পরের বছরেই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনে তৃণমূলকে ধরাশায়ী করে রাজ্যে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া শিবির। এই আবহে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতও চলছে ভারতের। অপারেশন সিন্দুরের পর বিজেপিও দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রচার চালাচ্ছে। আর এই প্রেক্ষাপটেই আজ বাংলায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডে কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। অপারেশন সিন্দুরের পর রাজ্য সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী কি বার্তা দেন, সেই অপেক্ষায় রয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। একইসঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে কোনও বার্তা দেন কিনা, সেদিকও নজর রয়েছে গেরুয়া শিবিরের। জানা গিয়েছে, আজ সকাল ১০টায় বাগডোগরা বিমানঘাঁটিতে নামবে মোদীর বিমান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে প্রধানমন্ত্রী রওনা দেবেন সিকিমে। সিকিমে তিনি একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করবেন। প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মূর্তি উন্মোচনও করবেন। তার পরে হেলিকপ্টারেই পৌঁছবেন আলিপুরদুয়ার প্যারেড গ্রাউন্ডে। দুপুর ২টো নাগাদ আলিপুরদুয়ারে পৌঁছনোর কথা মোদীর। প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রথমে প্রশাসনিক মঞ্চে যাবেন তিনি। দুপুর ২টো ১৫ নাগাদ সেই মঞ্চ থেকে আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার জেলার জন্য ‘নগর গ্যাস সরবরাহ’ প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন। ৩টে নাগাদ জনসভার মঞ্চে পৌঁছবেন মোদী। সেই জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী কি বার্তা দেন, সেদিকেই তাকিয়ে গেরুয়া শিবির। সূত্রের খবর, প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সভার ফাঁকেই দলের তরফে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করা হবে প্রধানমন্ত্রীর জন্য। তবে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্যতালিকায় কী কী থাকবে, তা এখনই চূড়ান্ত করে বলতে পারছেন না কেউ। আপাতত ভাবনাচিন্তা চলছে। কারণ এই তালিকা আগে প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে অনুমোদিত হয়ে আসতে হবে। খাদ্যতালিকায় কী রাখবেন তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন দীপক বর্মনের মতো বিজেপির নেতারা, যাঁদের ওপর রয়েছে আয়োজনের ভার। বিজেপি রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা প্রধানমন্ত্রীর এই কর্মসূচির আহ্বায়ক দীপক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোথাও দীর্ঘ সফর করলে দলীয়ভাবে মধ্যাহ্নভোজনের আয়োজন করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালে যখন তিনি জেলায় এসেছিলেন, তখন কচু দিয়ে এক বিশেষ পদ রাখা হয়েছিল তাঁর খাদ্যতালিকায়। এবার এখনও সেভাবে কিছু চূড়ান্ত হয়নি। তবে স্থানীয় কোন কোন পদ থাকবে তা নিয়ে বৈঠক করা হবে।’ দলীয় সূত্রে খবর, মূলত পিএমও প্রধানমন্ত্রীর খাবারদাবারের বিষয়টি দেখভাল করে থাকে। তবে কোথাও অনেকটা সময় কাটালে দলীয় স্তরে আলাদাভাবে খাবার আয়োজন করা হয়। সিকিমে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার আগে প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী অনেকটা সময় কাটাবেন। দুটি বৈঠক মিলে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো তিনি আলিপুরদুয়ারে কাটাতে পারেন বলে খবর। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু প্যারেড গ্রাউন্ডে এক ঘণ্টার বেশি থাকবেন, তাই তাঁকে অন্তত দু’বার চা দেওয়া হতে পারে। সেজন্য একেবারে উন্নত মানের দার্জিলিং চায়ের ব্যবস্থা করা হবে। প্রশাসনিক বৈঠকের আগে তাকে চা দিয়েই স্বাগত জানানো হবে। প্রথম বৈঠকের পর তাঁকে একটি প্লেটে সুস্বাদু হিমসাগর আম কেটে দেওয়া হতে পারে। মঞ্চের ওপরই একটি ঝুড়িতে করে আম উপহার হিসেবেও দেওয়া হতে পারে প্রধানমন্ত্রীকে। প্যারেড গ্রাউন্ডে মোদীর জনসভার যাবতীয় ব্যবস্থাপনা দেখভাল করছেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা ফালাকাটার বিধায়ক দীপক বর্মন এবং আলিপুরদুয়ারের সাংসদ মনোজ টিগ্গা। আলিপুরদুয়ার ছাড়াও জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিং সাংগঠনিক জেলা থেকে বড় সংখ্যায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মোদীর সভায় নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় চলছে। দুই দিনাজপুর এবং মালদহ থেকেও বেশ কিছু বিজেপি কর্মী-সমর্থক আলিপুরদুয়ারে পৌঁছবেন। আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। ঠিক তার আগে অপারেশন সিন্দুর এবং ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মোদীর এই বাংলা সফর বিশেষ বার্তা বহন করবে বলেই রাজনৈতিক মহলের মত। বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, “২৯শে মে সিকিম সফর সেরে আলিপুরদুয়ারে আসবেন প্রধানমন্ত্রী। সেদিন তিনি একটি জনসভা করবেন। এই সফরে মোদী রাজ্য এবং অন্যান্য রাজ্যের জন্য একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের উদ্বোধনও করবেন”। মোদীর সফরের পরপরই সপ্তাহের শেষে রাজ্যে আসছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। রাজ্য বিজেপি সূত্রে খবর, ৩১ মে সন্ধ্যায় কলকাতায় আসবেন অমিত শাহ। সেদিন রাতেই তিনি রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে সল্টলেকে একটি বৈঠক করবেন। পরদিন ১ জুন, তিনি রাজ্য ও জেলা স্তরের নেতাদের সঙ্গে একাধিক সাংগঠনিক বৈঠক করবেন। বিজেপি সূত্রে খবর, “আগামী বিধানসভা ভোটে দলের রণকৌশল, প্রচার পরিকল্পনা এবং সাংগঠনিক শক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন অমিত শাহ।” এই সফরের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি কার্যত শুরু করে দিচ্ছে বঙ্গ বিজেপি।