নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না ‘অযোগ্য’রা

IMG-20250707-WA0138

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাদের ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাদের কেউই এসএসসি-র নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। সোমবার এমনই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে করতে হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া। সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে পুরোপুরি বাদ দিতে হবে ‘চিহ্নিত অযোগ্য’দের। তাদের মধ্যে কেউ ইতিমধ্যে আবেদন করলে তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ফের নতুন করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারির নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। চলতি বছরেই নিয়োগে অনিয়মের জন্য এসএসসির ২০১৬ সালের গোটা নিয়োগ প্যানেল বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ফলে চাকরি গিয়েছিল প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর। তবে রাজ্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাময়িক সময়ের জন্য ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে সর্বোচ্চ আদালত এও জানিয়ে দিয়েছিল, ৩১ মে-র মধ্যে শিক্ষক নিয়োগের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। সেইমতো নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল এসএসসি। সেখানে প্রায় ৪৪ হাজার শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। সেই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছিল মামলা। সেই মামলার শুনানিতেই কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, চিহ্নিত অযোগ্যদের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের নির্দেশ, কোনও ‘দাগি বা চিহ্নিত অযোগ্য’ প্রার্থী যদি ইতিমধ্যেই আবেদন করে থাকেন, সেই আবেদনপত্র বাতিল করতে হবে। হাই কোর্ট স্পষ্টতই জানিয়ে দিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনেই নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। বিজ্ঞপ্তির বাকি অংশে আদালত হস্তক্ষেপ করেনি। এদিন আদালতে নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের পাশেই দাঁড়াতে দেখা যায় রাজ্য এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনকে। চিহ্নিত অযোগ্যদের পাশে দাঁড়িয়েই সওয়াল করেন স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যুক্তি, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা বয়সজনিত ছাড় পাবেন না। কিন্তু তাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারবে না এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি সুপ্রিম কোর্টের তরফে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সওয়াল শুনে বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্য বলেন, ‘এতবড় দুর্নীতির অভিযোগ, টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তারপরও এটা বলবেন?’ তখন স্কুল সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়নি, কিছু প্রমাণ হয়েছে? কারও দোষ প্রমাণ হয়েছে? কোন আইনে এদের আটকানো হবে?’ কল্যাণ আরও বলেন,নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যদি নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যরা অংশ না নিতে পারেন, তাহলে তো ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া অসফল চাকরিপ্রার্থীরাও অংশ নিতে পারবেন না’। আদালতে এসএসসি-র দাবি, সুপ্রিম কোর্ট নির্দিষ্টভাবে অযোগ্য বলে চিহ্নিত না হওয়া ব্যক্তিদের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ দিয়েছে। তার মানে এই নয় যে, সর্বোচ্চ আদালত নির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত অযোগ্যদের গোটা প্রক্রিয়া থেকে বার করে দিয়েছে। যদিও এই যুক্তিতে সন্তুষ্ট হয়নি আদালত। বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কমিশনের কাছ থেকে এই ব্যাখ্যা প্রত্যাশিত নয়।’’ তার পরেই হাই কোর্ট জানিয়ে দেয় , চিহ্নিত অযোগ্য’দের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে বাদ দিতে হবে। তবে গত ৩০ মে যে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল এসএসসি, তাকে সামনে রেখেই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের পর নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে শিক্ষা দফতর। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, এসএসসি-র ২০২৫-এর ওই বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরিপন্থী। ওই বিজ্ঞপ্তিকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাই কোর্টে মামলা দায়ের হয়। মামলাকারীদের দাবি, প্রায় ৪৪ হাজার শূন্যপদের যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে, তা আইনসম্মত নয়। মামলাকারীরা জানিয়েছিলেন, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ‘সিলেকশন’ প্রক্রিয়া ওই সালের ‘রুল’ অনুযায়ী করতে হবে। ২০১৬ সালের চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে থেকেই তা করার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। পাশাপাশি বয়সের ছাড়ের বিষয়টিও নির্দেশ মেনে করা হয়নি বলে দাবি করেন তাঁরা। মামলাকারীদের আরও অভিযোগ, ২০১৬ সালের নিয়োগের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। সেই মামলা সামনে রেখেই নতুন করে নিয়োগের কথা বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। ফলে নতুন করে বাছাইপ্রক্রিয়া হলে, তা ২০১৬ সালের নিয়োগবিধি মেনেই হওয়া প্রয়োজন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement