নতুন ভারত গড়ার এক শক্তিশালী পদক্ষেপ: ঐতিহাসিক ভারত-ব্রিটেন বাণিজ্য চুক্তি

IMG-20250726-WA0087
পীযূষ গোয়াল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী

নয়াদিল্লি: প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ঐতিহাসিক ভারত-ব্রিটেন সর্বাঙ্গীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি ভারতের কৃষক, মৎস্যজীবী, হস্তশিল্পী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যেতে সহায়ক হবে। এর ফলে, অগণিত কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। সাধারণ মানুষ প্রতিযোগিতামূলক এক বাজারে ব্যয় সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের পণ্য সামগ্রী কিনতে পাবেন। অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় অবাধ বাণিজ্য সংগঠনের আওতাধীন দেশসমূহ এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহী সহ বিভিন্ন উন্নত রাষ্ট্রের সঙ্গে এধরনেরই বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে বিকশিত ভারত গড়ে তোলার যে স্বপ্ন আমরা দেখি, তা বাস্তবায়নের জন্য মোদী সরকারের অন্যতম কৌশল হল আর্থিক উন্নয়নকে সর্বোচ্চ স্তরে নিয়ে যাওয়া এবং বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।প্রধানমন্ত্রীর কৌশল – মোদী সরকার ২০১৪ সালে ভারতের অর্থনীতির প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের জন্য বিশেষ এক কৌশল গ্রহণ করে। সেই কৌশলের অন্যতম অঙ্গ উন্নত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করা। এই বাণিজ্য চুক্তিগুলি বিনিয়োগকারীদের আস্থা যেমন অর্জন করতে সহায়ক হবে, পাশাপাশি বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তাকে দূর করবে। উন্নত রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি ভারতের বাণিজ্যিক স্বার্থ যেমন রক্ষা করবে, পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলিও এর থেকে লাভবান হবে। অর্থাৎ দু পক্ষই এধরনের চুক্তির সুফল পাবে। পূর্ববর্তী সরকারগুলি বিদেশী প্রতিযোগীদের কাছে ভারতের বাজার খুলে দিতো। ফলে, এদেশের ব্যবসায়ীরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হতেন। ইউপিএ সরকারের সময়কালে উন্নত রাষ্ট্রগুলি ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করতে আগ্রহী ছিল না। তারা বিশ্বের ভঙ্গুর অর্থনীতির রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে বিবেচনা করতো। নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ২০১৪ সালের তুলনায় প্রায় তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩৩১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। যুগান্তকারী সংস্কার, সহজে ব্যবসা করার সুবিধে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থার কারণে ভারত সম্ভাবনার একটি দেশ হিসেবে বর্তমানে বিবেচিত হচ্ছে। আজ সমগ্র বিশ্ব ভারতে উন্নয়ন যাত্রার শরিক হতে চায় এবং অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করতে উৎসাহী হয়।বাজারে পণ্য বিক্রির সুযোগ এবং প্রতিযোগিতার পরিবেশ – ভারত ও ব্রিটেনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তি ব্রিটেনের বাজারে ভারতীয় পণ্য বিক্রির আরো সুযোগ তৈরি করে দেবে। ভারত থেকে কোনো জিনিস রপ্তানী করা হলে ৯৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে না। এর ফলে, ৫,৬০০ কোটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের বিপুল সুযোগ তৈরি হবে। আর্থিক ও বাণিজ্যিক চুক্তির সহায়তায় ২০৩০ সালের মধ্যে এই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতীয় পণ্যগুলি তাদের প্রতিযোগীদের থেকে বাড়তি সুযোগ পাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন। ফুটবল, ক্রিকেটের বিভিন্ন সরঞ্জাম, রাগবি বল এবং নানা ধরনের খেলনার জন্য ব্রিটেনের বাজার খুলে দেওয়া হবে। বিপুল কর্মসংস্থান – ভারতে যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ গড়ে উঠবে তার ফলে রপ্তানী বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়বে। এর হাত ধরে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ব্রিটেনে বস্ত্র, চর্ম ও জুতো রপ্তানীর ক্ষেত্রে প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে ভারত স্থান করে নিয়েছে। এর ফলে, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হস্তশিল্পীরা উপকৃত হবেন। আন্তর্জাতিক মূল্যশৃঙ্খলে এদেশের মহিলা এবং হস্তশিল্পীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। অলঙ্কার, ইঞ্জিনিয়ারিং সামগ্রী, রাসায়নিক ও বৈদ্যুতিন পণ্যের রপ্তানী বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, মোবাইল ফোনের মতো নানা সামগ্রী বিদেশের বাজারে পাঠানো সম্ভব হবে।কৃষককে অগ্রাধিকার – ৯৫ শতাংশের বেশি কৃষি ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাত পণ্য ব্রিটেনে রপ্তানী করলে কোনো শুল্ক দিতে হবে না। এর ফলে, কৃষি ভিত্তিক পণ্য সামগ্রীর রপ্তানী বৃদ্ধি পাবে ও গ্রামাঞ্চলে সমৃদ্ধি বাড়বে। আগামী তিন বছরে শুল্ক মুক্ত বাজারের সুবিধা পাওয়ার ফলে কৃষি পণ্যের রপ্তানী ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ভারত-ব্রিটেন সর্বাঙ্গীন অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য চুক্তির ফলে, ব্রিটেনের গুরুত্বপূর্ণ বাজারের সুবিধে ভারতীয় কৃষকরা পাবেন। এতদিন তারা জার্মানি, নেদারল্যান্ড সহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন দেশের বাজারেও এই সুবিধা পাচ্ছিলেন। ফলস্বরূপ, ২০৩০ সালের মধ্যে কৃষি ভিত্তিক পণ্য সামগ্রী রপ্তানীতে ভারত ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের যে লক্ষ্য মাত্রা রেখেছে তা অর্জিত হবে। হলুদ, গোলমরিচ, এলাচ, আমের জুস, আমের আচার, নানা ধরনের ডালও শুল্ক মুক্ত বাজারের সুযোগ পাবে। আমাদের কৃষকরা এই পণ্যগুলি বিক্রি করার সময়ে এগুলির গুণমান, প্যাকেটজাত করা এবং শংসাপত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। এর ফলে, কৃষি ভিত্তিক মূল্যশৃঙ্খলে প্রচুর কাজের সুযোগ তৈরি হবে। অনগ্রসর শ্রেণীর স্বার্থরক্ষা – ব্রিটেনের সঙ্গে এই বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে ভারত কৃষকদের স্বার্থরক্ষার দিকটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ব্রিটেনের দুগ্ধজাত পণ্য সামগ্রী, ওটস এবং রান্নার তেলের ক্ষেত্রে কোনো কর ছাড় দেওয়া হবে না। এর মাধ্যমে খাদ্য সুরক্ষা, দেশীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্যের স্থিতাবস্থা ও অনগ্রসর শ্রেণীর যেসব নাগরিক কৃষি কাজে যুক্ত তাদের স্বার্থ বজায় থাকবে। মৎস্যজীবীদের নানা সুযোগ সুবিধা – ব্রিটেনের সামুদ্রিক পণ্য আমদানী সংক্রান্ত বাজারে ভারতীয় পণ্য প্রবেশের সুযোগ তৈরি হওয়ায় ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও কেরালার মৎস্যজীবীরা উপকৃত হবেন। ভারত থেকে রপ্তানীকরা চিংড়ি সহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের উপর কোনো শুল্ক থাকবে না। ফলে, এগুলির রপ্তানী ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। বর্তমানে ব্রিটেনের ৫৪০ কোটি মার্কিন ডলারের সামুদ্রিক পণ্য বাজারে মাত্র ২.২৫ শতাংশ ভারতীয় পণ্য বিক্রি হয়।পরিষেবা ও পেশাদারিত্ব – নতুন এই চুক্তি তথ্যপ্রযুক্তি, আর্থিক পরিষেবা ও শিক্ষা ক্ষেত্রে ভারতীয়দের জন্য নতুন নতুন সুযোগ তৈরি করবে। চুক্তি ভিত্তিক পরিষেবা প্রদানকারী, বিনিয়োগকারী, যোগ প্রশিক্ষক, রাঁধুনী এবং সঙ্গীতজ্ঞ সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের দক্ষ পেশাদাররা সহজেই ব্রিটেন যেতে পারবেন।উদ্ভাবনমূলক এক অবাধ বাণিজ্য চুক্তি – প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের অবাধ বাণিজ্য চুক্তির সুফল শুধুমাত্র পণ্য ও পরিষেবার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। ইএফটিএ গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলি ভারতের সঙ্গে ১০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের যে অঙ্গীকার করেছে, তার ফলে এদেশে প্রত্যক্ষভাবে ১০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ভারতের তথ্যপ্রযুক্তির সংস্থাগুলির অস্ট্রেলিয়ায় বাণিজ্য করার সময়ে দ্বিগুণ কর দেওয়ার সমস্যার সম্মুখীন হতো। অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এধরনের একটি অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সেই সমস্যার সমাধান হয়েছে। ব্রিটেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তিটির সব থেকে বড় দিক হল, সে দেশে থাকা ভারতীয় কর্মী এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারীদের তিন বছরের জন্য সামাজিক সুরক্ষা খাতে কোনো অর্থ দিতে হবে না। এর ফলে, ভারতীয় পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলি প্রতিযোগিতার বাজারে লাভবান হবে। গ্রাহকদের জন্য উন্নত গুণমানের পণ্য সামগ্রী – এই বাণিজ্য চুক্তির ফলে প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে, ভারতীয় গ্রাহকরা ব্যয় সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নতমানের পণ্য সামগ্রী কিনতে পারবেন। মোদী সরকার অবাধ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময়ে গুণমান বজায় রাখার বিষয়টিকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। সরকার যে কোনো অবাধ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বিভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করে। তাই মোদী সরকার যখনই কোনো দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করে তখন সব শিল্প সংস্থাগুলি তাকে স্বাগত জানায়।ব্রিটেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিটি দুটি বৃহৎ অর্থনীতির দেশের মধ্যে উচ্চাকাঙ্খী এক বাণিজ্য চুক্তি। এর ফলে, অনগ্রসর শ্রেণীর মানুষদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে তাঁদের পণ্য সামগ্রী আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানী সুযোগ তৈরি হবে। নতুন ভারতের বাণিজ্য নীতির সুন্দর এক উদাহরণ হিসেবে এটি বিবেচিত হবে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement