দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সফল উৎক্ষেপণ হল ড্রাগনের। আর সেইসঙ্গে সূচনা হল মহাকাশ গবেষণার এক নতুন অধ্যায়ের। রাকেশ শর্মার পর দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে শুভাংশু শুক্লা মহাকাশে পৌঁছলেন। বুধবার বেলা ১২টা ১ মিনিটে আমেরিকার ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটের সফল উৎক্ষেপণ হয়। মহাকাশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন শুভাংশু ও তাঁর সহযাত্রীরা। আর সেই মুহূর্তের সাক্ষী ছিল ভারত তথা গোটা বিশ্ব। শুভাংশুদের অভিযানের নাম ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’। যাত্রার আধঘণ্টা আগে আবহাওয়া সংক্রান্ত ডেটা আপলোডিংয়ের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই যান্ত্রিক সমস্যা মিটে যায়। এর পরেই শুরু হয় কাউন্ট ডাউন। আন্তর্জাতিক স্পেস সেন্টারের দিকে পাড়ি দেয় ড্রাগন। প্রথমে নাসা ও ইসরোর যৌথ উদ্যোগে এই অভিযান হওয়ার কথা ছিল গত ২৯ মে। কিন্তু আবহাওয়া, প্রযুক্তিগত ত্রুটি-সহ নানা কারণে বার বারই অভিযান পিছিয়ে যায়। শেষমেশ মঙ্গলবার নাসা জানায়, বুধবার ওই অভিযান হতে চলেছে। সেইমতো শুরু হয়ে যায় প্রস্তুতি। শুরু হয় প্রহর গোনার পালা। বুধবার ঠিক ১২টা ১ মিনিটে ফ্যালকন ৯-এর উৎক্ষেপণ হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দেয় ‘ড্রাগন’।নাসার এই অভিযানের জন্য ইসরোর তরফ থেকে প্রাথমিক ভাবে বেছে নেওয়া হয়েছিল দুই গগনযাত্রী শুভাংশু শুক্ল এবং প্রশান্ত বালকৃষ্ণন নায়ারকে। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের ছেলে শুভাংশু ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন। মূল মহাকাশচারী হিসাবে বেছে নেওয়া হয় ৩৯ বছরের শুভাংশুকেই। তাঁর বিকল্প হিসাবে রাখা হয় প্রশান্তকেও।

শুভাংশু ‘ড্রাগন’-এর পাইলট হলেও অভিযানের কমান্ডার হিসাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন নাসার প্রাক্তন নভশ্চর তথা অ্যাক্সিয়ম স্পেসের মানব মহাকাশযানের ডিরেক্টর রেগি হুইটসন। এ ছাড়াও রয়েছেন পোল্যান্ডের স্লায়োস উজ়নানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। আগামী ১৪ দিন তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকবেন। সেখানে অন্তত ৬০টি পরীক্ষানিরীক্ষা চালাবেন তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার শুভাংশুরা প্রবেশ করবেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে। সেখানে গবেষণামূলক কাজে হাত দেবেন শুভাংশু ও বাকিরা। সবমিলিয়ে ১৪ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসবেন সকলে। এই অভিযান ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজস্ব মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনা করছে, যার আওতায় মানুষ পাঠানো হবে পৃথিবীর বাইরে। সফল উৎক্ষেপণের পরেই ড্রাগন মহাকাশযানের ভেতরে বসেই দেশবাসীর উদ্দেশে বিশেষ বার্তা দেন শুভাংশু। তিনি বলেন, ‘নমস্কার, আমার প্রিয় দেশবাসী! কী অসাধারণ এক যাত্রা। ৪১ বছর পর আমরা আবারও মহাকাশে এলাম। আমরা প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ কিলোমিটার বেগে পৃথিবীর কক্ষপথ ছেড়ে বের হচ্ছি। আমার কাঁধে তিরঙ্গা পতাকা রয়েছে। সেটাই আমাকে বলে দিচ্ছে আমি আপনাদের সকলের সঙ্গে আছি। আমার এই যাত্রা শুধু আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাত্রা নয়, বরং ভারতের মহাকাশ গবেষণার নতুন অধ্যায়। আমি চাই আপনারা সকলেই এই যাত্রার অংশীদার হোন। আপনাদেরও বুকও গর্বে ফুলে উঠুক। আসুন ভারতের মানব মহাকাশ কর্মসূচি শুরু করি। জয় হিন্দ! জয় ভারত!’ ১৯৮৪ সালে ইসরো এবং রাশিয়ার মহাকাশ গবেষণার অংশ হিসেবে মহাকাশ যাত্রা করেছিলেন রাকেশ শর্মা। তিনিই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি সফল মহাকাশযাত্রা করেন। দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে ৪১ বছর পর শুভাংশু শুক্লা মহাকাশ যাত্রা করলেন।

শুভাংশুকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, ‘‘শুভাংশু শুক্লই প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রাখবেন। তিনি নিজের কাঁধে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের ইচ্ছা, আশা, আকাঙ্ক্ষার ভার বহন করছেন।’’ এর আগে ১৯৮৪ সালে রাশিয়ার মহাকাশযানে চেপে মহাকাশে পাড়ি দিয়েছিলেন রাকেশ শর্মা। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে দীর্ঘ চার দশক। এত বছরে আর কোনও ভারতীয় মহাকাশে যাননি। ৪১ বছর পর সেই খরা কাটল। শুভাংশুদের অভিযানের নাম ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’।