নয়াদিল্লি: ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন, সেই মূহূর্ত থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার পরিকাঠামোর উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া শুরু করে। তখন থেকে পরিকাঠামোর উন্নয়নে মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক। মোদীজির নেতৃত্বে এই মন্ত্রক গত ১১ বছর ধরে শুধু দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকেই ত্বরান্বিত করেনি, উন্নয়ন যাত্রায় নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। দেশের উন্নয়নে দ্রত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে মহাসড়ক নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অর্থনীতি শক্তিশালী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহণের ব্যয়ভার কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে মহাসড়ক, জলপথ এবং রেলপথের অবদান অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রী ভারতকে ‘বিশ্বগুরু’ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। বিশ্ব অর্থনীতিতে তৃতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং ৫ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থনীতি গড়ে তুলতে ভারত দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই স্বপ্ন রূপায়ণের ক্ষেত্রে রপ্তানি বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার ফলে কৃষি, পরিষেবা এবং শিল্প ক্ষেত্রে উন্নতি হবে। গত ১১ বছর ধরে বিভিন্ন সড়ক নির্মাণের ফলে পণ্য পরিবহণ ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ ১৬শতাংশ থেকে কমে ১০শতাংশ নেমে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য একে ৯শতাংশ নিয়ে যাওয়া। এর ফলে, আমাদের রপ্তানি বাড়বে। আমরা বিশ্ব বাজারের প্রতিযোগিতায় আরও অংশ নিতে পারবো। ফলস্বরূপ, ভারত ‘বিশ্বগুরু’ হিসেবে পরিচিত হবে। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক দেশজুড়ে ২৫টি নতুন গ্রিণফিল্ড এক্সপ্রেস হাইওয়ে নির্মাণ করছে। এর মধ্যে বিভিন্ন বন্দরের মধ্যে যোগাযোগ ও ধর্মীয় পর্যটনকে উৎসাহিত করতে ৩,০০০ কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ধর্মীয় পর্যটনকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের উদ্যোগ ফলপ্রসূ হচ্ছে। ২২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বৌদ্ধ সার্কিট প্রকল্প নির্মিত হয়েছে। এর ফলে, দক্ষিণ এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর এবং জাপান থেকে ভগবান বুদ্ধের জন্মস্থান দেখার জন্য পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একইভাবে চারধামে তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তিনগুণ হয়েছে। বদ্রীনাথ, কেদারনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী-তে পর্যটকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। কেদারনাথের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ১২,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি রোপওয়ে সংযোগ গড়ে তোলা হবে। উত্তরাখণ্ডে কৈলাশ মানস সরোবরে যাওয়ার জন্য পিথোরাগড় পর্যন্ত ৯০শতাংশ সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ভারতে, বিশেষ করে জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে ‘উড়ুক্কু বাস’ পরিষেবা আজ আর গল্প কথা নয়। এর মধ্যে এরিয়াল বাস, ফ্ল্যাশ-চার্জিং ইলেক্ট্রিক বাস এবং পার্বত্য অঞ্চলের জন্য ডাবলডেকার ফ্লাইং বাস অন্যতম। দিল্লির ধোলা কুঁয়া থেকে মানসর-এর মধ্যে এরিয়াল বাস পরিষেবা, স্কাইওয়ে ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলার চূড়ান্ত পর্যায়ের কাজ চলছে। ফলস্বরূপ, এই বিশেষ যাত্রা পথে যানজটের মতো সমস্যা যে থাকবে না, সেই বিষয়ে আমি আশাবাদী। নাগপুর শহরে খুব শীঘ্রই দেশের মধ্যে প্রথম ফ্ল্যাশ-চার্জিং বৈদ্যুতিক বাস পরিষেবার সূচনা হতে চলেছে। এই বাসগুলিতে ১৩৫টি আসন থাকবে। এছাড়াও প্রতিটি বাসে এগজিকিউটিভ ক্লাস, ফ্রন্ট টিভি স্ক্রিন থাকবে। এছাড়াও প্লেনের এয়ারহোস্টেসদের মতো বাসেও হোস্টেস থাকবেন। এই বাসগুলি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারবে। বাসগুলি প্রতি ৪০ কিলোমিটার অন্তর থামবে, যেখানে মাত্র ৩০ সেকেন্ডে পুরো ব্যাটারি চার্জ হবে। এই ধরণের কাজ অফিসে বসে প্রকল্পের বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করেই হয় না, এর জন্য প্রয়োজন সর্বান্তকরণের এক প্রয়াস! আইআইএম-ব্যাঙ্গালোর সড়ক নির্মাণ সংক্রান্ত এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, জাতীয় সড়ক নির্মাণে প্রতি ১ টাকা ব্যয় করা হলে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ৩ টাকা ২১ পয়সায় পৌঁছায়। একইভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ৯শতাংশ বাড়ে এবং গাড়ির বিক্রি ১০.৪শতাংশ বৃদ্ধি পায়। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রকের এই কাজগুলি অর্থনৈতিক তৎপরতাকে যেমন বৃদ্ধি করেছে, পাশাপাশি প্রচুর কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে। এখানে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: ২০১৪ সালে, ভারতে মাত্র ৯১,০০০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক ছিল। ২০২৪ সালের মধ্যে এই পরিমাণ ৬০শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১.৪৬ লক্ষ-কিলোমিটারে পৌঁছেছে। সড়ক নির্মাণের দৈনিক হার ১২ কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮-৩০ কিলোমিটারে পৌঁছেছে। ভারতমালা প্রকল্পের মতো ৫.৩৫ লক্ষ কোটি টাকার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পে ৬৫ হাজার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। এর আওতায় অর্থনৈতিক করিডোর, আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক নির্মাণ করা হবে। এই নির্ণায়ক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ভারতে পণ্য পরিবহণের ব্যয় হ্রাস পাবে। গতিশক্তি এবং মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটি প্রকল্পের আওতায় সড়ক, রেলপথ, বিমান, জলপথ এবং বন্দরগুলির উন্নয়নের জন্য একটি অভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা হয়েছে। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলির কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে আমাদের মন্ত্রক সড়ক নির্মাণের কাজ বাস্তবায়িত করছে। এই উদ্যোগে ১২ লক্ষ কোটি টাকার সড়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৪ সালে এই যাত্রাকে শুধুমাত্র সড়ক নির্মাণের উন্নয়ন বলা যাবে না, একে ভারতের প্রগতির জীবনরেখার উন্নয়ন বলা ভালো হবে। মহাসড়ক ব্যবস্থাপনার এই সম্প্রসারণের ফলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেমন সহজে যাওয়া আসা করা যায়, পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প, পর্যটন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটে। সমাজের প্রান্তিক স্তরে থাকা মানুষটির কাছে যাতে এই উন্নয়নের সুফল পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার প্রথম দিন থেকে কাজ করে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই কাজের গতিকে আরও বৃদ্ধিতে আমরা বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিকমানের পরিকাঠামো গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য, যাতে ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের জাতীয় সড়কগুলির মান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সড়কের থেকেও উন্নত হয়। এর ফলে, ভারত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে মহাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। দিল্লিতে পরিবহণ ভবনে আমার দপ্তরে প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন এফ. কেনেডি-র বিখ্যাত একটি উক্তি লেখা রয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ধনী বলে তার ভালো রাস্তা রয়েছে, এমনটা নয়; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভালো রাস্তা থাকার কারণে আজ এই দেশ ধনী রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হয়েছে।” গত ১১ বছর ধরে মোদীজির নেতৃত্বে আমরা এই পথই অনুসরণ করে আসছি। ভবিষ্যতে এই কাজকে আমরা আরও দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়িত করবো। আগামী দিনে ভারতের সড়ক পরিকাঠামো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাইতেও উন্নত হবে – এটি আজ আর স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তব। গুণমান, গতি, স্বচ্ছতা এবং পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসরণ করার মধ্য দিয়ে ভারতের জাতীয় মহাসড়ক ব্যবস্থাপনা বর্তমানে আন্তর্জাতিকমানের হয়ে উঠেছে। (লেখক কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রী)