বিগ্রহ-বিতর্কে বদনাম রটানোয় বিক্ষুদ্ধ মমতা

IMG-20250506-WA0288

পুরীর জগন্নাথ ধামের আদলে দিঘায় তৈরি হয়েছে জগন্নাথ মন্দির।আর মন্দির উদ্বোবধনের পর থেকেই নানা বিতর্ক সামনে আসছে। পুরীর মন্দির থেকে পবিত্র নিমকাঠ দিঘায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি সেই কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। তবে শেষমেশ ওড়িশা সরকার মেনে নিয়েছে, পুরীর নিমকাঠ চুরি করে দিঘার জগন্নাথ মূর্তি বানানো হয়নি। ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানিয়েছেন, তদন্তে দেখা গিয়েছে পুরীর নব কলেবরের উদ্বৃত্ত নিমকাঠে বানানো হয়নি দিঘার জগন্নাথ বিগ্রহ। তবে পাল্টা নিশানা করতে পিছপা হননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, কেন মিথ্যে বদনাম রটানো হল? তাঁর খোঁচা, “কী মুখে ঝামা ঘষা হল তো!” দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে উদ্বোধন হয়েছে অক্ষয় তৃতীয়ায়। তারপর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়। অভিযোগ উঠছিল, ২০১৫ সালের পুরীর জগন্নাথ মন্দির বিগ্রহের নব কলেবর করার পর যে উদবৃত্ত নিমকাঠ ছিল তা দিয়ে দিঘার মূর্তি তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়। তদন্তের নির্দেশ দেয় ওড়িশা সরকার। তারপর অভিযোগ ওড়ান সে রাজ্যের আইনমন্ত্রী। পৃথ্বীরাজ হরিচন্দনের কথায়, “পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বাড়তি কাঠ থেকে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তি বানানো-এই ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত হয়। মহারানা সেবক যে সমাজ আছে, তাদের সঙ্গে কথা বলার পর, এটা সামনে এসেছে, কাঠের যতটা অংশ বাকি রয়েছে, তা নিয়ে নতুন করে কোনও মূর্তি বানানো অসম্ভব। ওখানকার দ্বৈতাপতি সমাজের সেক্রেটারিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তখনই দ্বৈতাপতি সমাজের সেক্রেটারি যে তদন্ত করেছেন, তাঁরাও স্বীকার করে নিয়েছেন যে, যেটা বলা হয়েছিল, সেটা ভুলবশত হয়েছে।” মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে ফের মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আমার নামে বদনাম করলেন কেন? তা হলে কত টাকা ফাইন হওয়া উচিত?’’ মুর্শিদাবাদের সুতিতে ভাষণ দেওয়ার সময়ে মমতা বলেন, ‘‘বলছে আমি নাকি নিমকাঠ চুরি করেছি। কান মুলে দেওয়া উচিত। বাংলায় কি নিমগাছ নেই? যাঁরা বলেছিলেন ওই কথা, তাঁরাই বলছেন ঠিক নয়।’’ কারও নাম না-করে কটাক্ষের সুরে মমতা মঙ্গলবার নিমকাঠ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘আমরা অত ভিখারি নই। পকেটমারও নই, জোতদারও নই। আমরা পাহারাদার।’’ দিঘায় জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ যে পুরীর মন্দির থেকে নিম কাঠ এনে করা হয়নি, তা ওড়িশা সরকারের তরফ থেকে সোমবারই স্পষ্ট করে দেওয়া হয়। পুরীতে জগন্নাথের নবকলেবর নির্মাণের পরে যে নিমকাঠ উদ্বৃত্ত ছিল, সেই কাঠ দিয়েই দিঘার মন্দিরের জন্য বিগ্রহ তৈরি হয়েছে বলে পুরীর এক সেবায়েত দাবি করায় বিতর্ক ছড়িয়েছিল। পুরীর মন্দির থেকে নিমকাঠ অন্যত্র সরানোর ‘খবর’ অজস্র জগন্নাথভক্তের মনে এবং সাড়ে চার কোটি ওড়িশাবাসীর মনে গভীর আঘাত দিয়েছে বলে ওড়িশার আইনমন্ত্রী হরিচন্দ্রন মন্দির প্রশাসনকে লিখেছিলেন। নিমকাঠ মন্দির থেকে অন্যত্র পাঠানোর সঙ্গে এবং দিঘায় বিগ্রহ তথা মন্দির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে পুরীর মন্দিরের কারা জড়িত, তা খতিয়ে দেখতে মন্দির প্রশাসনকে অনুরোধ করেন হরিচন্দ্রন। আইনমন্ত্রীর চিঠি পেয়ে মন্দির প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ করে। যে সেবায়েত দাবি করেছিলেন যে, পুরীর মন্দিরের নিমকাঠ দিয়েই দিঘায় বিগ্রহ তৈরি করা হয়েছে, তাঁকে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি পুরীর মন্দিরের কাঠ দিঘায় পাঠানোর কথা অস্বীকার করেন। পুরীতে জগন্নাথের বিগ্রহ তৈরির কাজ যাঁরা করেন, সেই মহারানা সেবকদের সঙ্গেও মন্দির প্রশাসন কথা বলেন। তাঁরাও জানান যে, পুরীর মন্দিরে উদ্বৃত্ত হওয়া নিমকাঠ অন্য কোথাও পাঠানো হয়নি। তার পরেই আইনমন্ত্রীকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পরে হরিচন্দ্রন সোমবার জানান, পুরীর উদ্বৃত্ত নিমকাঠ দিঘায় ব্যবহৃত হয়নি।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement