গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রেসে বাংলা পত্রিকায় মূল্য পাঁচ আনা

photocollage_202572913217888

বেবি চক্রবর্ত্তী

গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ছিলেন পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এর সহযোগী। তাঁর প্রেসে মাসিক পত্রিকার মূল্য ছিল পাঁচ আনা। শেষে এক পয়সার সাপ্তাহিকী পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়। পাশাপাশি এই পত্রিকায় কৃষক ও নীলকর সাহেবদের শোষণের কাহিনীও প্রকাশিত হত। ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট ও দেশী জমিদারদের অব্যাহত হুমকিও তাঁকে এ-কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।আশৈশব জমিদার- মহাজন- কুঠিয়াল ও গোরা পল্টনের অত্যাচার ও উৎপীড়ন প্রত্যক্ষ করে হরিনাথের মনে যে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে প্রতিকারচিন্তা জাগে সেখান থেকেই তিনি সাময়িকপত্র প্রকাশের প্রেরণা লাভ করেন। তখন গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্নের সহপাঠী হরিনাথ মজুমদার আধ্যাত্মিক গুরু ও মহান সাধক ফকির লালনের গানের একান্ত অনুরাগী ছিলেন। তিনি ধর্মভাব প্রচারের জন্য ১৮৮০ সালে তিনি নিজস্ব একটি বাউল সঙ্গীতের দল প্রতিষ্ঠা করেন। দলটি কাঙ্গাল ফকির চাঁদের দল নামে পরিচিতি ছিল। দীর্ঘ আঠারো বছর ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ সম্পাদনা করার পর সাংবাদিকতা পেশা পরিত্যাগপূর্বক ধর্ম সাধনায় মনোনিবেশ করেন।গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন ছিলেন উনিশ শতকের পণ্ডিত- শিক্ষাবিদ এবং সমাজসংস্কারক। তিনি বিদ্যাসাগরের সহপাঠী ছিলেন। বিদ্যারত্ন অবিভক্ত বাংলার চব্বিশ পরগনার রাজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ছিল রামধন বিদ্যাবাচস্পতি। গিরিশচন্দ্র ১৮৪৫ সাল থেকে ১৮৫১ সাল পর্যন্ত সংস্কৃত কলেজের গ্রন্থাধ্যক্ষ ছিলেন। ১৮৫১সাল থেকে ১৮৮২ সালে সেখানে অধ্যপনা করেন। বিধবা বিবাহ আন্দোলনে উৎসাহী ছিলেন তিনি। প্রথম জীবনে ব্রাহ্মধর্মের অনুরাগী হলেও পরে বৈদান্তিক মতাবলম্বী হন।জাতিভেদ প্রথার বিরোধী ছিলেন। সংস্কৃত যন্ত্র প্রেস স্থাপনে পন্ডিত ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রধান সহযোগী ছিলেন।কলকাতায় গিরিশ বিদ্যারত্ন যন্ত্র নামে প্রেস স্থাপন করেন। নিজ গ্রামে দশ হাজার টাকা দিয়ে দরিদ্র ভান্ডার স্থাপন করেছিলেন। হরিনাথ মজুমদার তার দ্বি-মাসিক পত্রিকা গ্রামবার্তা গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন প্রেস থেকেই প্রথম প্রকাশ করেন।তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে আছে রঘুবংশ মল্লিনাথটীকা সমেত, দশকুমার চরিতের বঙ্গানুবাদ। বিধবা বিষম বিপদ নাটক। মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ ও শব্দসার। নিঃস্ব কাঙ্গাল হরিনাথ সারাজীবনে সচ্ছলতার মুখ দেখতে না পেলেও ১৮৭৩ সালে কুমারখালীর নিজ গ্রামেই ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকাটির নিজস্ব ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৮ বছর রাজশাহীর রাণী স্বর্ণকুমারী দেবী’র অর্থ আনুকূল্যে পত্রিকা চালানোর পর আর্থিক কারণে ও সরকারের মুদ্রণ শাসন ব্যবস্থার জন্য পত্রিকাটিকে বন্ধ করে দিতে হয়। তিনি ১৯০৩ সালে ডিসেম্বরে পরলোক গমন করেন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement