ছাব্বিশে বাংলায় বিজেপির সরকার, আত্মবিশ্বাসী শাহ

IMG-20250601-WA0324

পরের বছরেই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই বাংলায় এসে তৃণমূলকে উৎখাত করার ডাক দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সঙ্গে কর্মীদের এখনই ময়দানে নামার নির্দেশও দিলেন বিজেপির শীর্ষনেতা। রবিবার নেতাজি ইন্ডোরে কর্মী সভা করেন অমিত শাহ। সেখানে তৃণমূলকে উৎখাতের ডাক দিয়ে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে তিনি বললেন, “আপনার সময় শেষ।” অমিত শাহর হুঙ্কার, ২০২৬ সালে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতা দখল করবে। শাহ জানান, বহু বছর বাংলা কমিউনিস্টদের হাতে ছিল। তার পর মা-মাটি-মানুষের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতা দখল করেন মমতা। কিন্তু মহান বাংলা মমতার হাতে অনুপ্রবেশ, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, অপরাধ, বোমা বিস্ফোরণ ও হিন্দুদের উপর অত্যাচারের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন বলে দাবি করেন শাহ। গোটা দেশে নির্বাচনী হিংসা বন্ধ হলেও, বাংলায় আজও নির্বাচনী হিংসা চলে, বিজেপ কর্মীদের ধরে ধরে খুন করা হয় বলে অভিযোগ করেন। অমিত শাহ বলেন, “২০১৭ সালের ভোটের পর আমরা প্রস্তুতি নিই। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আমরা সাফল্য পাই। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে ৭৭টি আসন জিতি। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ৯৭টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপি এগিয়ে ছিল।” দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আর একটুই বাকি আছে! আপনারা ৪০ শতাংশ পেরিয়ে গিয়েছেন। আর চার-পাঁচ শতাংশ এগোতে হবে। আগামী নির্বাচনে আমাদের সরকার গঠন হবে। ২০১৭ সালে আমি বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন বলেছিলাম, এখানে বিজেপির সরকার গঠিত হবে। আজ সেই দিন এগিয়ে এসেছে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত দিন-রাত এক করে বাংলার প্রত্যেক ভোটারের কাছে যান। বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদীর বার্তা নিয়ে যান তাঁদের কাছে। পুরো দেশ চাইছে এখানে দেশভক্তদের সরকার তৈরি হোক, তোষণের সরকার নয়। মমতাদিদি সোনার বাংলার স্বপ্ন তছনছ করে দিয়েছেন। দুর্নীতি, অনুপ্রবেশ, মহিলাদের উপর অত্যাচার, হিন্দুদের উপর অন্যায়ের উপর তাঁর রাজনীতি চলে। মমতাদিদির আমলে এসএসসি দুর্নীতি, গরুপাচার কাণ্ড, লটারি কাণ্ড, কয়লা দুর্নীতি, একশো দিনের কাজে দুর্নীতি, আবাস দুর্নীতি, রেশন দুর্নীতি, মিড ডে মিলে দুর্নীতি, পুর নিয়োগ দুর্নীতি, জিটিএ দুর্নীতি হয়েছে। বাংলার জনতার হাজার কোটি টাকা তৃণমূলের সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।” ভোট-পরবর্তী হিংসার অভিযোগ নিয়েও তোপ দাগেন শাহ। তিনি বলেন, “এই বাংলায় ভোটের সময় এবং দিদি জয় পাওয়ার পরে শয়ে শয়ে বিজেপি কর্মীকে হত্যা করা হয়। দিদি, কত দিন বাঁচাবেন এদের? আমি বলছি আপনার সময় এ বার শেষ হয়ে এসেছে। ২০২৬ সালে বিজেপি সরকার গঠন করবে। আমি মণ্ডল পদাধিকারীদের আশ্বাস দিচ্ছি, তৃণমূল সরকার বিদায় নিলেই আমাদের কর্মীদের হত্যায় অপরাধীদের মাটির তলা থেকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেব’। অমিত শাহর হুঁশিয়ারি, ‘গণতন্ত্রে হিংসা কখনও শোভনীয় নয়। দিদি, সাহস থাকলে, হিংসা ছাড়া নির্বাচন করিয়ে দেখুন। আপনার জামানত জব্দ করে দেবে বাংলার জনতা।” মহিলাদের উপর অত্যাচার, অপরাধ, বোমা বিস্ফোরণ এবং হিন্দুদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কেন্দ্রে পরিণত করেছেন।” অপারেশন সিন্দুর নিয়েও মমতাকে আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শাহ বলেন, “আমি বাংলার মাতৃশক্তির কাছে অনুরোধ করছি, আগামী নির্বাচনে অপারেশন সিন্দুরের উপর প্রশ্ন তোলা মমতাজিকে সিন্দুরের দাম বুঝিয়ে দিন। মা-বোনেরা বুঝিয়ে দিন, সিঁদুরের অপমান করার অর্থ কী!” মমতাকে বিঁধে শাহ বলেন, “আপনি যত ইচ্ছে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীদের পক্ষ নিন, এটা নরেন্দ্র মোদীর সরকার, বিজেপির সরকার। আমি বলে যাচ্ছি, অপারেশন সিন্দুর শেষ হয়নি।” অপারেশন সিন্দুর প্রসঙ্গে শাহ বলেন, “কিছু দিন আগে পহেলগাঁওয়ে পাকিস্তানের পাঠানো সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের নির্দোষ নাগরিকদের ধর্ম জিজ্ঞেস করে করে পরিবারের সামনে হত্যা করেছে। আপনারা বলুন, পাকিস্তানের পাঠানো ওই সন্ত্রাসবাদীদের শাস্তি দেওয়া উচিত কি না? মোদীজি অপারেশন সিন্দুর করে ঠিক করেছেন কি করেননি? আমরা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছি, এয়ার স্ট্রাইক করেছি। এখন অপারেশন সিন্দুর করে ১০০ কিলোমিটার ভিতরে গিয়ে জঙ্গিদের হেডকোয়ার্টার ধ্বংস করে দিয়েছি। কয়েকশো সন্ত্রাসবাদীকে মেরে ফেলা হয়েছে।” এর পরেই শাহ বলেন, “এতে দিদির পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। বাংলার লোকেরা যখন সেখানে মারা গেলেন, তখন দিদি এই যন্ত্রণার কথা বললে ঠিক ছিল। তখন কিছু বলেননি। এখন মোদীজি যখন অপারেশন সিঁদুরের পরে এখানে এলেন, তখন একটি বাজে রাজনৈতিক মন্তব্য করে অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করা হল। আপনি অপারেশন সিঁদুরের বিরোধিতা করেননি। আপনি দেশের কোটি কোটি মা-বোনের ভাবাবেগ নিয়ে খেলা করেছেন।”শাহ বলেন, “মোদীজির নেতৃত্বে বাংলার বিকাশের জন্য অনেক কাজ হয়েছে। বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে বাংলার সংস্কৃতিকেও মোদীজি ভোলেননি। বহু বছর ধরে বাংলার মানুষের দাবি ছিল যাতে বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মমতাদিদির কাছে আমার প্রশ্ন, আপনি ১০ বছর ধরে হয় কেন্দ্রে মন্ত্রী থেকেছেন, বা আপনার সমর্থন ছিল। বাংলা ভাষাকে তখন কেন ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি? মোদীজি বাংলাকে ধ্রুপদী ভাষার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এর জন্য ধন্যবাদ জানানোর শিষ্টাচারটুকুও নেই মমতাজির।”

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement