কোচবিহার: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-র কোচবিহার সফরকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার গোটা জেলাজুড়ে ছড়াল প্রবল উত্তেজনা। সফরের শুরুতেই বিভিন্ন স্থানে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। পরিস্থিতি চরমে ওঠে যখন খাগড়াবাড়ি এলাকায় শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি নেতা নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িতে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।এদিন শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় যখন কোচবিহারে প্রবেশ করে, সেই সময় ঘোকসাডাঙা এলাকায় রাস্তার ধারে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা কালো পতাকা হাতে জমায়েত হন। তাঁরা স্লোগান দেন এবং শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ জানান। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি,“বাংলা ও বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অপমানজনক বক্তব্য তিনি রাখছেন, তার প্রতিবাদেই আমাদের এই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। ”দুপুরের দিকে উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় যখন খাগড়াবাড়ি এলাকায় শুভেন্দু অধিকারী ও নিশীথ প্রামাণিকের গাড়িকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়, তবে দুই বিজেপি নেতাই অক্ষত রয়েছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনার পর খাগড়াবাড়ি ও আশপাশের এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত বাহিনী। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, পুরো বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।শুভেন্দু অধিকারী অভিযোগ করে বলেন,তৃণমূল তাঁকে খুন করার করার চেষ্টা করেছে। জেলা পুলিশ পুলিশ সুপারের অফিসে প্রবেশের আগে ওই অভিযোগ করেন। তাঁর কনভয়ে থাকা বুলেটপ্রুফ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে শুভেন্দুর অভিযোগ।রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মঙ্গলবার কোচবিহার সফরে এসে এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তুললেন। তাঁর দাবি, তাঁকে বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের দিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে আছেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং কোচবিহার জেলার পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,“আমি গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে এসেছিলাম। অথচ আমার উপর আক্রমণের ছক কষা হয়েছে। আমাকে বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দিয়ে খুনের চেষ্টা হচ্ছে। পুরোটা পরিকল্পিত।তিনি আরও বলেন,“পুলিশ সুপারের দফতরের সামনেই আমাকে ঘিরে ফেলা হয়। সেখানে আমার কনভয়ের নিরাপত্তা ছিল না। এটা প্রমাণ করে পুলিশ রাজনৈতিক নির্দেশেই চলছে।” বিষয়টি নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং ডিজিপিকে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন বলেও জানান।এই বিস্ফোরক অভিযোগের পাল্টা জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন,“শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে বলছেন বাংলাদেশি মুসলমান ও রোহিঙ্গাদের দিয়ে আক্রমণ হয়েছে, সেটা বলে উনি গোটা কোচবিহারের মানুষকে অপমান করছেন। যারা বিক্ষোভ করেছে, তারা ৯০ শতাংশ কোচবিহারের মানুষ।”তিনি আরও বলেন,“বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে হয়তো আমাদের মতো ওপার থেকে আসা কেউ থাকতে পারেন, কিন্তু তাদের রোহিঙ্গা বা বাংলাদেশি বলাটা অপমানজনক। কোচবিহারবাসী এসব ভাষা মানে না। এই ভাষার বিরুদ্ধেই আমরা লড়াই করছি।” মন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন,“আপনি মানুষকে বাংলাদেশি বলে অপমান করবেন, আর ভাববেন কোচবিহারে এসে আপনাকে ধান-দুব্বা দিয়ে স্বাগত জানানো হবে? তা তো হয় না।”শুভেন্দু অধিকারীর কোচবিহার সফর ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই উত্তেজনা ছিল চরমে। ঘোকসাডাঙা ও খাগড়াবাড়ি এলাকায় তৃণমূল কর্মীরা কালো পতাকা ও বিক্ষোভে অংশ নেন, দেওয়া হয় “চোর” স্লোগান। খাগড়াবাড়িতে শুভেন্দুর কনভয় লক্ষ্য করে ইট ছোড়া ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ। পুলিশ পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।বিরোধী দলনেতার এমন জাতিগত ও আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ টেনে আনা অভিযোগ, এবং শাসক দলের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া দুই মিলিয়ে রাজ্য রাজনীতির উত্তেজনার পারদ আরও চড়ল। পর্যবেক্ষকদের মতে, এই ধরণের বক্তব্য আগামী দিনে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে,বিশেষত কোচবিহার তথা গোটা উত্তরবঙ্গ জুড়ে।যদিও ওই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, “আমাদের কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে ২০টি স্থানে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। খাগড়াবাড়িতেও ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ হচ্ছিল। শুভেন্দু অধিকারীর কনভয় ইচ্ছাকৃতভাবে দাঁড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করে। ওনার গাড়ি থেকেই লাঠি নিয়ে আমাদের শান্তিপ্রিয় কর্মীদের উপর হামলার চেষ্টা হয়। সেখানে একটা বিশৃঙ্খলা বা উত্তেজনা ছড়িয়েছে পড়ে। সেখানে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে কনভয় বের করে দিয়েছেন। এসব ঠিক নয়। উনি গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করছেন, বাকিদেরও গণতান্ত্রিক ভাবে আন্দোলন করার অধিকার আছে বা তাঁদের করতে দিতে হবে।তিনি আরও বলেন, “ শুভেন্দু অধিকারী যেখানে যাবেন সেখানে সবাই আপনার জন্য গোলাপের পাপড়ি ছিটিয়ে রাখবেন, আপনি সেখানে গিয়ে অন্য দলের নেতা, কর্মীদের গালিগালাজ করবেন, আপনাকে কেউ কিছু বলবে পারবে না। আপনি মাইকে জয় বাংলা শ্লোগান শুনতে চাইবেন না। কেউ তৃণমূল করুক সেটা আপনি চান না। সেটা তো হয় না। আপনি আপনার কাজ করুন, অন্যান্য দলের কর্মীদের তাঁদের কর্মসূচী করতে দিন। কেন আপনি কনভয় নিয়ে এসে কতো গুলো পুলিশ, সিআরপিএফ এবং পার্টির কর্মীদের নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে যাবেন কেন। এই মানসিকতার পরিবর্তন আনা দরকার। বিরোধী দলনেতাকে মানুষ এভাবে কেউ দেখতে চায় না। এছাড়াও তিনি যেখানে যান, সেখানেই গণ্ডগোল সৃষ্টি করেন। কোচবিহারে এসেও তাই করার চেষ্টা করেছে। এখানে পুলিশ সক্রিয় ছিল বলেই কোন রকম গণ্ডগোল করতে বা সৃষ্টি করতে পারে নি।”ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহ বলেন, “যাঁরা বাংলা ভাষা ও বাংলার সংস্কৃতিকে অপমান করেন, তাঁদের মানুষ কালো পতাকাই দেখাবে। প্রতিটি জায়গায় আমাদের কর্মীরা এই প্রতিবাদ জানাবেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দু অধিকারীর গাড়িতে হামলার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।









