ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আবহেই এবার চিন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ৩১ আগস্ট ও ১ সেপ্টেম্বর চিনের তিয়ানজিনে সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজ়েশন সামিট হতে চলেছে। সেই সামিটে অংশ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদী। ট্যারিফ নিয়ে যখন আমেরিকার সঙ্গে ভারতের প্রবল টানাপড়েন চলছে, রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য ভারত যখন আমেরিকার টার্গেট, ঠিক সেই সময়েই মোদীর এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ২০২০ সালে লাদাখে ভারত-চিন সংঘর্ষের পরে এই প্রথম বার চিন সফরে যাচ্ছেন মোদী। এর আগে ২০১৯ সালে চিন সফর করেন মোদী। ২০১৯ সালে শেষ চিন সফরে গিয়েছিলেন মোদী। তার পর লাদাখে ভারত এবং চিনের সংঘর্ষের পর থেকে দু’দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। তবে গত বছরে রাশিয়ার কাজ়ানে আন্তর্জাতিক জোট ‘ব্রিক্স’-এর পার্শ্ববৈঠকে সাক্ষাৎ করেন মোদী এবং চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার পর থেকে সীমান্ত সমস্যা কাটিয়ে দু’দেশে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করে। জানা গিয়েছে, এসসিও সদস্য দেশগুলির সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ এবং বাণিজ্যের বিষয়ে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এছাড়াও বর্তমান সফরে আলোচনার মাধ্যমে ভারত-চিন সম্পর্কে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা হবে। শীর্ষ সম্মেলনের চলাকালীন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মোদির আলাদা আলাদা বৈঠকেরও সম্ভাবনা রয়েছে। এর আগে, ২০২৪ সালের অক্টোবরে কাজানে ‘ব্রিকস’ শীর্ষ সম্মেলনে মোদী-জিনপিং সাক্ষাৎ হয়েছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক নিয়ে বার বার হুঁশিয়ারি দিয়ে যাচ্ছেন ভারতকে। ইতিমধ্যে নয়াদিল্লির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখার জন্য এই শুল্কহার আরও বৃদ্ধি করার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়ার থেকে জ্বালানি কেনা দেশগুলির মধ্যে ভারতের পাশাপাশি রয়েছে চিনও। উদ্ভূত কূটনৈতিক পরিস্থিতিতে মোদীর চিন সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চিনের তিয়ানজিন শহরে আগামী ৩১ অগস্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর এসসিও-র রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠক রয়েছে। এই আন্তর্জাতিক জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানও। এসসিও বৈঠকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ যোগ দিতে যাবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট ভাবে জানা যায়নি। তবে পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ড এবং ‘অপারেশন সিন্দুরে’র পর এসসিও-র রাষ্ট্রনেতাদের বৈঠকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে মোদী কোনও বার্তা দেন কি না, সে দিকে নজর থাকবে। এর আগে এসসিও-র প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রীদের পৃথক সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। প্রথমে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ এবং পরে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, উভয়েই সেই সম্মেলনের জন্য চিন সফরে গিয়েছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গে নাম না করে পাকিস্তানকে নিশানা করে এসেছেন রাজনাথ। স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভারত কোনও দু’মুখো আচরণ বরদাস্ত করবে না। সম্মেলনে পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খোয়াজা আসিফ মুহাম্মদের উপস্থিতিতেই নয়াদিল্লির এই অবস্থান স্পষ্ট করে এসেছেন রাজনাথ। এ বার রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনে শাহবাজ উপস্থিত থাকলে, মোদীও কোনও কড়া বার্তা দেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে।