পহেলগাঁও জঙ্গি হামলার পরে বদলা নিতে ‘অপারেশন সিন্দুরে’র মাধ্যমে পাকিস্তানের মাটিতে থাকা ৯টি জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ভারতীয় সেনা। তারপরেই দু’দেশের সংঘাত চরমে পৌঁছয়। পরে অবশ্য সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ। এই আবহে বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানের পর্দাফাঁস করতে উদ্যোগী হয়েছে ভারত। পাকিস্তানের সন্ত্রাস এবং ‘অপারেশন সিন্দুরে’র কথা বিশ্বকে জানাতে বহুদলীয় সংসদীয় দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই প্রতিনিধি দলে তৃণমূলের তরফে কে থাকবেন, সেই গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল বিতর্ক। সূত্রের খবর, সেই দলে থাকবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এর আগে তৃণমূলের তরফে অন্য নাম নিয়ে জল্পনা তৈরি হলেও দলই তা খারিজ করে দেয়। মঙ্গলবার এ ক্ষেত্রে অভিষেকের নাম সামনে আসে।সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কিরেন রিজিজু ফোন করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দু’জনের মধ্যে বেশ খানিক ক্ষণ কথা হয়। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সংসদীয় দলে তৃণমূলের তরফে যাবেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের নাম প্রস্তাব করেন মমতাই। দলকে না-জানিয়ে বহরমপুরের তৃণমূল সাংসদ ইউসুফ পাঠানকে সংসদীয় দলে তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে রাখায় ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আপত্তি তুলেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। দলের দুই সর্বোচ্চ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, কেন্দ্র বা পক্ষান্তরে শাসকদল বিজেপি ঠিক করতে পারে না তৃণমূলের তরফে কে যাবেন। তা দলই ঠিক করবে। তবে শেষ পর্যন্ত ঠিক হয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রতিনিধি দলে থাকবেন। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলার পরেই বিষয়টি ঠিক হয়। সূত্রের খবর, রিজিজুর সঙ্গে ফোনে কথা হওযার সময় দলের নেতৃত্বকে না-জানিয়ে কী ভাবে কেন্দ্র তৃণমূলের প্রতিনিধির নাম ঠিক করেছিল, তা নিয়ে ক্ষোভ জানান মমতা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও মমতাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। পরে আলোচনার মধ্যে দিয়েই ঐকমত্যে পৌঁছেছে দু’পক্ষ। উল্লেখ্য, রিজিজুই ফোন করে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলেন পাঠানের সঙ্গে। তাঁর পাসপোর্ট সংক্রান্ত নথি চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। দলের কানে যাওয়ার পরেই বিষয়টি রুখতে মাঠে নেমেছিলেন তৃণমূলের সংসদীয় দলের প্রথম সারির নেতারা। সোমবার মমতা জানিয়েছিলেন, বিদেশনীতির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে তৃণমূল রয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিষয় দলই ঠিক করবে। একই কথা বলেছিলেন অভিষেকও। সোমবার রাতে বিদেশ বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকশেষে অভিষেক দিল্লিতে বলেছিলেন, ‘‘কেন্দ্র চাইলে এক ঘণ্টায় পাঁচ জনের নাম দিয়ে দেব। কিন্তু তা দল ঠিক করবে। অন্য কেউ নয়।’’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এ-ও বলেছিলেন, ‘‘কেউ কেউ বলছে তৃণমূল বয়কটের রাজনীতি করছে। না, আমরা বয়কটের রাজনীতি করছি না।’’ শুধু তৃণমূল নয়, কংগ্রেসের কাছ থেকেও নাম চেয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কংগ্রেস চার জনের নাম পাঠিয়েছিল। কিন্তু সেই চার জনের কাউকে দলে শামিল করা হয়নি প্রতিনিধি দলে। সেই নামের বাইরেই কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরকে প্রতিনিধি দলে শামিল করা। তা নিয়েও শুরু হয় বিতর্ক।