দিন কয়েকের চরম সঙঘাতের পর আপাতত সংঘর্ষ বিরতিতে সম্মত হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। কিন্তু তা কতদিন বজায় থাকবে, সেই প্রশ্ন তুলে দিল খোদ পাক বিদেশ মন্ত্রীর মন্তব্য। এক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের বিদেশ মন্ত্রী ইশাক দার জানালেন, সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে এই ঘটনাকে যুদ্ধ হিসেবে দেখা হবে। সমস্যায় পড়তে পারে দুই দেশের সংঘর্ষবিরতি।
সিএনএনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইশাক দার বলেন, ‘‘যদি ভারত সিন্ধু জলচুক্তি নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ না করে, তা হলে তা যুদ্ধ বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করবে পাকিস্তান।’’ ইশাক দার আরও জানান, মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়োর মধ্যস্থতাতেই কথা হয়েছিল দুই দেশের। তবে যুদ্ধ বন্ধ হলেও সিন্ধু জলচুক্তির মতো দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিগুলি নিয়ে এখনও দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, কাশ্মীর সমস্যাকে সীমান্তে উত্তেজনার মূল কারণ বলেও দাবি করেছেন পাক বিদেশমন্ত্রী। ফলে কাশ্মীর নিয়ে ভারত সরকার কোনও পদক্ষেপ করলে তবেই জঙ্গিহানার মতো ঘটনা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।রবিবার ভারত সরকারের সূত্র সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছিল, সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারতের অবস্থানে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে ইশাক দারের মন্তব্যের পর এখন দুই দেশের সম্পর্ক কোন জায়গায় পৌঁছোয়, সে দিকে তাকিয়ে বিশ্ব। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সিন্ধু ও তার উপনদীগুলির জলের বণ্টন কী ভাবে হবে, তা এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী স্থির করা হয়। পশ্চিমবাহিনী তিনটি নদী— সিন্ধু ও তার দুই উপনদী চন্দ্রভাগা এবং বিতস্তার জল যায় পাকিস্তানে। ওই জলের উপরেই দেশটির কৃষিকাজের ৮০ শতাংশ নির্ভরশীল। বাকি তিন উপনদীর জলের উপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করার পর পাকিস্তানের ওই তিন নদীর জল ভারত বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দিতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সেই আবহেই পাকিস্তানের মন্ত্রী ফের হুঁশিয়ারি দিয়ে বললেন, সিন্ধুর জল বন্ধ হলে তা যুদ্ধ হিসাবে দেখবে পাকিস্তান।অপারেশন সিন্দুরের পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষবিরতি হলেও সিন্ধুর জল নিয়ে অনড় অবস্থান ভারতের। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সিন্ধুর একফোঁটা জলও পাকিস্তানকে দেওয়া হবে না। সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও স্পষ্টভাবে পাকিস্তানকে সে বার্তা দিয়ে দিয়েছেন। কড়া সুরে তিনি বলেন, “রক্ত ও জল একসঙ্গে বইবে না।” পহেলগাঁও হামলার পরই স্থগিত হয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি। বর্তমান সংঘর্ষবিরতিতে পাকিস্তান আশা করছিল ভারতের সঙ্গে আলোচনায় এই স্থগিতাদেশ হয়তো তুলে নেবে মোদী সরকার। তবে ‘রক্ত ও জল একসঙ্গে বইবে না’ বলে যে বার্তা মোদী দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট যে সিন্ধু জলচুক্তি থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে পুরোপুরি তালা এঁটে দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
জেলেনস্কির শর্ত
ইউক্রেনকে যুদ্ধ বন্ধে সদর্থক আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর পুতিনের এই প্রস্তাবে রীতিমতো কড়া প্রতিক্রিয়া দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তাঁর সাফ কথা, ”আগে যুদ্ধবিরতি হোক, তারপর কথা হবে।”