পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার বদলা নিতে পাকিস্তানে ‘অপারেশন সিন্দুর’ অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা।সেই অভিযানের কেটে গিয়েছে অনেকদিন। কিন্তু অভিযানের নাম নিয়ে চাপানউতোর বন্ধ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার রাজ্যে এসে আলিপুরদু্যারের সভা থেকে ‘অপারেশন সিন্দুর’ এর প্রসঙ্গ তোলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে অভিযান প্রসঙ্গেই আবার ‘সিঁদুর’ এর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা আবেগ নিয়ে মহিলাদের মন জয়ের চেষ্টা করেন মোদী।তবে এই নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করতে বিলম্ব করেননি মূখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীর সিঁদুর-মন্তব্যের জবাব দিয়ে মমতার প্রশ্ন, ‘প্রত্যেক মহিলার সম্মান আছে। স্বামীর থেকে সিঁদুর গ্রহণ করেন তাঁরা।মোদী নিজের স্ত্রীকে কেন সিঁদুর পরাচ্ছেন না? আলিপুরদুয়ারে নরেন্দ্র মোদীর সভা শেষ হতে না হতেই নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে মোদীর মন্তব্যের জবাব দিয়ে মমতা বলেন, “অপারেশন সিঁদুর নাম রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে এবিষয়ে এখনি কিছু বলব না। বিজেপি বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা যখন দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে। তখন নির্বাচনী রং লাগিয়ে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন বিজেপিরই লোক। আগে চাওয়ালা। তারপর চৌকিদার। আর এখন বলছেন সিঁদুর বেচবেন। মা, বোনের সিঁদুর এভাবে বেচা যায় না। প্রত্যেক মহিলা তাঁর স্বামীর হাত থেকে সিঁদুর নেন। এমনভাবে বলছেন মোদি যেন আপনি সকলের স্বামী। মোদী কেন নিজের স্ত্রীকে সিঁদুর পরাচ্ছেন না?” বৃহস্পতিবার বঙ্গসফরে এসে বিজেপির সভা থেকে মোদী বলেন, “আজ সিঁদুর খেলার বাংলার ভূমিতে এসেছি। তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের নতুন সংকল্প নিয়ে চর্চা হওয়া খুব স্বাভাবিক। ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওতে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছিল তারপর পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যেও অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল। সন্ত্রাসবাদীরা আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দেওয়ার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। আমাদের সেনারা সিঁদুরের শক্তি দেখিয়ে দিয়েছে।’’ এর আগেও একধিবার মোদীর গলায় শোনা গিয়েছে অপারেশন সিন্দুরের কথা। আর যতবারই অপারেশন সিন্দুরের কথা তিনি বলেছেন, ততবার তিনি ‘সিঁদুর’এর আবেগ নিয়েও মহিলাদের মন জয়ের চেষ্টা করেছেন। এতেই গোটা বিষয়টির মধ্যে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদীকে আক্রমণ করে তাঁর বক্তব্য, “একসময় নিজেকে চাওয়ালা দাবি করে ঘুরে বেড়াতেন। দ্বিতীয় বার বললেন পাহারাদার। এখন আবার বলছেন সিঁদুর বেচবেন। সিঁদুর এভাবে বেচা যায় না। সিঁদুর মা-বোনেদের আত্মসম্মান, ইজ্জত। বাংলার মা-বোনেরা যে আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচেন, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাত, অসম, মধ্যপ্রদেশে হয়? উত্তরপ্রদেশে রাস্তায় ব্লুফিল্ম চলছে। বিজেপি-র সাসংদ বলছে, মহিলাদের উচিত ছিল সন্ত্রাসবাদীদের দমন করা, তাঁরা পারেননি। দলের সাংসদকে শাসন করার ক্ষমতা নেই। ওঁর মুখে এসব শোভা পায় না।” মমতা এদিন জানান, তিনি ভেবেছিলেন মোদী সেনাকে সম্মান জানাবেন। শিলিগুড়িতে বায়ুসেনা ঘাঁটি আছে, হাসিমারা, কালিম্পং, দার্জিলিংয়ে রয়েছে। কিন্তু সেখানে গেলেন না। অপারেশন সিন্দুর নিয়ে বিরোধীরা যখন বিদেশে গলা ফাটাচ্ছেন, দেশে মোদী রাজনীতি করছেন বলে জানান মমতা। তাঁর মতে, সেনার সাহসিকতা নিয়ে প্রচার হওয়া উচিত, তা না করে মোদী নিজের প্রচার করছেন।
আলিপুরদুয়ারে মোদীর সভা থেকে এদিন অপারেশন সিন্দুরের মতো বাংলায় অপারেশন বেঙ্গল-এর ডাক দেন সুকান্ত মজুমদার,শুভেন্দু অধিকারীরা। সেই নিয়েও এদিন নবান্ন থেকে জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “অপারেশন সিন্দুর নামটা ওঁরা দিয়েছেন। সব নাম এখন কেন্দ্রই ঠিক করে। অপারেশন সিন্দুর নাম রাখা হয়েছিল, যাতে রাজনৈতিক ভাবে সেটাকে ব্যবহার করা যায়। এখনই এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে যাব না। কিন্তু সব রাজনৈতিক দল, বিজেপি বিরোধী শিবিরের প্রতিনিধিরা যখন বিদেশে দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় নির্বাচনের রাজনীতি করছেন কেন এতদিন পরও পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিরা ধরা পড়ল না, সেই প্রশ্নও তোলেন মমতা। তিনি বলেন, “এতদিনেও কেন জঙ্গিরা গ্রেফতার হল না? এতই যদি সত্যবাদী হন, বোনেদের সিঁদুর কাড়ল যারা, তাদের ধরতে পেরেছেন? তাদের মারতে পারলেন? এত বড় নেতা আপনি, যে আমেরিকার কথায় এক সেকেন্ডে চুপ হয়ে গেলেন। আবার বলছেন দেশ রক্ষা করবেন। আপনি না সাচ্চা, না আচ্ছা। আমরা সব জানি।”