এখনই কোনও ভাতা দেওয়া যাবে না গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি চাকরিহারাদের। ভাতা সংক্রান্ত শুনানিতে সোমবার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে এমনটাই জানিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃত সিনহা। কেন এত তাড়াহুড়ো করছে রাজ্য সরকার, আদালতের রায়ের পর কোনও রকম আলোচনা বা স্ক্রুটিনি ছাড়াই কেন তড়িঘড়ি এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, এদিন রাজ্যের কাছে তা জানতে চান তিনি। এই প্রশ্ন তুলে মৌখিক ভাবে এটি বন্ধ রাখার কথাও বলেন বিচারপতি। এরপর দুপুর ২টো পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি থাকে। এরপর দিনের শেষেও এই ভাতা মামলায় রায়দান স্থগিত রাখে কলকাতা হাইকোর্ট।
গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের এই ভাতা সংক্রান্ত মামলায় সোমবার দুপুর ২টোর পর বক্তব্য পেশ করেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত। এদিকে মামলাকারী আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য এদিন সওয়াল করতে গিয়ে জানান, দুর্নীতিতে সমর্থন করার জন্যই এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে এও জানান, রাজ্য নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে এই ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর পাশাপাশা বর্ষীয়ান আইনজীবী এও বলেন, ‘গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য কোনও ছাড় সুপ্রিম কোর্ট দেয়নি। শুধুমাত্র শিক্ষকদের জন্য কিছু ছাড় সুপ্রিম কোর্ট দিয়েছে এবং সেটাও সীমিত সময়ের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট বা হাইকোর্টের নির্দেশকে ইচ্ছাকৃতভাবে অমান্য করার জন্য আইন তৈরির কোনও অধিকার কি রাজ্যের আছে?’
বিরতির পর দ্বিতীয়ার্ধের শুনানিতে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়ালে বলেন, এই মামলা গ্রহণযোগ্যই নয়। কারণ মামলা যারা করেছেন তাঁরা সবাই ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থী। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে তারা কোনও ভাবে প্রভাবিত হচ্ছেন না। এরপর কিশোর দত্তের একের পর এক প্রশ্ন করেন বিচারপতি। জানতে চান, জনগণের করের টাকায় যে চাকরিচ্যুতদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে তার বিনিময়ে সরকার কী পাচ্ছে? গ্রুপ সি কর্মীদের জন্য ২৫ হাজার টাকা ও গ্রুপ ডি কর্মীদের জন্য ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাতা যে ঘোষণা করা হয়েছে তা নির্ধারণ করা হয়েছে কী ভাবে? এই ভাবে আদালতের নির্দেশে চাকরিচ্যুতদের ভাতা দেওয়ার কোনও উদাহরণ কি গোটা দেশে রয়েছে? কোনও প্রশ্নেরই সুনির্দিষ্ট জবাব দিতে পারেননি রাজ্যের আইনজীবী। এর পর মামলার শুনানি শেষ বলে ঘোষণা করে রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা।
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হওয়ার পর শুরু হয় বিক্ষোভ। ২০১৬ সালের এসএসসি প্যানেলে থাকা প্রায় ২৬ হাজার জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশের পর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে আন্দোলনে নামেন গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি কর্মীরাও। এরপরই গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মীদের ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, আপাতত গ্রুপ সি কর্মীদের রাজ্য সরকার প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা এবং গ্রুপ ডি কর্মীদের মাসে ২০ হাজার টাকা করে দেবে। আদালতে চাকরি বাতিলের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এই ভাতা দেবে রাজ্য। পরে সরকারের তরফে এই বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। ইতিমধ্যেই প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি কর্মীরা।