সপ্তর্ষি সিংহ
বৃহস্পতিবার যোগ্য চাকরি ফেরতের দাবিতে বিকাশ ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন বঞ্চিত চাকরিহারারা। ওএমআর প্রকাশ ও তাঁদের ন্যায্য সম্মান সহ সবেতনে স্কুলে ফেরানোর স্লোগান দিয়ে বিকাশ ভবন ঘেরাও করেন যোগ্য শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী অধিকার মঞ্চ। কিন্তু সেই রাতেই পুলিশের নির্মম লাঠির আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে ওঠে। কারও মাথায় ব্যান্ডেজ, আবার কেউ বিছানায় শুয়ে পা ভাঙা নিয়ে। যদিও সেই রাতের পর তিনদিন অতিবাহিত, কিন্তু পুলিশের লাঠির আঘাত তাঁদের মনোবল এক বিন্দুও টলাতে পারেনি। শৌচালয়, জল, বিছানা কিছুই ঠিক মতো কিন্তু মনের শক্তিতে পথের দাবি ছাড়তে নারাজ তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে কমিশন ও শিক্ষমন্ত্রীর বিবৃতির অপেক্ষায় তাঁরা দিবা রাত্রি বিকাশ ভবনের ঠিক পাশে মেট্রো স্টেশনের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন। আন্দোলনে শামিল শুধু পুরুষরা নন। তাঁদের সঙ্গে রাত জাগচ্ছেন মহিলারা। পরিবার ছেড়ে, সন্তান ছেড়ে প্রত্যেক বলছিলেন আন্দোলনে শামিল হয়েছেন চাকরি ফেরানোর দাবিতে। সকাল থেকে রাত মুখে একটাই স্লোগান দিচ্ছেন তাঁরা হকের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে। শত লাঠি খেয়েও অনেকে বাড়ি ফেরেননি, তাঁরা ২৪ ঘণ্টা পরেও রাস্তার উপরেই মাটি কামড়ে শুয়ে রয়েছেন। তবে লাঠির আঘাতে তাঁদের মধ্যে চোখ খুলে তাকাতে পারছেন না এক সহকর্মীর সেই বিবরণ দিচ্ছিলেন একজন। বৃহস্পতিবার বিকাশ ভবনের সামনে পুলিশ লাঠির আঘাত পড়েছিল সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ের রসায়নের এই শিক্ষক ঠিক মতো হাঁটতেও পারছেন না। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসার পর এখন সল্টলেকের ভাড়াবাড়িতে আছেন সোমনাথবাবু। তবে ফের লড়াইয়ে নামবেন, অটুট প্রত্যয় তাঁর।
জখম ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই বহু মানুষ, দল, সংগঠন, শিক্ষক থেকে নাগরিক সমাজের মানুষেরা এগিয়ে এসেছেন পাশে দাঁড়াতে।
ওই দিন আন্দোলনে থাকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসিন্দা রজত হালদার পেশায় তিনি রায়দিঘির সুভাষ নগর হাইস্কুলের ফিজ়িক্যাল সায়েন্সের টিচার ছিলেন। চাকরি হারিয়ে কসবার ডিআই অফিস অভিযানে পুলিশ তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ করেছেন। সেই ব্যাথা সারতে না সারতে লাঠির আঘাতে চোখের উপরে তিনটি সেলাই নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে রজতের। তিনি জানালেন চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়েছেন, রেটিনায় জল জমে গিয়েছে। নিয়মিত চিকিৎসা করাতে হবে। না হলে দৃষ্টিশক্তি নিয়ে সমস্যা হতে পারে।
রাস্তায় শুয়ে থাকা চাকরি হারানো এক শিক্ষক বলেন, ‘আমার মা এখনও জানেন না যে আমার চাকরিটা নেই। বলতেও চাই না। মা চেয়েছিলেন আমি মিলিটারি হই। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল শিক্ষকতা করার। শাক ভাত খেয়ে, শুধু পেঁয়াজ দিয়ে ভাত খেয়েও আমার দাদারা আমাকে শিক্ষক করেছে। আমিও চাকরির পরে নিজের জন্য কিছু না করে দাদাদের জন্য বাড়ি করে দিয়েছি। এই দিন দেখার জন্য?’
বাংলার এক শিক্ষিকার কথায়, ‘তিন বছরের মেয়ে, স্বামী, প্রবীণ বাবা–মায়ের অবস্থা তো ছেড়েই দিন। আমরা তো বাচ্চাদের শেখাই বড়দের সম্মান করতে, সহবত শিখতে, যাঁরা অসুবিধেয় আছে তাঁদের সাহায্য করতে। কিন্তু এ কেমন শিক্ষা আমাদের রাজ্যের পুলিশ পেয়েছে যে, সে সবের ধার ধারেন না তাঁরা?’