যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের দাবি খারিজ করলেন জয়শঙ্কর

IMG-20250702-WA0026

‘অপারেশন সিন্দুর’ চলাকালীন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাতে ইতি টানতে সাহায্য করেছিল আমেরিকা। বাণিজ্য করার টোপ দিয়েই দুই দেশকে সংঘর্ষবিরতিতে রাজি করিয়েছিলেন তিনি। দফায় দফায় এমনই দাবি করে আসছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু এবার মার্কিন মুলুকে দাঁড়িয়েই ট্রাম্পের সেই দাবি খারিজ করে দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। তাঁর সাফ কথা, ভারত-পাক সংঘর্ষবিরতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনও ভূমিকা নেই। জয়শঙ্করের দাবি, ভারত-পাক সংঘর্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মধ্যে যখন কথা হচ্ছিল, সেই সময়ে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। তাই কীভাবে সংঘর্ষবিরতি হয়েছে সেটা পুরোপুরি তাঁর জানা আছে। কোয়াড সম্মেলনে যোগ দিতে আমেরিকায় গিয়েছেন জয়শঙ্কর। সেখানেই একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “মোদী এবং ভ্যান্স যখন টেলিফোনে কথা বলছেন তখন আমিও ঘরে ছিলাম। ভ্যান্স জানান, অপারেশন সিঁদুরের পরেই বড়সড় হামলা করবে পাকিস্তান। তবে সেটা আমরা মানতে চাইনি। পাকিস্তান কী করবে সেটা শুনতেই চাননি প্রধানমন্ত্রী। শুধু জানিয়েছিলেন, ভারতও পালটা দেবে।” নিউ ইয়র্কের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটা জানিয়েছেন জয়শঙ্কর। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, বাণিজ্যের টোপ দিয়ে আমেরিকা এবং পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানো হয় বলে যে দাবি করছেন ট্রাম্প, তা কতটা সত্য? উত্তরে জয়শঙ্কর বলেন, “আমি বলতে পারি যে, গত ৯ মে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সঙ্গে কথা বলেন, আমি ওই ঘরেই ছিলাম। উনি জানান, পাকিস্তান ভারতের উপর বড় আঘাত হানতে চলেছে। আমরা কিছু জিনিস মেনে নিতে পারিনি। পাকিস্তান কী করার হুমকি দিচ্ছে, তা প্রধানমন্ত্রীর কাছেও পরিষ্কার হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেন যে ,আমাদের তরফে তীব্র প্রতিক্রিয়া মিলবে।” তবে জয়শঙ্কর ভারতের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেও, ট্রাম্প এখনও যুদ্ধবিরতির কৃতিত্ব দাবি করে চলেছেন। কয়েকদিন আগেও তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ফোনে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসঙ্গ তুলে আমিই যুদ্ধে ইতি টেনেছি। আমি ওদের বলি, এভাবে যুদ্ধ করলে আমরা তোমাদের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য করব না আর। আর তাতেই ওরা যুদ্ধ থেকে সরে আসে। ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করে।” যদিও জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, কূটনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের মধ্যে কোনও সংযোগ নেই। দুই ক্ষেত্র স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হয়। তাঁর বক্তব্য, “ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাজ করে চলেছেন, সংখ্যা, পণ্য নিয়ে আলোচনা করছেন। আমার মনে হয়, তাঁরা অত্যন্ত পেশাদার, অবিচল।” ৯ মে পাকিস্তানের তরফে হামলার তীব্রতা বাড়ানো হয় বলেও মেনে নেন জয়শঙ্কর। কিন্তু দ্রুতই ভারতীয় সেনা তাদের কড়া জবাব দেয় বলে জানান। তিনি জানান, ১০ মে ভারতের বিদেশমন্ত্রী ও আমেরিকার বিদেশসচিবের মধ্যে কথা হয়। মার্কো রুবিও জানান, পাকিস্তান আলোচনার জন্য প্রস্তুত। ওই দিনই বিকেলে পাকিস্তান সেনার ডিজিএমও, মেজর জেনারেল কাশিফ আব্দুল্লাহ সরাসরি ভারতীয় সেনার ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইকে ফোন করেন। যুদ্ধবিরতির আবেদন জানান। জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার জবাবেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অপারেশন সিন্দুরের সূচনা করে ভারত। আর তাকে ঘিরেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত তীব্র হয়। জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলাকে ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধ’ বলে উল্লেখ করছেন জয়শঙ্কর। তাঁর দাবি, হামলার আসল উদ্দেশ্য উপত্যকার পর্যটন ব্যবসাকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। জয়শঙ্কর জানিয়েছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে বদ্ধপরিকর ভারত। পরমাণু হামলার হুমকি দিয়ে ভারতকে বিরত রাখা যাবে না। পহেলগাঁও হামলা প্রসঙ্গে জয়শঙ্কর বলেন, “অর্থনৈতিক যুদ্ধের কৌশল ছিল এই হামলা। কাশ্মীরের পর্যটন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়াই লক্ষ্য ওদের, যা কিনা কাশ্মীরিদের অর্থনীতির ভিত্তি। পাশাপাশি, ধর্মীয় হিংসাও উস্কে দেওোয়ার চেষ্টা হয়, যে কারণে হত্যা করার আগে ধর্ম জানতে চাওয়া হয়। জঙ্গিদের পার পেয়ে যেতে দেওয়া যাবে না বলে তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমরা। সীমান্তের ওপারে বলে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না, এই ধারণা ভেঙে দেওয়া জরুরি ছিল। আমরা তেমনই পদক্ষেপ করেছি।”

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement