বর্ষার মধ্যেই নিম্নচাপের ভ্রূকুটি। আর তার জেরেই লাগাতার ভারী বর্ষণ কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায়। সোমবার রাত থেকেই শুরু হয়ে যায় বৃষ্টি। মঙ্গলবার সকাল থেকেও ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় শহর ও শহরতলিতে। টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে যায় শহর কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও হাঁটুজল তো কোথাও তো সেই জলের উচ্চতা ছুঁয়েছে আরও বেশি। গাড়ি-বাইক ডুবে যেতে থাকে জমা এই জলে।কাজের দিনে বেরিয়ে নাকাল হন নিত্যযাত্রীরা।
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, নিম্নচাপ এবং ঘূর্ণাবর্তের জেরে আগামী তিন দিন দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সঙ্গে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ঝড়বৃষ্টি চলবে উত্তরবঙ্গেও।হাওয়া অফিস আগেই জানিয়েছে, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং সংলগ্ন এলাকায় একটি নিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সক্রিয় রয়েছে একটি ঘূর্ণাবর্তও, যেটি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ক্রমশ উত্তর-পশ্চিমে ঝাড়খণ্ড এবং উত্তর ছত্তীসগঢ়ের দিকে এগোবে। মৌসুমি অক্ষরেখা বঠিন্ডা, রোহতক, কানপুর, ডালটনগঞ্জ এবং গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের নিম্নচাপ অঞ্চলের কেন্দ্র বরাবর দক্ষিণ পূর্বে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। তা ছাড়া, রাজ্যে এমনিতেই সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। এ সবের জেরে সপ্তাহভর কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে ঝড়বৃষ্টি চলবে। আজ বুধবারও ঝড়বৃষ্টি চলবে। পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ায় ভারী বৃষ্টি হতে পারে। বাকি জেলাগুলিতেও বিক্ষিপ্ত ভাবে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ঝড়বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার বিশেষ উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। শুধু তা-ই নয়, নিম্নচাপের জেরে আগামী ২৪ ঘণ্টা পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে সমুদ্র উত্তাল থাকবে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আগামী সাত দিন উত্তরবঙ্গেও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। বুধবার ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে জলপাইগুড়ি, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ার জেলায়। রবি ও সোমবার জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিম্পং ও আলিপুরদুয়ারে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এর মাঝে সারা সপ্তাহ জুড়েই কমবেশি ঝড়বৃষ্টি চলবে। টানা বৃষ্টিতে জল জমে কলকাতার সড়কপথের লাইফ লাইন বলে পরিচিত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের একাংশে। একইসঙ্গে প্লাবিত হয় মুক্তরামবাবু স্ট্রিট, কলেজ স্ট্রিট, নর্দান পার্ক, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, কসবা, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, নয়াবাঁধ, যাদবপুর, ব্রহ্মপুর, পিকনিক গার্ডেন, যোধপুর পার্কের মতো এলাকা। উল্টোডাঙ্গা ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা পুরোটাই চলে যায় জলের তলায়। হাঁটুজল আমহার্স্ট স্ট্রিটে। একই অবস্থা দেখা যায় ঠনঠনিয়াতেও। মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে ফুটপাথও চলে যায় জলের তলায়।দক্ষিণে রাসবিহারী, বেহালা, শিলপাড়া, সখেরবাজার সহ জোকার বিস্তীর্ণ এলাকা সর্বত্রই জল থইথই অবস্থা হয়ে যায়। আর পাতিপকুরের আন্ডারপাস তো দৃশ্যতই জলাধারের আকার ধারণ করে। কলকাতা শহরে এই জল জমার জেরে সমস্যা হয় বাস, ট্রাম, ট্যাক্সি চলাচলে।ফলে কাজে বেরিয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে অনেকটা দেরি হয় নিত্যযাত্রীদের। কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর, সকাল ৮টা পর্যন্ত আলিপুরে ৪৫ মিলিমিটার, কাঁকুড়গাছিতে ৮০ মিলিমিটার, সল্টলেক আর নিউ টাউন এলাকায় ৮৮ মিলিমিটার, ব্যারাকপুরে ৯৩ মিলিমিটার, উত্তর কলকাতার শ্যামবাজারে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিট, ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি, কলেজ স্ট্রিট বাটা মোড়, নর্থ পোর্ট থানা লাগোয়া এলাকায় জল জমে। এ ছাড়াও কাঁকুড়গাছি, পাতিপুকুর আন্ডারপাসে জমে জল। একই সমস্যা পার্ক স্ট্রিটেও। কলকাতা পুরনিগম সূত্রে খবর, রাত ২টো থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত দত্ত বাগানে ৭৭ মিলিমিটার, বীরপাড়ায় ৭৮ মিলিমিটার, মার্কাস স্কোয়ারে ৬৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও বালিগঞ্জে ৬৬ মিলিমিটার, চেতলায় ৪৭ মিলিমিটার, মোমিনপুরে ৬৭ মিলিমিটার এবং কালীঘাটে ৬৩ মিলিমিটার, ধাপায় ৬২ মিলিমিটার, তপসিয়ায় ৬৩ মিলিমিটার, উলটোডাঙায় ৬৯ মিলিমিটার, কামডহরিতে ৭০ মিলিমিটার, পামার ব্রিজ এলাকায় ৭৮ মিলিমিটার ও ঠনঠনিয়ায় ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ।আলিপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, আলিপুরে বৃষ্টি হয়েছে ৮১.৬ মিলিমিটার, দমদমে ৯৯.৩মিলিমিটার, সল্টলেক ৮৮.৩ মিলিমিটার ৷
তবে মঙ্গলবার সকাল থেকেই জমা জল সরানোর তৎপরতা দেখা গিয়েছে কলকাতা পুরনিগমের তরফে। সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় কাজে নামনে নিকাশি বিভাগের কর্মীরা। চলে আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে জল সরানোর কাজ।