ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরব মোদী

IMG-20250707-WA0097(1)

ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে সুর চড়ালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার কথা তুলে ধরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরব হতে দেখা যায় তাঁকে। ব্রিকস-এর সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা শুধুমাত্র ভারতের উপর নয়, এটি মানবতার উপর আঘাত।’ উল্লেখ্য, ২২ এপ্রিল পহেলগামে জঙ্গি হামলায় মৃত্যু হয় ২৬ জনের। এই হামলার দায় গ্রহণ করে পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’। ওই হামলার পিছনে পাক-মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীদের হাত আছে তা সামনে আসার পরেই ’অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান চালায় ভারত। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অন্তত ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি। সেই বিষয়ে ভারতের প্রতিনিধিদলও পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন দেশে। এবার ব্রিকস সম্মেলনে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে সরব হলেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘মানবতার সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সন্ত্রাসবাদ। পহেলগাঁওয়ে একটি অমানবিক এবং কাপুরুষোচিত জঙ্গি হামলা হয়েছে। এটি মানবতার উপর আঘাত।’ এরই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করার জন্য ব্রিকস দেশগুলিকে একটি স্পষ্ট এবং ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের মতো বিষয়ে দ্বিমুখী নীতির কোনও স্থান নেই। যদি কোনও দেশ সন্ত্রাসবাদকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সমর্থন করে, তবে তাকে অবশ্যই এর মূল্য চোকাতে হবে।’ তাঁর মতে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে একেবারেই দ্বিধা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের শিকার এবং এর সমর্থকদের একই মাপকাঠিতে বিবেচনা করতে পারি না। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থে সন্ত্রাসবাদকে যে কোনও নীরব সমর্থন বা অনুমোদন কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ‘শান্তি ও নিরাপত্তা এবং বৈশ্বিক শাসন সংস্কার’ শীর্ষক অধিবেশনে, শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রতি ভারতের অবস্থানের কথাও স্পষ্ট করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ব্রিকসের তরফেও পহেলগাঁওয়ে হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে। এরই সঙ্গে সব রকমের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথাও জানানো হয়েছে। ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির ‘বঞ্চনা’ নিয়েও সরব হয়েছেন মোদী। তাঁর দাবি, দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলির প্রায়শই দ্বিচারিতার শিকার হচ্ছে। দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলি বর্তমান বিশ্ব কূটনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেও এই দেশগুলির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না বলেও সেখানে মন্তব্য করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জোট বা গোষ্ঠীগুলিতে এই দেশগুলির প্রতিনিধিত্ব থাকা জরুরি। উল্লেখ্য, গ্লোবাল সাউথ দেশগুলির মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া এবং ওশিয়ানিয়ার উন্নয়নশীল এবং স্বল্প উন্নত দেশগুলি। মোদী ‘উন্নত’ দেশগুলির বিরুদ্ধে কার্যত অভিযোগ আনেন। তিনি জানান, গ্লোবাল সাউথের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় না। তিনি বলেন, “জলবায়ু সঙ্কট মোকাবিলার অর্থ, উন্নয়ন, প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে এই দেশগুলিকে বেশির ভাগ সময়েই নামমাত্র কিছু দেওয়া হয়ে থাকে।” মোদীর দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল দেশগুলির সঙ্গে এই বঞ্চনা চলছে। ‘ব্রিক্‌স’ সম্মেলনে তাঁর বক্তৃতার সারাংশ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি লিখেছেন, “গ্লোবাল সাউথকে ছাড়া আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলি যেন এমন একটি মোবাইল ফোন, যার সিম আছে কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই।” এই পরিস্থিতি বদলাতে জোরাল সওয়াল করেন মোদী। তাঁর সাফ কথা, সফটওয়্যারের যুগে টাইপরাইটার চলতে পারে না। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবারই ব্রাজিলে পৌঁছে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। রিও ডি জেনেরিও-র গ্যালিও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতেই রাজকীয় অভ্যর্থনা জানানো হয় তাঁকে। এই নিয়ে চতুর্থবার লাতিন আমেরিকার এই দেশটিতে পা রাখলেন মোদী।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement