কসবাকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যে কল্যাণ ও মহুয়ার সংঘাত

IMG-20250629-WA0075

কসবাকাণ্ড নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। এই আবহেই কসবার ‘গণধর্ষণ’ নিয়েই তৃণমূলের অন্দরে দেখা যাচ্ছে নানা মত। প্রকাশ্যে চলে এল দ্বন্দ্বও। কসবাকাণ্ড নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করতে দেখা যায় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রকে। যদিও দল তাঁদের বক্তব্যকে সমর্থন করেনি। তাঁদের মন্তব্যের পাশে যে দল নেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা জানিয়েও দেয় তৃণমূল। কিন্তু এসবের মধ্যেই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়লেন তৃণমূলের দুই সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও মহুয়া মিত্র। কসবা কাণ্ড নিয়ে প্রথমে মুখ খোলেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সহপাঠী যদি সহপাঠিনীকে ধর্ষণ করে, তা হলে নিরাপত্তা দেবে কে?” কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্রও বিতর্কিত মন্তব্য করেন। দলের বিধায়ক কিংবা সাংসদের কারও নাম না করেই নারীবিদ্বেষ নিয়ে আবার সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন মহুয়া মিত্র। আর তারপরেই মহুয়া মিত্রের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ এবং মদনকে নিয়ে তৃণমূলের পোস্টটি শেয়ার করে রাতে নিজের সমাজমাধ্যমে মহুয়া লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে নারীবিদ্বেষ দলের গণ্ডিতে আটকে নেই। কিন্তু তৃণমূলকে অন্যদের থেকে আলাদা করে একটাই বিষয়, আমরা এই ধরনের বিরক্তিকর মন্তব্যের প্রতিবাদ করি, তা সে যে-ই করুন না কেন।’’ এরপর রবিবার এ নিয়ে কল্যাণ মহুয়াকে পাল্টা নিশানা করেন। মহুয়াকে খোঁচা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেড় মাসের হানিমুন শেষ করে দেশে ফিরেই কি ওঁর আমার পিছনে লাগা শুরু হল? আমি সব নারীকে সম্মান করি, কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে ঘৃণা করি। যাঁকে পার্লামেন্টের এথিক্স কমিটি বহিষ্কার করে, তাঁকে ঘৃণাই করি।’’ উল্লেখ্য, সম্প্রতি বার্লিনের প্রাসাদে পুরীর প্রাক্তন সাংসদ পিনাকী মিশ্রের সঙ্গে বিয়ে সেরেছেন মহুয়া। সূত্রের খবর, তার জন্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমতি নিয়ে বেশ কিছু দিনের ছুটি নিয়েছিলেন তিনি। কল্যাণ সে দিকেই ইঙ্গিত করেছেন। শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ বলেন, “আমার প্রথম প্রশ্ন দেড়মাস মধুচন্দ্রিমা করে কি ফিরেছেন? আর এসেই কি পিছনে লাগা আরম্ভ করে করেছেন? আমি নারীবিদ্বেষী নই। আমি নারীদের জন্য সবচেয়ে বেশি কথা বলি। আর মহুয়া মৈত্র এতটাই নারীবিদ্বেষী যে কৃষ্ণনগরের কোনও মহিলা কর্মী, ভালো নেত্রীকে উঠতে দেয় না। আপনি আমাকে নারীবিদ্বেষী বলছেন? ৪০ বছরের বিয়ে ভাঙিয়ে বউকে রেখে দিয়ে আরেকটা বিয়ে করলেন। তা কোন নারীর বুকে নিজের স্বার্থের জন্য আঘাত করলেন? জানি আপনাকে কিছু মহিলা সমর্থন করবেন। সেই মহিলাদের ক্ষেত্রে যদি একই ঘটনা ঘটে? ৩০ বছর বিয়ে করার পর স্বামীরা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়? ভাবতে পারেন ৪০ বছর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, সে মহিলা কোথায় যাবেন? তাঁর ছেলেপুলে আছে। উনি লোভী মহিলা। আমি নারীদের সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। আমি একটি নারীকে ঘৃণা করি। তিনি মহুয়া মৈত্র। আমি ঘৃণা করি তাঁকে।” মহুয়াকে বিঁধে কল্যাণ আরও বলেন, “কবে রাজনীতিতে এসেছেন? নিজেকে রাহুল গান্ধির বান্ধবী বলে কৃষ্ণনগরে রাজনীতি করতেন। তারপর ২০১১ সালে চলে এল। একজন অভিজ্ঞ সাংসদ সেই সময় আমাদের বলেছিলেন, তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রে দিদি মহুয়ার নাম বলেছিলেন। ওই অভিজ্ঞ সাংসদ বলেছিলেন ওঁকে চলবে না। সেই সময় অন্য এক মহিলার নাম করেছিলেন। তাঁকে মেনে নেওয়া হয়েছিল। তিনি এখন মন্ত্রী। তৃণমূলের ভালো সময় সাংসদ হয়েছে। সাংসদ পদকে ভাঙিয়ে খাচ্ছে। এর কাছে নারীবিদ্বেষ শিখব না।” কল্যাণ জানিয়েছেন, উপনির্বাচনের প্রচারের জন্য তাঁকে কালীগঞ্জে যেতে বলেছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সেখানেই বাধা দেন মহুয়া। শ্রীরামপুরের সাংসদের কথায়, ‘‘কালীগঞ্জের উপনির্বাচনে দিদি আমাকে প্রচারে যেতে বলেছিলেন। উনি আইপ্যাককে বলে আমার যাওয়া আটকে দেন। এত কিসের ভয়?’’
উল্লেখ্য, কল্যাণ এবং মহুয়ার সম্পর্কের সমীকরণ বঙ্গ রাজনীতিতে অজানা নয়। কিন্তু ২৬-এর নির্বাচনের আগে কল্যাণের মহুয়াকে সরাসরি এই আক্রমণ অস্বস্তিতে ফেলেছে রাজ্যের শাসকদলকে। লোকসভায় এর আগে প্রকাশ্যে তাঁরা বিতন্ডায় জড়িয়েছেন। গত এপ্রিলে দলের এক প্রবীণ সাংসদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তৃণমূলের হোয়াট্‌সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন এক মহিলা সাংসদ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও লিখেছিলেন। সংসদ চত্বরে মহিলা সাংসদকে কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছিল প্রবীণ সাংসদের বিরুদ্ধে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement