ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে মধ্যপ্রাচ্য। ইরান ও ইজরায়েলের যুদ্ধে ঢুকে পড়েছে আমেরিকাও। এই আবহেই রবিবার ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেকথা নিজেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জানান তিনি। সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করে মোদী জানান, ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। ফোন কথোপকথনে পশ্চিম এশিয়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেছেন মোদী। একই সঙ্গে ইরানের প্রেসিডেন্টকে উত্তেজনা প্রশমনেরও আর্জি জানিয়েছেন। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনার পরে এক্স হ্যান্ডলে মোদী লেখেন, ‘আমরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সাম্প্রতিক উত্তেজনা বৃদ্ধিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। অবিলম্বে উত্তেজনা হ্রাস এবং কূটনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছি। শান্তি, নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা দ্রুত পুনরুদ্ধারের জন্য আহ্বান করা হয়েছে।’ ইজরায়েল ও ইরানের সংঘাতের আবহে ইরানের অন্তত তিনটি পরমাণুকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে আমেরিকা। তার পরেই ইরান-ইজ়রায়েল সংঘাত অন্য মাত্রা নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইরানের প্রশাসনিক প্রধানকে ফোন করে শান্তিপ্রতিষ্ঠার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।উল্লেখ্য, ইরান-ইজ়রায়েল সংঘর্ষের মাঝে ভারতীয়দের ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। শুধুমাত্র ভারতের আহ্বানেই আকাশসীমা খুলে দেয় ইরান। ‘অপারেশন সিন্ধু’র মাধমে ইতিমধ্যেই পড়ুয়া-সহ ইরানে থাকা ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। পশ্চিম এশিয়ার পরিস্থিতির অবনতির মাঝেই ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদীর এই আলোচনা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই ধারণা কূটনৈতিক মহলে।
উল্লেখ্য, ইরান ও ইজরায়েলের মধ্যে চলা এই যুদ্ধে শুরু থেকেই নিরপেক্ষ ভূমিকা নিয়েছে ভারত। একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মেতে ওঠা দুই দেশই ভারতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ফলে শুরু থেকেই এই যুদ্ধ থামাতে দুই দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে নয়াদিল্লি। আবেদন জানানো হয়েছে, আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার। তবে যময় যত গড়াচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপ দিকে যাচ্ছে। রবিবার ভোররাতে ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে মার্কিন বোমারু বিমান বি-২। মাটির নিচে অবস্থিত এই স্থাপনাগুলি ধ্বংসে ব্যবহৃত হয়েছে আমেরিকার বিধ্বংসী বাঙ্কার ব্লাস্টার বোমা। আমেরিকাকে এর পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে ইরান। এমনকি বিশ্বব্যাপী তেল রফতানির অন্যতম হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা। এই প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে তা ভারতের জন্য যথেষ্ট উদ্বেগের। ভারত সরাসরি ইরান থেকে খুব বেশি তেল আমদানি না করলেও, ভারতকে নিজের চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি তেল বাইরে থেকে কিনতে হয়। এই আমদানির প্রায় ৫০ শতাংশ হরমুজ প্রণালী দিয়ে আসে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের প্রায় ২০ শতাংশ বাণিজ্য এই পথ দিয়ে হয়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এই যুদ্ধের জেরে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করলে ভারতের বাণিজ্য বিরাট বাধার সম্মুখীন হবে। ইরাক, সৌদি আরব, আরব আমিরশাহী থেকে আসা তেলের সাপ্লাই বাধাপ্রাপ্ত হবে। যার প্রভাব সরাসরি পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। এর পরিস্থিতিতে মারণ এই যুদ্ধ বন্ধ করতে ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই ফোনালাপ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।