মমতার বার্তার অপেক্ষায় তৃণমূল
পরের বছরই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে পাখির চোখ করে দল কোন পথে প্রস্তুতি শুরু করবে, তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ থেকে সেই বার্তাই দেবেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার ২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ সমাবেশ। ছাব্বিশের ভোটের আগে এটাই তৃণমূলে মেঘা কর্মসূচি। তাই আজকের শহিদ সমাবেশকে কেন্দ্র তৃণমূলে অন্যরকম উন্মাদনা। ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে তৈরি হয়েছে তৃণমূলের শহিদ সমাবেশের ত্রিস্তরীয় মঞ্চ। মূল মঞ্চের উচ্চতা ১৩ ফুট। সেখানেই বসবেন মমতা-অভিষেক-সহ শীর্ষ নেতৃত্ব। দ্বিতীয় মঞ্চের উচ্চতা ১২ ফুট। সেখানে বসবেন শহিদ পরিবারের সদস্যরা। তৃতীয় মঞ্চ ১১ ফুট উঁচু। এই মঞ্চে বসবেন তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য শীর্ষ নেতারা। ত্রিস্তরীয় এই মঞ্চের দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট, প্রস্থ ৪২ ফুট। লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি হয়েছে মঞ্চ, বসতে পারবেন মোট ৬০০। একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি পরিদর্শনে রবিবার বিকেলে ধর্মতলায় যান তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সমস্ত বিষয় নিয়ে খোঁজ নেন তৃণমূলনেত্রী। একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি পরিদর্শনে রবিবার বিকেলে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়ামের ক্যাম্পে যান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি এ দিন প্রস্তুতি খতিয়ে দেখেন, কথা বলেন দলীয় কর্মীদের সঙ্গেও। গত দুদিন ধরে জেলা থেকে কলকাতামুখী কর্মী-সমর্থকরা। গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম-সহ বিভিন্ন জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রবিবার সকাল থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে শুরু করেন শহরে। হাওড়া স্টেশনের পাশে তৈরি করা হয়েছে গেট ও মঞ্চ। এছাড়াও বাসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। কর্মীদের সরাসরি হাওড়া স্টেশন থেকে বাসে করে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, সল্টলেক স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র সহ বিভিন্ন ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে তারা মিছিল করে সভাস্থলের দিকে রওনা হবেন। প্রতি বছর তৃণমূলের শহিদ দিবসের সমাবেশে কয়েক লক্ষ মানুষ ধর্মতলায় আসেন। এদিকে ছাব্বিশে বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবার ভিড় আরও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা। তৃণমূল সূত্রে খবর, বিধাননগর, যুবভারতী, গীতাঞ্জলির মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে সেবাশ্রয়। আর ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ, শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশনে মেডিক্যাল ক্যাম্প পরিচালনার দায়িত্বে থাকছে প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা শ্রেয়, আরজি কর কাণ্ডের পর রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে রাশ ধরে রাখতে শশী পাঁজাকে মাথায় রেখে তৈরি হয় প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশন বা পিএইচএ। পাশাপাশি ভেঙে দেওয়া হয় তৃণমূলের পুরনো প্রোগ্রেসিভ ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে থাকা সবকটি চিকিৎসক সংগঠন। আবার ডায়মন্ড হারবারে সেবাশ্রয়ের ব্যানারে এক মাস ধরে স্বাস্থ্য শিবির করেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চ থেকে শাসকদল নিয়ে চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তোষ দূর করার চেষ্টা সর্বতোভাবে করতে দেখা গেছে অভিষেককে। ঘটনাচক্রে, তৃণমূলের সাসপেন্ডেড নেতা তথা চিকিৎসক শান্তনু সেন সেবাশ্রয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকার আমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। অন্যদিকে, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে চাইলেও আমন্ত্রণ পাননি পিএইচএ’র প্রথম সারির চিকিৎসক নেতারা। এই আবহে একুশে জুলাই উপলক্ষে দুটি পৃথক ব্যানারে মেডিক্যাল ক্যাম্প নজর কেড়েছে। এ নিয়ে প্রোগ্রেসিভ হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী শশী পাঁজার বক্তব্য, ‘পিএইচএ এবারই প্রথম একুশে জুলাই মেডিক্যাল ক্যাম্পের আয়োজন করছে। প্রথমবার আমরা সবকটি ক্যাম্পের দায়িত্ব নিতে পারব না বলে জানিয়েছিলাম। সেবাশ্রয়ও খুব ভাল কাজ করছে। কোনও ভাগ নেই।’
কোচবিহারের দিনহাটার বাসিন্দা রাজবংশী সমাজের উত্তম ব্রজবাসীকে অসমের ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে ধরানো হয়েছিল চিঠি। সেই উত্তম ব্রজবাসীকে দেখা যাবে সোমবার ধর্মতলায় একুশের মঞ্চে। ২১ জুলাইয়ের শহিদ সমাবেশ উপলক্ষ্যে কলকাতায় দলে দলে আসতে শুরু করেছেন তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। সম্প্রতি বারবারই অভিযোগ উঠছে বিজেপিশাসিত রাজ্যগুলিতে বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকরা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলেও আসছে অভিযোগ। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই দিনহাটার সাদিয়াল কুঠিতে উত্তমবাবুর কাছে এসেছিল এনআরসি-র নোটিস। তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়ে গিয়েছিল চাপানউতোর। ক্ষোভ উগরে দিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিনহাটার বাসিন্দা হওয়ার পরেও কী করে উত্তমের নাম এনআরসি-তে এল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। উত্তমবাবুর দাবি, তিনি তো কোনওদিনই অসমে যাননি। শুধু তাই নয়, যাননি কোচবিহারেও। এই বিষয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি, উত্তম ব্রজবাসী অসমের বাসিন্দা। এনআরসি ইস্যুতে তিনি দুজন আইনজীবী দাঁড় করিয়েছিলেন আদালতে। কোচবিহারে তাঁর অস্থায়ী বাড়ি। এই প্রসঙ্গে অসমের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, অসম সরকার কোচ রাজবংশীদের এনআরসি-র তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। তিনি যে কোচ রাজবংশী সেটা আদালতে জানাননি উত্তমের আইনজীবীরা। এবার ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেও এনআরসি ইস্যু, বাংলা ভাষা ও বাঙালিদের ‘অপমান’ নিয়ে ঝড় উঠবে বলেই ইঙ্গিত তৃণমূলের তরফে। সম্ভবত সেই প্রতিবাদে সামিল হতেই উত্তমকুমার ব্রজবাসীকে সোমবারের মঞ্চে দেখা যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই, এই বার্তাই জোরালোভাবে দিতে চায় তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানে উত্তম ব্রজবাসীকে সামনে রেখে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকেই আরও সুর যে উঁচুতে তুলবেন সেটা বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।