ব্রেন হেমারেজের পরও ৮৫ বছরের রোগীকে ঘরে ফেরাল মণিপাল

IMG-20250429-WA0161

কলকাতা: জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া এক বৃদ্ধ রোগী নতুন করে প্রমাণ করলেন, মনোবল ও আধুনিক চিকিৎসার যৌথ সম্ভবে বেঁচে ফেরা। ৮৫ বছর বয়সী, ওই রোগী দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালিসিস-নির্ভর অবস্থায় বেসরকারি হাসপাতাল মণিপাল ঢাকুরিয়ায় ভর্তি থাকেন। তখন তাঁর মস্তিষ্কে তীব্র রক্তক্ষরণ হচ্ছে।চিকিৎসকদের মতে, তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ছিল অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু চেতনা ছিল, কথা বলছেন, এমনকি সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতেও পারছেন—প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাড়ি ফেরার।
উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসানো, স্টেজ ৫ কিডনি রোগ এবং অতীতে একাধিকবার খিঁচুনি-জনিত কারনে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এই রোগী আগে থেকেই নানা জটিল শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। হঠাৎ একদিন অচেতন হয়ে পড়েন। হাসপাতালে আনার পর দেখা যায়, একটি চোখের পুতলি প্রসারিত—চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটি খুবই আশঙ্কাজনক লক্ষণ। এই অবস্থায় কনসালট্যান্ট, নিউরোসার্জারি চিকিৎসক নিরূপ দত্ত ও নেফ্রোলজি ও ট্রান্সপ্লান্ট ফিজিশিয়ান চিকিৎসক ঋতেশ কাউন্তিয়া এবং অ্যানাস্থেসিওলজি চিকিৎসক প্রখর জ্ঞানেশ ডিকমপ্রেসিভ ক্রানিওটমি অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাঁচানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ডাঃ নিরূপ দত্ত বলেন, “অস্ত্রোপচারটি সময়ের সঙ্গে লড়াই ছিল। রোগীর উচ্চ বয়স, কিডনির জটিলতা, রক্তপাত-প্রবণ ওষুধ এবং অচেতনতা—সব মিলিয়ে ঝুঁকি ছিল আকাশছোঁয়া। তবুও, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, উনি একটা সুযোগের যোগ্য। ভাগ্য ভালো, পরিবারও আমাদের সিদ্ধান্তে আস্থা রেখেছিলেন। আমরা বড় রক্তের জমাটটি সরিয়ে ফেলি এবং ভবিষ্যতের জন্য হাড়ের টুকরোটি পেটের চামড়ার নিচে সংরক্ষণ করি।”
ডাঃ ঋতেশ কাউন্তিয়া বলেন, “এত জটিল অবস্থায়ও নিয়মিত ডায়ালিসিস চালিয়ে যাওয়া ছিল একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। মস্তিষ্কে আঘাত, সংক্রমণ এবং কিডনির সমস্যা—তিনটি ক্ষেত্রেই যত্ন সহকারে চিকিৎসা চালানো দরকার ছিল। নিউরো, নেফ্রো এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার টিমের সমন্বিত প্রচেষ্টায় ধীরে ধীরে তিনি সাড়া দিতে শুরু করেন—প্রথমে চেতনা ফিরে আসে, পরে নির্দেশ মেনে চলতে পারেন, এবং ধীরে ধীরে কথা বলা শুরু করেন। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি ও সাপোর্টিভ কেয়ারের মাধ্যমে তিনি আজ সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতে পারছেন।”
ডাঃ প্রখর জ্ঞানেশ জানান, “তাঁর কিডনির কারণে অপারেশনের সময় ও পরে ওষুধের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রাখতে হয়েছে। সঠিক মাত্রায় ওষুধ ব্যবহার না করলে মস্তিষ্কের চিকিৎসা সম্ভব নয় আবার বেশির ওষুধ কিডনিকে ক্ষতি করতে পারত—এই সূক্ষ্ম ভারসাম্য বজায় রাখাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও, তাঁর মানসিক জোরই তাঁকে বাঁচিয়ে তুলেছে।”
দু’সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সহায়তায় দাঁড়াতে, নিজে নিজে শ্বাস নিতে এবং কথা বলতে সক্ষম হয়েছেন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement