সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে সংসদের বাদল অধিবেশন। আর অধিবেশনের প্রথম দিনেই আচমকাই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে উপরাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেন জগদীপ ধনখড়।মঙ্গলবার ধনখড়ের ইস্তফা গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। আর ধনখড়ের ইস্তফা ঘিরেই তোলপাড় জাতীয় রাজনীতি। কেন আচমকা এহেন সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি, সেই নিয়ে শুরু হয়েছে চর্চা। বিজেপি বা আরএসএসের চাপেই এই ইস্তফা কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছে বিরোধীরা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মঙ্গলবার সকালে সমাজমাধ্যমে একটি পোস্টে উপরাষ্ট্রপতি-সহ বিভিন্ন পদে ধনখড়ের কাজের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর সুস্বাস্থ্যও কামনা করেছেন। তবে তাঁর ইস্তফা নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্নের কোনও জবাব এখনও আসেনি কেন্দ্রের তরফে। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় সরব হতে দেখা যায় বিরোধীদের।
জানা গিয়েছে, সোমবার রাজ্যসভার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির বৈঠক ছিল। কিন্তু সেখানে গরহাজির ছিলেন জে পি নাড্ডা এবং কিরেন রিজিজু। যদিও নাড্ডা পরে জানান, গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কাজে ব্যস্ত ছিলেন তাঁরা। বৈঠকে থাকতে না পারার কথা আগেই তাঁরা জানিয়ে দিয়েছিলেন উপরাষ্ট্রপতিকে। উল্লেখ্য, সোমবার বিজনেস অ্যাডভাইসরি কমিটির প্রথম বৈঠকটি হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। সেখানে নাড্ডা এবং রিজিজু দু’জনেই ছিলেন। কিন্তু বিকেল সাড়ে ৪টেয় ফের বৈঠক হলে সেখানে হাজির হননি দুই মন্ত্রী। কিন্তু কংগ্রেসের মতে, ধনখড়ের আচমকা ইস্তফার নেপথ্যে রয়েছে নাড্ডা-রিজিজুর এহেন আচরণ। হাত শিবিরের নেতা জয়রাম রমেশের কথায়, বিকেলে বৈঠক শুরুর আগে অপেক্ষা করা হয় দুই মন্ত্রীর জন্য। তাও তাঁরা আসেননি। দুপুর একটা থেকে বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে খুব গুরুতর কিছু একটা ঘটেছে, তারপরেই ইস্তফা দিয়েছেন ধনখড়। গোটা বিষয়টিতে উপরাষ্ট্রপতি ‘অপমানিত’ হয়েছেন বলেই মত রমেশের। ধনখড় নিজে অবশ্য ইস্তফাপত্রে লিখেছেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণেই তিনি এই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে এই তত্ত্ব মানতে নারাজ বিরোধী দলগুলি। কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “কী কারণ, তা একমাত্র ধনখড়ই জানেন। এই নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই। হয় তিনি জানেন, নয়তো সরকার জানে।” রাজ্যসভার শিবসেনা (উদ্ধব) সাংসদ সঞ্জয় রাউত জানিয়েছেন,“এর নেপথ্যে রাজনীতির কোন খেলা রয়েছে, তা শীঘ্রই প্রকাশ্যে চলে আসবে। উপরাষ্ট্রপতির ইস্তফা কোনও সাধারণ ঘটনা নয়।” রাউতের বক্তব্য, সোমবারও তিনি ধনখড়কে দেখেছেন। তখন তাঁকে দৃশ্যত সুস্থই লাগছিল। উদ্ধব শিবিরের অপর রাজ্যসভা-সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদীরও বক্তব্য, সোমবার ঠিকঠাকই দেখাচ্ছিল ধনখড়কে। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদ সৈয়দ নাসির হোসেন বলেন, “গতকাল পর্যন্তও তিনি রাজ্যসভার কাজকর্মে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি কি নিজেই ইস্তফা দিলেন, না কি তাঁকে বাধ্য করা হয়েছে, এটি প্রকাশ্যে আসা উচিত।” ধনখড়ের আচমকা ইস্তফা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে এমকে স্ট্যালিনের ডিএমকে-ও। স্ট্যালিনের দলের সাংসদ টিআর বালু মঙ্গলবার সকালে স্পষ্টতই দাবি করেন, ‘চাপের কারণেই’ ইস্তফা দিয়েছেন ধনখড়।
ধনখড়কে ২০১৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল করা হয়। ওই সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে ধনখড়ের সংঘাত লেগে থাকত। পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে তিনি উপরাষ্ট্রপতি হন। সংবিধান অনুসারে, ভারতের উপরাষ্ট্রপতিই সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভা পরিচালনা করেন। রাজ্যসভার চেয়ারম্যান পদে থাকাকালীন বিরোধী সাংসদেরা বার বার তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কক্ষ পরিচালনায় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও তুলেছে বিরোধী দলগুলি। তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবও এনেছিলেন বিরোধীরা। যদিও রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ নারায়ণ সিংহ সেই সময়ে তা খারিজ করে দিয়েছিলেন।