সংঘর্ষ বিরতির মাঝেই জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে সোমবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।মঙ্গলবার আদমপুর বায়ুসেনা ঘাঁটিতে গিয়ে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে ফের কড়া বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর হুঙ্কার, “ঘরে ঢুকে মারব। বাঁচার কোনও সুযোগও দেব না।” কয়েকদিন ধরে চলা সংঘাতের মাঝে শনিবারই সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। সোমবার আরও এক দফায় ডিজিএমও স্তরে কথা হয় ভারত ও পাকিস্তানের। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী মোদীকে।তারপরেই মঙ্গলবার সকালে পাঞ্জাবের আদমপুরের বায়ুসেনাঘাঁটিতে পৌঁছন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বায়ুসেনার জওয়ানদের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথাও বলেন। এই বায়ুসেনাঘাঁটিতেই ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন দিয়ে হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং বায়ুসেনার তৎপরতায় সেই হামলা প্রতিহত করা হয়েছে। শুধু আদমপুর বায়ুসেনাঘাঁটিই নয়, আরও কয়েকটি বায়ুসেনাঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করেছিল পাকিস্তান। সব ক’টি হামলাই ব্যর্থ করেছে সেনা। পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাত এবং পাক হামলা দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেওয়ায় তিন বাহিনীর প্রশংসাও শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর গলায়। আদমপুরের বায়ুসেনাঘাঁটি থেকে পাকিস্তানের উদ্দেশ্যে কড়া বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “যে পাকিস্তানি সেনার ভরসায় এই জঙ্গিরা বসেছিল, ভারতের সেনা-বায়ুসেনা-নৌসেনা পাকিস্তানি সেনাকে ছারখার করে দিয়েছে। আপনারা পাকিস্তানি সেনাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, পাকিস্তানে এমন কোনও ঠিকানা নেই, যেখানে বসে জঙ্গিরা স্বস্তিতে থাকতে পারবে। ঘরে ঢুকে মারব। বাঁচার কোনও সুযোগও দেব না। আমাদের ড্রোন, মিসাইলের কথা ভেবেই পাকিস্তানের কয়েকদিন ঘুম হয়নি।” পাকিস্তানকে উপযুক্ত জবাব দেওয়ায় ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আজ আমাদের নতুন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সক্ষমতা আছে। যার মোকাবিলা করতে পারবে না পাকিস্তান। গত দশকে, বিশ্বের সেরা প্রযুক্তি পৌঁছেছে ভারতীয় বায়ুসেনা এবং আমাদের অন্যান্য বাহিনীতে। কিন্তু, আমরা সকলেই জানি যে, নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বড় চ্যালেঞ্জও আসে। একটা জটিল ও উন্নতি সিস্টেমের ভারসাম্য রাখা, দক্ষতার সঙ্গে তার পরিচালনা করার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন। আপনার প্রযুক্তিকে কৌশলের সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন। আপনারা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, এই খেলায় আপনারা চমৎকার।”প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘ আমরা শান্তি চাই। কিন্তু মানবতার উপর হামলা হলে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে ভালো করেই জানে।’ আদমপুর এয়ারবেসে ফাইটার জেট পাইলট এবং টেকনিক্যাল সার্পোট স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন মোদী। অপারেশন সিন্দুর ও পাক হানা প্রতিহত করা নিয়েও জওয়ানদের সঙ্গে কথা হয় তাঁর। এক্স হ্যান্ডলে বায়ুসেনাঘাঁটিতে জওয়ানদের সঙ্গে নিজের ছবি পোস্ট করেন মোদী। তিনি লেখেন, ‘‘মঙ্গলবার সকালে আদমপুরের বায়ুসেনাঘাঁটিতে গিয়েছিলাম। আমাদের বাহাদুর জওয়ানদের সঙ্গে দেখা করলাম। যারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, বাহাদুরির সঙ্গে লড়াই করেছে, তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ আমার কাছে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা। সেনাবাহিনীর প্রতি গোটা দেশ কৃতজ্ঞ। তারা দেশের সুরক্ষার জন্য সর্বদা প্রস্তুত।’’ সোমবার দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমাদের সেনাবাহিনী সর্বদা সতর্ক। আকাশ, জল থেকে মাটি-সর্বত্র আমরা প্রস্তুত থেকেছি। ‘নতুন নর্মাল’ তৈরি করেছে সেনা। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আবার জবাব দেওয়া হবে। কোনও ‘নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল’ ভারত সহ্য করবে না।’’ মোদী দাবি করেন, রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট সন্ত্রাসের বড় উদাহরণ পহেলগাঁও কাণ্ড। তাঁর কথায়, ‘‘প্রত্যেকটি যুদ্ধের ময়দানে আমরা পাকিস্তানকে পর্যুদস্ত করেছি।’’ প্রসঙ্গত, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওকাণ্ডের পর গত ৭ মে পাকিস্তানের মাটিতে প্রত্যাঘাত করে ভারত। ‘অপারেশ সিন্দুর’এর মাধ্যম্যে পাকিস্তানের ৯টি জঙ্গি শিবির গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক অস্থিরতা তৈরি হয়। সংঘর্ষবিরতির পরেই আদমপুরের বায়ুসেনাঘাঁটিতে গিয়ে সেনাবহিনীর প্রশংসা করলেন নরেন্দ্র মোদী।