সংঘর্ষবিরতির পাঁচদিনের মাথায় দেশে ফিরলেন রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফ জওয়ান পূর্ণম কুমার সাউ।২০ দিন পর পাকিস্তান থেকে ছাড়া পেলেন তিনি। বুধবার তাঁকে মুক্তি দিয়েছে পাকিস্তান।ভারত-পাকিস্তান সংঘাত পর্বে ভুলবশত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরোনোয় তাঁকে বন্দি করে পাক রেঞ্জার্স। ২৩ দিন পর অবশেষে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হল। ছেলের মুক্তির খবর আসতেই স্বস্তি ফিরেছে সাউ পরিবারেও। অন্যদিকে রাজস্থানে আটক পাক রেঞ্জার্সকেও মুক্তি দিয়েছে ভারত। বিএসএফ জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ অটারী-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে ভারতে ফিরেছেন পূর্ণম।গত ২৩ এপ্রিল পঞ্জাবের পঠানকোটে কর্মরত অবস্থায় ভুল করে পাকিস্তানে ঢুকে গাছের তলায় বিশ্রাম নিচ্ছিলেন পূর্ণম। তখনই পাক রেঞ্জার্স তাঁকে ধরে। সীমান্তে এমন ঘটলে দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’-এর পরে সংশ্লিষ্ট জওয়ানকে মুক্তি দেওয়াই দস্তুর। কিন্তু পূর্ণমকে তখন ছাড়েনি পাকিস্তান। গত শনিবার সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। তার কয়েক দিনের মাথায় ভারতে ফিরলেন পূর্ণম কুমার সাউ। ফিরোজ়াবাদে পোস্টেড ছিলেন পূর্ণম কুমার সাউ। গত ২৩ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানার ঠিক পরের দিন সীমান্তে টহল দেওয়ার রুটিন ডিউটির মাঝেই ভুলবশত পার করে ফেলেছিলেন নিয়ন্ত্রণ রেখা। জানা গিয়েছে, ঠা ঠা রোদে ছায়ার খোঁজে পাকিস্তানের দিকের একটি গাছের তলায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তিনি। সে সময় তাঁকে বন্দি করে পাক রেঞ্জার্স। পূর্ণম পঞ্জাবের পঠানকোটের ফিরোজ়পুরে ২৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের কনস্টেবল। স্বামীকে মুক্ত করার ব্যাপারে তদ্বির করতে আট বছরের ছেলে এবং আত্মীয়দের নিয়ে গত ২৮ তারিখ হিমাচল প্রদেশের কাংড়ায় বিএসএফের দফতরে গিয়েছিলেন স্ত্রী রজনী সাউ। স্বামীর কর্মস্থলেও যান তিনি। তাঁরা ফিরোজ়পুর সীমান্তেও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে সেখানে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলেনি। বাড়ি ফিরে স্বামীর মুক্তির অপেক্ষায় প্রহর গুনছিলেন রজনী। এর মধ্যেই জঙ্গি হামলার বদলা নিতে অপারেশন সিন্দুর অভিযান চালায় ভারত। তারপর নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে সংঘাত চরমে পৌঁছয়। যদিও লাগাতার চাপ বজায় রেখেছিল নয়াদিল্লি। অবশেষে বন্দি হওয়ার ২৩ দিন পর ছাড়া পেলেন পূর্ণম সাউ। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহরের অদূরে জঙ্গিশিবিরে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। জবাবে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালায় পাক বায়ুসেনা। সে সময় হামলাকারী এফ-১৬ বিমানের পিছু ধাওয়া করেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন। নিজের মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশসীমা পেরিয়ে ঢুকে পড়েন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। এর পরে আহত অবস্থায় পাক সেনার হাতে বন্দি হন তিনি। পরে অবশ্য তাঁকে ভারতের কাছে প্রত্যর্পণ করে পাকিস্তান। আর বুধবার পূর্ণমকে প্রত্যর্পণ করল পাকিস্তান। বিএসএফ জওয়ান পূর্ণমকুমার সাউকে মুক্তি দেওয়ার পর রাজস্থান থেকে আটক পাক রেঞ্জারকেও মুক্তি দিয়েছে ভারত। গত ৩ মে রাজস্থানে সীমান্ত লঙ্ঘন করে প্রবেশের জন্য বন্দি হন এক পাক রেঞ্জার। তার পর বেশ কয়েক বার ‘ফ্ল্যাগ মিটিং’ হয়েছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং পাক রেঞ্জার্সের। কিন্তু জট কাটছিল না। গত ১০ মে ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির প্রেক্ষিতে সমস্যা সমাধানের আশা করা হয়েছিল। সেইমতো বুধবার বিএসএফ জওয়ানকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান। তারপরেই পাক রেঞ্জারকে পাকিস্তানে প্রত্যর্পণ করে ভারত।