নয়া দিল্লি: পাক অধিকৃত কাশ্মীর এবং পাকিস্তানে জঙ্গিদের আস্তানায় গত মঙ্গলবার এবং বুধবারের রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন নিহত পাঁচ জঙ্গির পরিচয় প্রকাশ্যে এসেছে। ওই পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন লশকর-এ-ত্যায়বা এবং তিনজন জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। জইশ জঙ্গিনেতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের দুই আত্মীয় রয়েছে ওই তালিকায়। তার মধ্যে এক জন কন্দহার বিমান অপহরণকাণ্ডে অন্যতম ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল। ভারত সরকার গত বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট ভাবে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। যদিও নিহত জঙ্গিদের নাম-পরিচয় সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই এবং সরকারি সংবাদমাধ্যম ডিডি নিউজ় পাঁচ জঙ্গির নাম প্রকাশ করেছে, যারা ‘অপারেশন সিঁদুরে’ নিহত হয়েছে।ওই সূত্রের দাবি, লশকর-এ-ত্যায়বার জঙ্গি মুদস্সর খাদিয়ান খাস ওরফে মুদস্সর ওরফে আবু জুন্দলের মৃত্যু হয়েছে ওই অভিযানে। মুরিদকে অঞ্চলে মারকজ় ত্যায়বার দায়িত্বে ছিল সে। পাকিস্তানের এক সরকারি স্কুলে তার শেষকৃত্যের প্রার্থনা হয়েছে। পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জামাত-উদ্-দাওয়া (জিইউডি)-র নেতা হাফিজ় আবদুল রাউফ উপস্থিত ছিলেন। ডিডি নিউজ়ের সমাজমাধ্যম পাতায় জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের এক পুলিশকর্তা এবং পাক সেনার এক কর্তব্যরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলকেও ওই শেষকৃত্যের প্রার্থনায় উপস্থিত ছিলেন। নিহত ওই জঙ্গিকে সেখানে পাক সেনার তরফে ‘গার্ড অফ অনার’ও দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ২৬/১১-র মুম্বই হামলাতেও আবু জুন্দল নামে এক জঙ্গির নাম উঠে এসেছিল। সে-ও লশকরের জঙ্গি। তবে ‘অপারেশন সিঁদুরে’ নিহত জঙ্গি সেই আবু জুন্দল নয়। ২৬/১১ হামলায় অভিযুক্ত জঙ্গির নাম ছিল জ়াবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দল। ২০১২ সালে সৌদি আরব থেকে তাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়। ২০০৬ সালের ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র উদ্ধার মামলাতেও অন্যতম অভিযুক্ত ছিল সে। ২০১৬ সালে ওই মামলায় জুন্দলকে দোষী সাব্যস্ত করে মহারাষ্ট্রের আদালত এবং বর্তমানে সে ভারতীয় জেলে বন্দি। ‘অপারেশন সিঁদুরে’ নিহত হয়েছে খালিদ ওরফে আবু আকাশা নামে আরও এক লশকর জঙ্গি। ডিডি নিউজ় এবং এএনআই সূত্রের দাবি, জম্মু ও কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিহানায় যুক্ত ছিল খালিদ। আফগানিস্তান থেকে অস্ত্রপাচারেও তার যোগ ছিল বলে ওই সূত্রের দাবি। পাকিস্তানের ফয়সলাবাদে ওই জঙ্গির শেষকৃত্যের সময়েও পাক সেনা আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে। ফয়সলাবাদের ডেপুটি কমিশনারও সেখানে ছিলেন বলে দাবি ওই সূত্রের।এ ছাড়া জইশ-ই-মহম্মদের তিন নিহত জঙ্গির নামপরিচয়ও প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গিনেতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের আত্মীয় হাফিজ় মুহম্মদ জামিল। এই জঙ্গি জইশের হয়ে অর্থসংগ্রহ এবং তরুণ সমাজের মধ্যে কট্টরপন্থী ভাবধারা ছড়ানোর কাজ করত। মারকজ় সুভান আল্লাহ-র দায়িত্বে ছিল এই জঙ্গি। মাসুদ আজ়হারের অপর এক আত্মীয় মুহম্মদ ইউসুফ আজ়হারেরও মৃত্যু হয়েছে ওই অভিযানে। জইশ জঙ্গিদের অস্ত্রপ্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিল এই জঙ্গিনেতা। জম্মু ও কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গি হানায় নাম জড়িয়েছে তার এবং আইসি-৮১৪ অপহরণ কাণ্ডেও ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় ছিল এই জইশ নেতা। গত বুধবার ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে জইশ জঙ্গি মহম্মদ হাসান খানের। পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম কমান্ডার মুফতি আসগর খান কাশ্মীরির ছেলে সে। কাশ্মীরে বেশ কিছু জঙ্গিহানা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে এই জঙ্গির বিরুদ্ধে।