যোগ্য চাকরি ফেরতের দাবিতে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত চাকরিহারা প্রার্থীরা কাটাচ্ছেন রাস্তাতেই। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি যাওয়ার পর থেকে দেড় মাস ধরে লাগাতার রাস্তায় আন্দোলনে রয়েছেন। চাকরি ফেরতের দাবিতে প্রতিটি ধর্না, প্রতিটি অবরোধে তাঁরা অংশ নিচ্ছেন মহিলা চাকরিহারা প্রার্থীরা। তাঁদের সন্তান থাকছে বাড়িতে প্রায় একা। সন্তানদের দেখভালের জন্য এক আন্দোলনকারী সোমা জানালেন তার বাড়িতে মা রয়েছেন, তবে ছোট অভীপ্সাকে নিয়মিত ওষুধ দেওয়া, খাবার খাওয়ানোর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওই প্রবীণাকে বেজায় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। রাতের পর রাত মাকে কাছে না পেয়ে ছোট্ট অভীপ্সা খাওয়া–দাওয়াই করতে চাইছে না। ঘুমোচ্ছেও না। আন্দোলনে শামিল হয়েছেন মায়েদের মতো এখানে বাবারাও আছেন ঠিকই, কিন্তু ছোট ছোট সন্তানেরা যেখানে বেশির ভাগই মা–নির্ভর, সেই খুদেদের দিন–রাত কাটছে না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, কাঁদতে কাঁদতে।বড়িষা গার্লস হাইস্কুলের এক চাকরিহারা শিক্ষিকা জানালেন তার বছর পাঁচেকের মেয়ে রাতে ঘুমোচ্ছে না। সে আন্দোলনে থাকা মাকে মাঝে মধ্যেই ফোন করে জিজ্ঞেস করছে। বাঁকুড়ার এক শিক্ষিকার কথায়, ‘ছোট থেকে একটা বাঁধা রুটিনে অভ্যস্ত তাঁর মেয়ে। বিকেলের মধ্যে মা ফিরে আসবে। তারপর থেকে আমার সঙ্গেই ওর সব কিছু। এখন সেই রুটিন ভেঙে গিয়েছে। মেয়ে অভিমান করছে। ঠিক মতো কথাও বলছে না। এই বিষয়ে শিশু মনোবিদ তুতুল রায় জানান, যে বয়সে শিশুদের বেড়ে ওঠার কথা সেই বয়সে মায়ের স্পর্শ পাওয়া থেকে দূরে থাকছে। মাকে না পাওয়ায় দূরত্ব তৈরী হচ্ছে। যারা ১০/১২ বছর বয়সের তাঁরা নিজেদের একটু বুঝতে শেখাচ্ছে যে তাঁদের মা আন্দোলনে আছে কিন্তু তাঁদেরও একা থাকা তৈরী মনের মধ্যে প্রভাব পড়ছে। আন্দোলনের মাঝে ভিডিও কল বা ফোনে একজন মা তাঁর সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছেন কিন্ত মাকে এর জন্য সেই সন্তান কাছে না পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে। এতদিন এক ধরণের রুটিনে অভ্যস্ত হয়েছিল বাচ্চাটি, এখন মাকে কাছে না পেয়ে তাঁর জীবনেও বদল আসছে। ফলে সেই শিশুটির অবসাদ হওয়াটা স্বাভাবিক। শৈশব থেকে শিশুদের শেখানো হয় পড়াশোনা করার কথা কিন্তু এই আন্দোলনের আরও একটি প্রভাব শিশুদের মনে পড়ে ফলে সেই ক্ষেত্রে তাঁরা মনে করেন পড়াশোনা করব কেন?