ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সোনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির বক্তব্য শুনতে চায় আদালত। সেই মর্মে তাঁদের নোটিস পাঠাল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। চলতি মাসেই ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় সনিয়া গান্ধি এবং রাহুল গান্ধি বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছিল ইডি। সেই চার্জশিটের ভিত্তিতে এ বার শুনানি শুরু করতে চায় আদালত। তাই সোনিয়া ও রাহুলের বক্তব্য শোনার জন্য তাঁদের নোটিস দিল আদালত। এছাড়াও চার্জশিটে নাম থাকা অন্য অভিযুক্তদেরও নোটিস পাঠিয়েছে দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালত। জানা গিয়েছে, বিশেষ বিচারক বিশাল গোগনে বলেছেন চার্জশিট গ্রহণের পর্যায়ে অভিযুক্তের তার বক্তব্য পেশ করার অধিকার রয়েছে। বিচারক বলেন, ‘মামলার যে কোনও পর্যায়ে অভিযুক্তের বক্তব্য পেশ করার অধিকার ন্যায়বিচারে প্রাণ সঞ্চার করে।’ আদালত জানিয়েছে চার্জশিটে যে সকল ভুলত্রুটি ছিল, সেগুলি সংশোধন করা হয়েছে। মামলাটি বিবেচনার পর্যায়ে রয়েছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অভিযুক্তদের তাদের বক্তব্য পেশ করার বিশেষ অধিকার রয়েছে।ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ২২৩ ধারার একটি নির্দিষ্ট শর্তে অভিযুক্তকে এই অনন্য আইনি সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। এই অধিকার তহবিল তছরুপ প্রতিরোধ আইনের বিধানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলেও জানিয়েছে আদালত। মামলার এই পর্যায়ে অভিযুক্তদের বক্তব্য পেশ করার অধিকার দেওয়া নিয়ে আপত্তি জানায়নি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটও। আদালতে ইডির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল। তিনি জানান ইডি ন্যায্য বিচারের নীতিকে সমর্থন করে। এই নোটিস জারির তারা বিরোধিতা করবে না।এপ্রিলের শুরুর দিকে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা করেছিল ইডি। বিশেষ বিচারক বিশাল গগনে সেই চার্জশিট পর্যালোচনা করেন। তার পর ১৫ এপ্রিল সেই চার্জশিট গৃহীত হয়। সনিয়া, রাহুল ছাড়াও চার্জশিটে নাম রয়েছে কংগ্রেস নেতা স্যাম পিত্রোদা, সুমন দুবের।ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার সূত্রপাত বিজেপির সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর করা মামলা থেকে। তাঁর অভিযোগ ছিল, ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্রের প্রকাশনা সংস্থা এজেএলের বাজারে কোটি কোটি টাকার দেনা ছিল। যার বেশির ভাগটাই কংগ্রেসের কাছ থেকে নেওয়া। ২০০৮ সালে সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই অবস্থায় সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে সনিয়া, রাহুল এবং শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থা। এর পর ন্যাশনাল হেরাল্ডের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি ইয়ং ইন্ডিয়ানের দখলে চলে আসে। কোটি কোটি টাকা দেনার বোঝাও চাপে তাদের ঘাড়ে। এর কিছু দিন পর ‘দেনার টাকা উদ্ধার করা সম্ভব নয়’ বলে কারণ দেখিয়ে কংগ্রেসের তরফে ঋণের টাকা মকুব করে দেওয়া হয়। স্বামীর যুক্তি, কংগ্রেস রাজনৈতিক দল। তাই তারা কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকে ঋণ দিতে পারে না। কারণ, তারা নিজেরা ঋণ দেয় না। ২০২১ সালে টাকা নয়ছয়ের তদন্ত শুরু করে ইডি। ইতিমধ্যেই এই মামলায় সনিয়া এবং রাহুলের কয়েকশো কোটি টাকা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়াও শুরু করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা।শুক্রবার আদালত জানিয়েছে, চার্জশিটে ইডি সনিয়া, রাহুল-সহ কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছে। এই মামলার শুনানির প্রয়োজন আছে। সেই কারণে সকলকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। আগামী ৮ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি। আদালত আরও মনে করে, এই মামলাটি নিয়ে বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে। এই পর্যায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলাটি আনুষ্ঠানিক ভাবে গ্রহণ করার আগে তাঁরা তাঁদের বক্তব্য জানাতে পারেন। এই অধিকার তাঁদের রয়েছে। সেই কারণে শুনানির প্রয়োজন। এই অধিকার কখনওই আর্থিক তছরুপ প্রতিরোধ আইনের বিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ নয়। আদালতের মতে, অভিযুক্তরা বক্তব্য জানালে তা কখনই ইডির তদন্তে কোনও প্রভাব ফেলবে না। ৮ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।