ভোটার তালিকায় ভুয়ো ভোটার থাকার ঘটনায় দুই আধিকারিককে নির্বাচন সংক্রান্ত সমস্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। এবার দুই ইআরও এবং দুই এইআরও-র বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। নির্বাচনের কমিশনের নির্দেশ না মেনে কেন আভ্যন্তরীন তদন্ত তারই ব্যাখ্যা দিতে বুধবারেই দিল্লি যাচ্ছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। সূত্রের খবর, বুধবার বিকেলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে দিল্লিতে হাজিরা দিতে হবে। মুখ্যসচিবকে তলব করে নির্বাচন কমিশনের তরফে যে নোটিস পাঠানো হয়েছে সেখানে এও উল্লেখ করা আছে, বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে কমিশনের মুখোমুখি হাজির হতে হবে।
প্রসঙ্গত, ভোটের কাজে অনিয়মের অভিযোগে নির্বাচন কমিশন যে চারজন অফিসারকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দিয়েছিল, তা এখনই মানছে না নবান্ন। চার অফিসারের বিরুদ্ধে এফআইআর কিংবা সাসপেনশনের রাস্তায় হাঁটেনি রাজ্য। পরিবর্তে ভোটের কাজ থেকে ২ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সোমবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে চিঠি দিয়ে এই সিদ্ধান্ত জানান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। আর এই চিঠি প্রাপ্তির চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিল্লি তলব করে নির্বাচন কমিশন।
প্রসঙ্গত, বারুইপুর পূর্ব (১৩৭) বিধানসভা কেন্দ্রে বাস্তবে কোনও অস্তিত্ব নেই, এমন ভোটারের নাম তুলে দেওয়া হয়েছে ভোটার লিস্টে। ভয়ঙ্কর এই অভিযোগের পিছনে কাদের হাত রয়েছে, তা খুঁজতে গিয়ে কমিশনের হাতে আসে পাঁচজনের নাম। যার মধ্যে রয়েছে বারুইপুর পূর্বের ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার দেবোত্তম দত্ত চৌধুরী, ওই কেন্দ্রের অ্যাসিট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার তথাগত মণ্ডল, আর ময়নার ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বিপ্লব সরকার এবং ওই কেন্দ্রের অ্যাসিট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার সুদীপ্ত দাসের নাম। ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা নিজেদের ঘনিষ্ঠ ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের কিছু গোপন নথি দিয়ে নাম নথিভুক্তিকরণের কাজ করতেন। সেসব ভোটারদের নাম হিসেবে তালিকায় সংযোজিত হত। দিল্লির নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ পাওয়ামাত্রই রাজ্যকে পদক্ষেপের নির্দেশ দেয়। সরকারি কাজে অনিয়মের অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর করতে বলে কমিশন। সাসপেন্ডের নির্দেশও দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়, ১৯৫০ সালে জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। অবিলম্বে তাঁদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করতে হবে। আর এই নির্দেশকে ঘিরেই নবান্ন ও কমিশনের মধ্যে বেনজির সংঘাত তৈরি হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেন। স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কোনও আধিকারিককে শাস্তি পেতে দেবেন না বলেও।
এরপরই নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সোমবার জানান, চারজন অফিসার ও একজন ডেটা এন্ট্রি কর্মীর বিরুদ্ধে এখনই কোনও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ঠিকই তবে তাঁদের সাসপেনশন না করেও অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে নবান্ন। মনোজ পন্থ চিঠি দিয়ে কমিশনকে জানান, আপাতত ওই পাঁচ জনের মধ্যে দু’জনকে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ‘ডেটা এন্ট্রি অপারেটর’ এবং এক আধিকারিক। বাকিদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। এরপরেই মুখ্যসচিবকে দিল্লিতে তলব করে কমিশন। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে মুখ্যসচিব দিল্লিতে হাজিরা দেন কিনা, এখন সেটাই দেখার।