পরের বছরেই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে এসে বিধানসভা ভোটের দামামা বাজিয়ে দিয়ে তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ। এবার সেই সুর শোনা গেল রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর গলায়। রবিবার ন্যাজাটে সভা করেন তিনি। সেই সভা থেকেই তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর হুঙ্কার, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিই সরকার গড়বে। হিন্দুদের জোটবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শুভেন্দু বলেন, “সন্দেশখালি ৭০০ ভোটে লিড দিয়েছে বিজেপি-কে। নিশ্চিন্ত থাকুন, শাহজাহানের দাদাগিরিকে অতীত করেছি, অতীতই থাকবে। কাদের মোল্লা, যে গর্তেই তুমি থাকো না কেন, টেনে বের করে এনে আইনের সাজা দেব। সবাই লড়াইয়ের জন্য তৈরি তো! হ্যালো ডব্লিউ বি, বাই বাই টিএমসি। ওদের হটাতে হবে। জোট বাঁধুন, তৈরি হোন। ভাগ হবেন না। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র, তফসিলি জাতি-উপজাতি ভাগ হবেন না।” তাঁর দাবি, “৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বহু কিছু দেখেছি, কিন্তু ধর্ম বেছে হত্যালীলা—এতটা নিষ্ঠুরতা আগে দেখিনি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের টার্গেট করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ঘটনা ঘটেছে বারবার।” শুভেন্দু বলেন, “সন্দেশখালিতে মিথ্যা মামলায় হেনস্থা করা হয়েছে সনাতনী হিন্দুদের। এদিনের সভা থেকে সামশেরগঞ্জে হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাস হত্যা প্রসঙ্গ টেনে এনে শুভেন্দু বলেন, শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার অপরাধে তাদের খুন করা হয়েছে। যারা বলছেন এ রাজ্যে শান্তি রয়েছে, তারা আসলে রাজ্যবাসীকে মিথ্যা বলছেন।” সভা থেকে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে শুভেন্দু বলেন, “আপনার পুলিশ শুধু শাসকদলের হয়ে কাজ করে। সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ায় না। আর সনাতনীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু মানুষ এসব বুঝে গেছে। এবার বাংলার মানুষও প্রতিশোধ নেবে, যেমন সেনা সিঁদুর মোছার বদলা নিয়েছে পহেলগাঁও-এ।” বিরোধী দলনেতা আরও বলেন, “ন্যাজাটে ভোট-পরবর্তী হিংসার বলি হন তিন বিজেপি কর্মী। আমরা আজ তাঁদের স্মরণ করছি। এ লড়াই শুধুমাত্র রাজনীতির নয়, এটা অস্তিত্বের। বাংলায় হিন্দুদের নিরাপত্তা এখন প্রশ্নের মুখে।” হিন্দু ভোট এক করতে শুভেন্দু আরও বলেন, “রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবা সঙ্ঘ, ইসকন, আর্য সমাজ, লোকনাথ ব্রহ্মচারী, রামগোপাল ঠাকুর, বালক ব্রহ্মচারী মহারাজ, ভাগ হবেন না। সব মঠ আঁকড়ে থাকুন। কিন্তু ফাইনালে হাতে রাখুন গীতা। ধর্ম রক্ষতি রক্ষিতঃ। জাগো হিন্দু। আমরা কথা দিতে পারি। উত্তরপ্রদেশ-অসম দেখেছেন, আমাদের আনুন, আরও ভাল কিছু দেখবেন।” শুভেন্দুর এই মন্তব্যে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে চারিদিক। এদিন শুভেন্দু বলেন, “মায়েরা ৫০০-১০০০ টাকার কাছে শাঁখা-পলা-সিঁদুর বিসর্জন দেবেন না। যেদিন বিজেপি এই রাজ্য়ে আসবে, তার পরের ১ তারিখেই ৩০০০ টাকা ঢোকাব। কথা দিয়ে গেলাম। ১ লাখ ২০-তে ঘর হয়! আমাদের আনুন ৩ লাখের ঘর হবে। স্মার্ট মিটার লাগাতে দেবেন না। সরকার টটাকা তুলতে চাইছে মধ্য়বিত্তের থেকে। জোট বাঁধুন, তৈরি হোন, আমাদের জিততে হবে। শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিরোধ করতে হবে আমাদের। হিন্দু যোদ্ধা, রাষ্ট্রবাদীরা প্রস্তুত হোন। বাটেঙ্গে তো কাটেঙ্গে, এক রহেঙ্গে তো সেফ রহেঙ্গে। হাতজোড় করে বলছি, হিন্দুরা ভাগ হবেন না। ৫১-এ আমরা হিন্দুরা ৮৫ শতাংশ ছিলাম, আজ ৬৭ শতাংশ। বাংলাদেশে আমরা ২৩ শতাংশ ছিলাম ‘৭১ সালে, আজ ৭ শতাংশ। ৫০ শতাংশের নীচে নেমে গেলে সংবিধান চলবে না, নিরাপদ সর্দারের সেক্যুলারিজম চলবে না। সেদিন চলবে শরিয়ৎ আইন।” তৃণমূল সরকারকে উৎখাতের ডাক দিয়ে শুভেন্দু বলেন, “আপনাদের কাছে সুযোগ আছে। এই বাংলায় সবাই যোগ্য, একজনই অযোগ্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘২৬-এ পাল্টে দিন। পাল্টাবেন তো! সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ আমাদের দেবেন তো! কুলতলি, গোসাবা, ক্যানিং আছে, সুন্দরবন জাগো। সব রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা মুসলমান ঢুকছে, দখল করছে। আপনি সোনারহাট, বসিরহাট পালাচ্ছেন। ঐক্যবদ্ধ হোন।” পহেলগাঁওয়ের জঙ্গি হামলা এবং অপারেশন সিন্দুরের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু বলেন, “মাথার সিঁদুর দেখে মেরে দিল। কলমা পড়তে জানে না বলে মেরে দিল। হাতের তাগা দেখে মেরে দিয়েছে। বিতান অধিকারীর স্ত্রী জানিয়েছেন, বস্ত্র সরিয়ে তার পর মেরেছে। বদলা নেবেন না? ভারতীয় সেনা অপারেশন করে এসেছে। ১০০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে মোদীজি সেনাকে দিয়ে মেরেছেন। ঘুসকে মারা হ্যায়। মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’।