ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন আগেই উত্তপ্ত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের কয়েকটি এলাকা। হিংসায় প্রাণ যায় তিনজনের।সেই অশান্তি পরিকল্পনা করেই করা হয়েছিল।সবটা যাচাই করে দেখতে এমনটাই জানতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীঘ্রই এই ব্যাপারে তথ্য প্রকাশ্যেও আনা হবে। সোমবার মুর্শিদাবাদে গিয়ে এমনটাই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দাবি, প্রথম থেকে সমস্ত বিষয় তিনি খতিয়ে দেখেছেন। তাতেই ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, পরিকল্পনামাফিক অশান্ত করা হয়েছে মুর্শিদাবাদকে। এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ্যে আনা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার দুপুরে বহরমপুরে পৌঁছোন তিনি। তারপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বলেন, ‘‘আমি কোনও সম্প্রদায়কে দোষ দেব না। কিছু মানুষ ধর্মীয় নেতা সেজেছেন। ধর্মের নামে তাঁরা বিধর্মের কথা বলেন। পালে বাঘ না পড়লেও বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করেন। তাঁরাই অশান্তি করেন। তাঁরা বাংলার শত্রু।’’ মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘মুর্শিদাবাদ একটা সময়ে বাংলার রাজধানী ছিল। এখানকার দুটো ওয়ার্ডে গোলমাল হয়েছে। দু’তিন জন লোক এই গোলমাল পাকাচ্ছে। কারা করিয়েছে, কী ভাবে করিয়েছে, আমি ক্রসচেক করছি। কিছু সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাতেও বিভাজন তৈরি হচ্ছে। কিছুটা বাকি আছে। পুরো তথ্য পেয়ে গেলে আমি তা প্রকাশ করব।’’ আগেই জানা গিয়েছিল, মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে জাফরাবাদে নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের পরিবার-সহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে দেখা করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু দিন কয়েক আগেই এলাকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছেন নিহত হরগোবিন্দ দাস ও চন্দন দাসের স্ত্রীরা। প্রথমে অপহরণের তত্ত্ব শোনা গেলেও পরে সল্টলেকে হদিশ মেলে তাঁদের। মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন বলা সত্ত্বেও এলাকায় ফেরেননি তাঁরা। এই ঘটনার নেপথ্যে বিজেপির হাত রয়েছে বলেই দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি ভেবেছিলাম ওদের সঙ্গে কথা বলব কিন্তু তা তো হচ্ছে না। বিজেপি ওদের সরিয়ে নিয়েছে।” তাঁর প্রশ্ন, “কেন এই লুকোচুরি? কী আড়াল করার চেষ্টা?” এরপরই বিজেপিকে নিশানা করে হুঙ্কার ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “সাম্প্রদায়িক অশান্তি যারা করে, আমরা তাঁদের ঘৃণা করি।” মমতা তাদের কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘ঘটনা যে দিন হল, তার পরের দিনই মানবাধিকার কমিশন চলে এল! কই মণিপুরে তো যায়নি! উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, দিল্লি, বিহারে তো যায়নি! এখানে হঠাৎ কী হল? পরিকল্পনা করে এটা করা হয়েছে। একটা সম্প্রদায় আর একটা সম্প্রদায়ের উপর ঝাঁপিয়েছে। উস্কানি দেওয়া হয়েছে। বাংলা এটা সহ্য করবে না।’’ মমতা বলেন, ‘‘আমি ১০ লাখ করে দুটো পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে আসতাম। আপনারা তাদের লুকিয়ে নিয়ে গেলেন কেন? এখন তাদের দিয়ে আমাকে গালাগাল দেওয়াচ্ছেন। আপনারা অশান্তি করবেন আর গালাগাল আমি শুনব? কেন বিএসএফ সে দিন গুলি চালাল? আমি মনে করি, গুলি না-চালালে পরের দিন ওই ঘটনা ঘটত না।’’ মুর্শিদাবাদের স্থানীয় সংগঠনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে মমতা বলেন, ‘‘এখানে অন্য সংগঠন আছে। তার নেতা আছেন। তিনি উস্কানি দেন। অশান্তির সময়ে ৪৮ ঘণ্টা তিনি আলো নিভিয়ে রেখেছিলেন। এটা করা যায় না। কী লুকোতে চেয়েছিলেন?’’ সাম্প্রদায়িক অশান্তি না করে দেশের নিরাপত্তার দিকে নজর দিক বিজেপি এবং কেন্দ্রীয় সরকার, চান মমতা। তাঁর কথায়, ‘‘আপনারা সীমান্তের বিষয়টা দেখুন। দেশকে বাঁচান। যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন, সেই পরিবারগুলোকে বিচার দিন। এটা নিয়ে রাজনীতি করবেন না। আমি তা সহ্য করব না। সাম্প্রদায়িক অশান্তি নিয়ে ঝামেলা না-করে সীমান্তে নজর দিন। আরও দায়িত্বশীল হোন। চেয়ারে থাকলে মানুষে মানুষে বিভাজন করা যায় না।’’ সোমবার ডুমুরজলায় থেকে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশে রওনা হন মুখ্যমন্ত্রী। ডুমুরজলায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। পহেলগাঁও জঙ্গি হামলা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে মমতা বলেন, ‘‘দেশে এখন যা চলছে, জাতীয় নিরাপত্তার যে ব্যাপার, আমরা বলেই দিয়েছি, তাতে আমাদের দল কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে থাকবে। কখনও ডিভাইড অ্যান্ড রুল করব না।’’ অভিযোগ, পহেলগাঁওয়ে পর্যটকদের ধর্মপরিচয় জিজ্ঞাসা করে বেছে বেছে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ইতিমধ্যে একাধিক পদক্ষেপ করেছে নয়াদিল্লি। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানিদের ভিসাও বাতিল করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আপাতত বন্ধ। আকাশসীমাও বন্ধ করা হয়েছে দুই তরফে। পাকিস্তান প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, তারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। সংঘাতের আবহে আমেরিকা, রাশিয়া, চিন এবং ইউরোপের দেশগুলি ভারত-পাক উত্তেজনা কূটনীতির মাধ্যমে প্রশমনের বার্তা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থে কেন্দ্রকে সহযোগিতা করার কথা জানালেন মমতা।