চলতি বছরেই বিহারে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সেই রাজ্যে ভোটার তালিকা সংশোধন করছে নির্বাচন কমিশন। শোনা যাচ্ছে, এর পর বাংলাতেও সেই প্রক্রিয়া চালু করবে কমিশন। তাতে প্রচুর ভোটারের নাম বাদ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যদিও এই মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়ে জানিয়েছেন, একটি ভোটারের নামও যেন বাদ না পড়ে। তবে পাল্টা হুঙ্কার ছাড়তে দেরি করেননি শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা থেকে অনেক নাম বাদ পড়বেই। সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বিএলওদের উদ্দেশে বার্তা দিয়েছিলেন, কারও নাম যেন বাদ না পড়ে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে শুভেন্দু দাবি করেন, ভোটার তালিকা থেকে ‘অবৈধ’ এবং ‘ভুয়ো’ নাম বাদ যাওয়া কেউ আটকাতে পারবেন না। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, কোনও নাম বাদ যেতে দেবেন না। আমি বলছি, নাম বাদ যাবেই।’’ শুভেন্দুর কথায়, ‘‘রোহিঙ্গা, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী, মৃত ভোটার, একাধিক জায়গার ভোটার তালিকা নাম থাকা ভোটার এবং মুখ্যমন্ত্রী ও আইপ্যাকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হওয়া ভুয়ো ভোটারদের নাম কিছুতেই তালিকায় থাকবে না। এই সব নাম কাটা পড়বেই।’’ শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যে হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টানরা চলে এসেছেন, তাঁরা অনুপ্রবেশকারী নন। তাঁরা সিএএ-র মাধ্যমে বৈধ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন।’’ বিরোধী দলনেতার অভিযোগ, তৃণমূলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাক প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে অনেক ভুয়ো নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়ে রেখেছে। এই সব ভোটারের কোনও অস্তিত্ব নেই বলে শুভেন্দুর দাবি। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত কোনও নির্বাচনেই তৃণমূল প্রকৃত জনমত পেয়ে জেতেনি, এই ভুয়ো ভোটারদের জোরে জিতেছে বলে তিনি দাবি করেন। ২০১৪ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বছরে রাজ্যের ৮০টি বিধানসভা কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ ভোট বৃদ্ধি হয়েছে বলে শুভেন্দু দাবি করেন। এই বৃদ্ধি ‘অস্বাভাবিক’ বলেও তাঁর অভিযোগ। ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’য় এই সব ‘গরমিল’ ধরা পড়ে যাবে বলে বিরোধী দলনেতা মনে করছেন।ভোটার তালিকার সমীক্ষা তথা সংশোধনের জন্য ‘বুথ লেভেল অফিসার’ (বিএলও) নিয়োগের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গে অনিয়ম চলছে বলে শুভেন্দুর দাবি। তিনি বলেন, ‘‘এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুণ মাইতির কথা অনুযায়ী এগরার মহকুমাশাসক তথা ইআরও ৮৪ জন আইসিডিএস এবং আশা কর্মীকে বিএলও হিসাবে নিয়োগ করেছেন। খবর পেয়েই আমি মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে জানাই। কারণ, এটা বেআইনি। যে বুথে স্থায়ী সরকারি কর্মী রয়েছেন, সেখানে অস্থায়ী বা আংশিক সময়ের কর্মীদের বিএলও হিসাবে নিয়োগ করা যায় না।’’ শুভেন্দুর অভিযোগ, ইআরও নিয়োগের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার মানছে না কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নির্দেশিকা। বিরোধী দলনেতার কথায়, ‘‘গোটা দেশে এই নির্দেশিকা জারি রয়েছে যে, মহকুমাশাসক ছাড়া অন্য কেউ ইআরও হতে পারবেন না। কিন্তু এখানে মুখ্যসচিব সেই নির্দেশিকা লঙ্ঘন করছেন। সে বিষয়েও অভিযোগ জানিয়েছি।’’