বেবি চক্রবর্ত্তী
ধৈর্য একটা বড় গুণ। মুখের সরলতা যেন বাস্তবের সফলতাকে রূপান্তরিত করেছিল তিনি ডঃ বিধানচন্দ্র রায়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে দেশবন্ধুর কাছে রাজনৈতিক দীক্ষা লাভ করেন।তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং ভারতের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী, পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের প্রভাবে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভার নির্বাচনে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পরাজিত করেন। পরে কলকাতা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যে আইন সভার সদস্য নির্বাচিত হন। মহাত্মা গান্ধির ডাকে কংগ্রেসে যোগদান করেন। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কারাবরণ করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল হওয়ার জন্য তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর লোভনীয় প্রস্তাব সবিনয় ফিরিয়ে দেন। পশ্চিমবঙ্গ আইন সভার সদস্যগণ একবাক্যে তাকে দলনেতা নির্বাচন করলে সমস্যাকণ্টকিত পশ্চিমবঙ্গের নব রূপায়ণকল্পে দায়িত্বপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী। ১৯৪১ সালের ৭ ডিসেম্বর পার্ল হারবারে জাপানি আক্রমণের পর রুজভেল্ট জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এর ফলে, জাপানের অক্ষশক্তির অংশীদার, নাৎসি জার্মানি এবং ফ্যাসিস্ট ইতালি। ১৯৪১ সালে ১১ ডিসেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে, তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস থেকে অতিরিক্ত যুদ্ধ ঘোষণা পান। অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে মিত্রশক্তির নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তিনি অন্যান্য জাতীয় নেতাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন। রুজভেল্ট যুদ্ধের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য আমেরিকান অর্থনীতির সংহতি তত্ত্বাবধান করেন এবং ” ইউরোপ-প্রথম” কৌশল বাস্তবায়ন করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট প্রথম পারমাণবিক বোমার উন্নয়নও শুরু করেন। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য যুদ্ধের পরবর্তী প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি স্থাপনের জন্য বিভিন্ন মিত্রশক্তির নেতাদের সাথে কাজ করেন, এমনকি “ইউনাইটেড নেশনস” শব্দটিও তৈরি করেন। রুজভেল্ট ১৯৪৪ সালে পুনর্নির্বাচন করেন ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চান্দামারি গ্রামের আশেপাশের এলাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিমান ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হত। সেই সময় কল্যাণীতে একটি আমেরিকান সামরিক বিমানঘাঁটি ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ফ্র্যাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের নামানুসারে এই সামরিক গ্যারিসন শহরটির নামকরণ করা হয়েছিল “রুজভেল্ট টাউন” বা “রুজভেল্ট নগর “। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের কিছু এলাকায় হ্যাঙ্গার এবং বিমানঘাঁটির অন্যান্য স্মারক এখনও দৃশ্যমান। যে ভবনগুলি রানওয়েতে বা তার উপরে নির্মিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী বিমান ঘাঁটি ছেড়ে চলে যায় এবং বিমানঘাঁটি এবং হ্যাঙ্গারগুলি অব্যবহৃত হয়ে যায়। এরপর ১৯৪৩ সালে জাপানের আত্মসমর্পণ এবং ভারতের স্বাধীনতার পর বিমান ঘাঁটিটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
১৯৫১ সালে পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের নির্দেশে “কল্যাণী” নামে একটি পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা হয়। যেখানে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভা আয়োজন করা হয়েছিল এবং কলকাতার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার আবাসন চাহিদা মেটানো হয়েছিল। কল্যাণী একটি পরিকল্পিত শহর।আধুনিক কল্যাণীর উন্নয়নের কৃতিত্ব পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়কে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পরে এই শহরের মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়। ১৯৫১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল কৈলাশনাথ কাটজু শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৫৪ সালে ৫৯তম ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভা আয়োজনের জন্য শহরটি দ্রুত নির্মিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনের স্মরণেই শহরের একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছিল ‘কংগ্রেস রোড’। বিধান চন্দ্র রায় ছিলেন একজন দূরদর্শী নেতা এবং আধুনিক পশ্চিমবঙ্গের রূপকার। তার উদ্যোগে কল্যাণী শহর একটি পরিকল্পিত শহর হিসেবে গড়ে ওঠে। শহরটি ১৯৫০-এর দশকে তার প্রেমিকার নামে নামকরণ করা হয়, যা আজও তার স্মৃতি বহন করছে। কল্যাণী শহর প্রতিষ্ঠার পেছনে বিধান চন্দ্র রায়ের একটি ব্যক্তিগত আবেগও ছিল। কথিত আছে তিনি ডাক্তার নীলরতন সরকারের কন্যা কল্যাণীকে ভালোবাসতেন, কিন্তু তাদের প্রেম পরিণতি পায়নি। এই শহরের নামকরণ এবং এর পেছনের প্রেমের গল্পটি আজও অনেকের কাছে কৌতূহলের বিষয়। কেউ কেউ এটিকে নিছক একটি গল্প হিসেবে মনে করেন, আবার কেউ কেউ একে ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে বিবেচনা করেন। বিভিন্ন সূত্রে এই প্রেমের গল্পটি আলোচিত হয়েছে।

বিধান চন্দ্র রায় ও কল্যাণীকে নিয়ে নানা ধরনের লেখা ও আলোচনা আজও বিদ্যমান। কিছু সূত্র বলছে যে, এই সম্পর্কটি ছিল তার ব্যক্তিগত। অন্যদিকে তিনি জনশ্রুতি শহরের নামের সাথে জড়িয়ে আছেন। তবে কল্যাণী শহরটি আজও বিধান চন্দ্র রায়ের স্মৃতি বহন করে চলেছে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস দলের প্রতিনিধিত্বে ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি ১৪ থেকে মৃত্যুকাল অবধি ১৪ বছর তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।