গুলির জবাব গুলিতে, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানকে তোপ মোদীর

IMG-20250527-WA0235

সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারত যে কড়া মনোভাব নিয়েই চলবে, তা একবার একবার স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য পাকিস্তানকেও ফের নিশানা করলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর হুঙ্কার, ‘এবার গুলির জবাব গুলিতেই দেওয়া হবে’। মঙ্গলবার গুজরাতের গান্ধিনগরে সভা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সভা থেকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি। পাকিস্তানের কড়া নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সোজাসুজি লড়াইতে না পেরে ছায়াযুদ্ধ চালিয়েছে পাকিস্তান। সুযোগ পেলেই নিরীহদের মেরেছে তারা। এবার গুলির জবাব দেওয়া হবে গুলিতেই। ভারতও প্রতিবেশী দেশের সুখ চায়। নিজেরা সুখে থাকো আমাদেরও সুখে থাকতে দাও।’ তিনি বলেন, “এই মাটি বীরদের ভূমি। এখনও পর্যন্ত, ৬ মে-র দৃশ্য দেখার পর, আমরা যাকে ছায়া যুদ্ধ বলতাম, আর তাকে আর ছায়া যুদ্ধ বলার ভুল করতে পারি না। মাত্র ২২ মিনিটের মধ্যে ভারত সন্ত্রাসবাদের ৯ টি আস্তানা চিহ্নিত করে ধ্বংস করা করেছে। সবকিছু ক্যামেরার সামনে করা হয়েছিল, যাতে কেউ দেশে ফিরে প্রমাণ চাইতে না পারে।”
পাকিস্তানের গুলির জবাব গুলিতেই দেওয়ার কথা জানিয়ে মোদী বলেন, “আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। অন্যদেরও শান্তিতে থাকতে দিতে চাই। কিন্তু ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে যখন আমাদের শক্তির পরীক্ষা নেওয়া হয়, তখন আমরা চুপ থাকতে পারি না।” মোদীর কথায়, “পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জঙ্গিদের শেষকৃত্য হয়েছে। পাকিস্তানের পতাকা দিয়ে জঙ্গিদের কফিন ঢাকা হয়েছে। এটাই প্রমাণ করে সন্ত্রাসবাদ পাকিস্তানের কাছে ছায়াযুদ্ধের কৌশল নয়, যুদ্ধের কৌশল।” মোদী বলেন, ‘আমরা তো এখনও কিছু করিইনি আর তাতে পাকিস্তান ঘামতে শুরু করেছে’। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই। আপনি যদি ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তিটি পড়েন, তাহলে অবাক হবেন। তাতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল , জম্মু ও কাশ্মীরের নদীর উপর নির্মিত বাঁধগুলি পরিষ্কার করা হবে না। জলাশয় পরিষ্কারের জন্য নিচের দরজাগুলি বন্ধ রাখা হবে। ৬০ বছর ধরে, এই দরজাগুলি কখনও খোলা হয়নি। জলাশয়গুলির ১০০% ধারণক্ষমতা কমে এখন মাত্র ২% বা ৩% এ নেমে এসেছে। এখনও, আমি কিছুই করিনি এবং সেখানে পাকিস্তান ঘামতে শুরু করেছে। আমরা বাঁধ পরিষ্কারের জন্য ছোট দরজা খুলেছি এবং আর তাতেই সেখানে বন্যা দেখা দিয়েছে”। তিনি বলেন,দেশভাগের সময়, মা ভারতীকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। সেই রাতেই মুজাহিদিনরা কাশ্মীরে প্রথম সন্ত্রাসবাদী হামলা চালায়। এরপর পাকিস্তান মুজাহিদিনের সহায়তাতেই ভারতমাতার একটি অংশ দখল করে নেয়। যদি ওই দিন এই মুজাহিদিনদের হত্যা করা হত এবং সর্দার পটেলের পরামর্শ মেনে নেওয়া হত, তাহলে গত ৭৫ বছর ধরে এই সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা দেখা যেত না। সোমবার গুজরাতের দাহোদের জনসভা থেকেও পাকিস্তানকে নিশানা করেছিলেন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘যারা সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত।’
পহেলগাঁওয়ের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেছিলেন, ‘‘জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসবাদীরা যা করেছে, তার পরে কি ভারত চুপ করে থাকতে পারত? মোদী কি চুপ করে থাকতে পারত? যখন কেউ আমাদের বোনেদের সিঁদুর মুছে দিতে আসবে, তখন তাদেরও মুছে যেতে হবে, এটা নিশ্চিত। অপারেশন সিঁদুর শুধুই একটা সামরিক অভিযান নয়। এটা ভারতীয়দের সংস্কার, ভাবনার অভিব্যক্তি।’’ মোদী আরও বলেন, ‘‘যারা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে, তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি, মোদীর সঙ্গে মোকাবিলা করা কতটা কঠিন।’’ গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ের বৈসরন উপত্যকায় জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন ভারতীয় এবং এক জন নেপালি। সেই ঘটনার পর শোরগোল পড়ে যায় দেশজুড়ে। জঙ্গি হামলার ঘটনায় প্রত্যাঘাতের দাবি ওঠে দেশজুড়ে।প্রথম থেকেই মনে করা হয়েছিল, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে পাকিস্তান। তাই পাকিস্তানকে জবাব দেওয়ার দাবিও ওঠে। এরপর গত ৬ মে মধ্যরাতে ‘অপারেশন সিন্দুরে’র মাধ্যমে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করে ভারতীয় সেনা। তার পাল্টা হিসাবে পাকিস্তান হামলা চালায়। টানা চার দিন ধরে ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলে। গত ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement