী উদয়ন গুহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন,“কীর্তন বাংলার প্রাণের ধারা। আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অমূল্য সম্পদ। কিন্তু আধুনিকতার ভিড়ে এই ঐতিহ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কীর্তনকে পৌঁছে দিতে এবং শিল্পীদের উৎসাহিত করতে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এটা করার কারণ হচ্ছে আজকে রাজনীতিতে ধর্মকে টানা হচ্ছে। একটা কথা প্রচার করার চেষ্টা হচ্ছে, আমরা যারা আছি তারা নাকি হিন্দু বিরোধী। আমরা না হিন্দু বিরোধী, না মুসলমান বিরোধী। যারা ইসলাম তাদেরও অধিকার আছে স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালন করা। ”তিনি আরও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে আগামীদিনে কীর্তনসহ অন্যান্য লোকসংস্কৃতির প্রসারে আরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।উপস্থিত স্থানীয় শিল্পীরা মন্ত্রীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান। তাঁদের বক্তব্য, নতুন বাদ্যযন্ত্র হাতে পাওয়া শুধু সুবিধাই নয়,এটি তাঁদের মনে নতুন উদ্দীপনা এনে দেবে। এক শিল্পী বলেন, “অনেক সময় যন্ত্র না থাকার কারণে বা পুরনো যন্ত্র বাজাতে সমস্যা হওয়ায় অনুশীলন ও পরিবেশনা ব্যাহত হয়। আজকের এই সহযোগিতা আমাদের কাজকে আরও মসৃণ করবে।”দিনহাটায় জন্মাষ্টমীর উৎসব বহু বছর ধরে পালিত হলেও এবারের আবহ ছিল বিশেষ। মন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাদ্যযন্ত্র বিতরণ, সঙ্গে শোভাযাত্রা— সব মিলিয়ে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছে উৎসবে।এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মানুষও উচ্ছ্বসিত। তাঁদের মতে, সরকার ও সমাজের মিলিত প্রচেষ্টাতেই বাংলার লোকসংস্কৃতিকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। জন্মাষ্টমীর দিন তাই কেবল ধর্মীয় উৎসব নয়, কীর্তনের মাধ্যমে সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষার এক দৃঢ় প্রতিশ্রুতির সাক্ষী থাকল দিনহাটা শহর।