ধর্ম কোনও প্রতীক নয়, মানবিকতার আত্মবিকাশ জাতির উন্নতি

world-religion-symbols-concept_1308-118039

বেবি চক্রবর্ত্তী

ধর্ম মানে ভিন্ন সম্প্রদায় স্বীকৃতি, সাম্প্রদায়িকতা নয়। ধর্ম মানে জ্ঞান এবং কর্ম। ধর্ম মানে আলোর প্রগতি মানব জাতির উন্নতি। ধর্ম হল প্রগতির একটি আলো, যা ভিন্ন ভিন্ন কাঁচের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়। ধর্ম হল এক বিশাল সমুদ্র। জাতির উন্নতি এবং মানব জাতির প্রকৃতি। হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান এই প্রত্যেক ধর্ম এক এবং অদ্বিতীয়। এই প্রতীকটি ধর্মই শ্রেষ্ঠ। কারন কয়েক দশক ধরে এই প্রত্যেকট ধর্ম হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন কত আঘাতের শিকার কত মতাদর্শের উপর প্রমাণ দিয়ে আজও যেন প্রজ্বলিত। ফলে এই প্রতীকটি ধর্ম নিজ নিজ ধর্মে শ্রেষ্ঠ এবং অদ্বিতীয়া। ধর্মের মূল কথা হল সত্য, মানে জ্ঞান যা আলোর প্রগতি প্রত্যেক জাতির জীবনে উন্নতির প্রগতি। … ধর্ম ভিন্ন শ্রেণীর কাছে ভিন্ন পরিবেশে তাদের জলবায়ুর উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে সমাজে। আরব মরু অঞ্চলের চাষবাস নেই ফলে পশুহত্যা করে জীবিকা নির্বাহ করত তারা এবং শুষ্ক মরু অঞ্চলে জলের পরিমাণ কম তারা সেই সামান্য জলকে পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করত। স্নান সহজেই করে ধর্মকাজ করার সেই রকম সুবিধা ছিল না। পর্যাপ্ত জলের ঘাটতি থাকত মরুভূমিতে। অপরদিকে সমতল ভূমিতে নদী, ঝর্ণা, সমুদ্র ছিল ফলে স্নান করে হাত-মুখ ধুয়ে ধর্মকাজ করত। এই সমতল ভূমিতে গাছপালা বেশি থাকার জন্য শবদেহ অগ্নিকুন্ডে দেওয়া হয় এবং মরু অঞ্চলে আরবে গাছপালা না থাকায় শবদেহ মাটিতে সমাধিস্থ করা হত। এছাড়াও সমতল ভূমিতে চাষবাস করা হত গরু বা বলদ দিয়ে, সেই গরুর দুধ শিশুদের খাইয়ে লালন- পালন করা হত তাই সমতল ভূমিতে গরু এবং মাটিকে পুজো করত। অন্যদিকে সেই গরু বা জীবজন্তু মরু অঞ্চলে আরবে খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত। আবার সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে যারা বসবাস করত তাদের মাছ এবং বন্য প্রাণী খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত। এভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য জলবায়ু ভেদে ভিন্ন আচার-রীতিনীতি গড়ে ওঠে ধর্মের হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, বৌদ্ধা এই প্রত্যেকটি ধর্মই হল শ্রেষ্ঠ। এক এবং অদ্বিতীয়।


ধর্ম কোনও প্রতীক নয়। মানবিকতার আত্মাবিকাশ সমস্ত মানুষের প্রগতির উন্নতি সাধন, প্রকৃতির ধারক ও বাহক এই সভ্যতার ইতিহাসের সাক্ষী। যুগ যুগ ধরে কত কিছু দেখে চলেছে! যা একটু শান্তি চায়। ধর্মজ্ঞানে একাগ্রতা বৃদ্ধি পায় মনোবল জাগ্রত হয় ‘শান্তি লাভ করে ধর্ম জ্ঞান এ আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘটে এই শান্তিলাভের মাধ্যমে। কথায় আছে ‘মনের শান্তি বড় শাস্তি’ হ্যাঁ শান্তি তখনই সম্ভব একাগ্রতা এবং মনোবল দ্বারা। এ জগতের কোনও কিছু চিরস্থায়ী নয় প্রকৃতি, জল, আলো আর বায়ু ছাড়া পার্থিব যা কিছু সব ক্ষণস্থায়ী। ধর্মের একটি বিশেষ জ্ঞান হল ‘পরিত্রাণ’। কেউ বলছে ভগবত গীতা পড়লে ‘পরিত্রাণ! আবার কেউ বলছে বাইবেল পড়লে পরিত্রাণ’! আবার অনেকে বলছেন কোরাণ পড়লে ‘পরিত্রাণ’। আবার অনেকে মনে করেন যে বৌদ্ধধর্মে গৌতম বুদ্ধ “অষ্টাঙ্গিক মার্গ’-এর মাধ্যমে আত্মার ‘ পরিত্রাণ’ কথা লেখা আছে। তথাকথিত তখন কেউ কেউ মনে করতেন যে এই ‘পরিত্রাণ’ তখনই সম্ভব যদি একাগ্রতা এবং মনোযোগের দ্বারা আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলন ঘটে। এই পরমাত্মা হল বিশ্বাস’ আর ‘আত্মা হল আমি’ আমি স্বরূপ বিদ্যমান যা উপলব্ধি করা এই ইহলোকে ভোগ, বিলাসিতা করা। পঞ্চ ইন্দ্রিয় দ্বারা সক্রিয়কর্ম করা। যা ‘আমা’তে ‘আমিত্ব’ লাভ করে। বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর। এই ‘বিশ্বাস’ শব্দটিতে ‘আমি’ বাস করে। যা চোখে দেখিয়ে বিশ্বাস করানো যায় না শুধু উপলব্ধি করতে হয় তাই হল বিশ্বাস। ধর্ম এই বিশ্বাসের ভিত। আমি উপলব্ধি স্বরূপ এখানে বিরাজমান যা আমারা সবাই। এখানে আজকের দিনে বিশ্বাস হল ধর্ম জ্ঞান। এই বিশ্বাস আর কেউ নয় আমি, আপনি এবং আমরা প্রত্যেকেই। কর্ম আমাদের জীবন। এই সভ্যতার ধারক ও বাহক। মানবিকতা হল জ্ঞান’ যা বিজ্ঞানকে তীব্র আগ্রতা থেকে আলোর পথ দেখানো। এই ‘জ্ঞান’ দুপ্রকার.. এক ভক্তিজ্ঞান, দুই শক্তিজ্ঞান। নিজেকে ভক্তি করো, বাবা-মাকে ভক্তি করো, শ্রদ্ধা করো।সহানুভূতিশীল মানসিকতা প্রয়োজনে নিজের আবেগ উদবেগকে সংবরন করা। আর শক্তি জ্ঞান হল একাগ্রতা মনোবল দ্বারা শাস্তি উপলব্ধির মাধ্যমে নিজের পার্থিব শক্তি সাধন যা ‘আমি’ অর্থাৎ বিশ্বাসের মাধ্যমে নিজেকে প্রসারণ করা। এক কথায় ‘ধর্ম’ হল ব্যক্তিত্ব বিকাশের মাধ্যমে উন্নতি সাধন। আজকের এই শিক্ষিত সভ্যতা এই ‘ধর্ম’ শব্দটিকে কুণ্ঠিত করছে এর অপব্যবহার করে লুষ্ঠিত করছে। ধর্মের ধবজা দেখিয়ে সন্ত্রাস, খুনখুনি, হিংসা তৈরি করে নিজেদের মধ্যে বিবাদের সৃষ্টি। আজকের শিক্ষা আলোর গতিবেগে এ কোন অন্ধকার দিকে ধেয়ে আসছে যা এই সভ্যতার কাছে লাঞ্ছিত ও কাঙ্খিত নয়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement