জাতির অগ্রগতি ও সাফল্যের ভিত যুবসমাজের উপর নিহিত: প্রধানমন্ত্রী

IMG-20250426-WA0177

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে রোজগার মেলায় ভাষণ দেন এবং বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ও সংস্থায় নবনিযুক্ত ৫১,০০০-এরও বেশি তরুণদের নিয়োগপত্র বিতরণ করেন। সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে আজ থেকে ভারত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে এই তরুণদের জন্য নতুন দায়িত্বের সূচনা হল । তাদের এই দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো শক্তিশালী করা, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার করা, আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণে অংশ নেওয়া এবং কর্মীদের জীবনে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন আনা। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে তারা যদি সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে তবে তা ভারতের উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে ওঠার যাত্রায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মোদী জোর দিয়ে বলেন “যেকোনো জাতির অগ্রগতি ও সাফল্যের ভিত তার যুবসমাজের উপর নিহিত। যখন যুবসমাজ জাতি গঠনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তখন জাতির দ্রুত উন্নয়ন হয় এবং বিশ্ব মঞ্চে তার পরিচয় প্রতিষ্ঠা পায় ”। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, “ভারতের যুবসমাজ তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বের কাছে তাদের অপার সম্ভাবনা প্রদর্শন করছে”। সরকার প্রতিটি পদক্ষেপে দেশের যুবসমাজের জন্য কর্মসংস্থান এবং স্ব-কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি নিশ্চিত করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন দক্ষ ভারত, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া এবং ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো উদ্যোগগুলি যুবসমাজের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। এই প্রকল্পগুলির সাহায্য সরকার ভারতের যুবসমাজকে তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম প্রদান করছে। মোদী উল্লেখ করেন যে এই প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, এই দশকে, ভারতের যুবসমাজ প্রযুক্তি, ডেটা এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে দেশকে সামনের সারিতে নিয়ে গেছে। তিনি UPI, ONDC এবং GeM (সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস) এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন এই সাফল্য থেকে দেখা যায় যে যুবসমাজ কীভাবে ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরমূলক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে ভারত এখন রিয়েল-টাইম ডিজিটাল লেনদেনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং এক্ষেত্রে যুবসমাজের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বাজেটে ঘোষিত ম্যানুফ্যাকচারিং মিশনের লক্ষ্য হল ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে উৎসাহিত করা এবং ভারতের যুবসমাজকে বিশ্বব্যাপী গুনমানসম্মত পণ্য তৈরির সুযোগ প্রদান করা। এই উদ্যোগ কেবল দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ এমএসএমই এবং ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহায়তা করবে তা নয় বরং দেশব্যাপী নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে”। মোদী বলেন, আইএমএফ সম্প্রতি জানিয়েছে যে ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে থাকবে। এই প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হল আগামী দিনে সকল ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে, অটোমোবাইল এবং পাদুকা শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানিতে নতুন রেকর্ড অর্জন করেছে, যা তরুণদের জন্য উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। তিনি আরও বলেন যে, প্রথমবারের মতো খাদি এবং গ্রামীণ শিল্প থেকে উৎপাদিত পণ্য ১.৭০ লক্ষ কোটি টাকার টার্নওভার অতিক্রম করেছে। এ থেকে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। অভ্যন্তরীণ জল পরিবহনের সাম্প্রতিক সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের আগে অভ্যন্তরীণ জল পরিবহনের মাধ্যমে বছরে মাত্র ১৮ মিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন করা হত। এ বছর পণ্য পরিবহন ১৪৫ মিলিয়ন টন ছাড়িয়ে গেছে। তিনি এই সাফল্যের জন্য ভারতের ধারাবাহিক নীতি নির্ধারণ এবং এসংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, দেশে জাতীয় জলপথের সংখ্যা মাত্র ৫ থেকে বেড়ে ১১০-এরও বেশি হয়েছে। মোদী বলেন , “মুম্বই শীঘ্রই ওয়ার্ল্ড অডিও ভিজ্যুয়াল অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট সামিট (ওয়েভস) ২০২৫ আয়োজন করবে। এই অনুষ্ঠানটি যুবসমাজকে মূল কেন্দ্রবিন্দুতে স্থাপন করবে এবং তরুণ স্রষ্টাদের প্রথমবারের মতো নিজেদের সৃজনশীলতা প্রকাশের একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করবে। এই সম্মেলন মিডিয়া, গেমিং এবং বিনোদনের ক্ষেত্রে উদ্ভাবকদের জন্য তাদের প্রতিভা প্রদর্শনের জন্য একটি অভূতপূর্ব সুযোগ প্রদান করবে”। তিনি বলেন, যে বিনোদনমূলক স্টার্টআপগুলি বিনিয়োগকারী এবং শিল্প নেতাদের সংগে সংযোগ স্থাপনের সুযোগ পাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে এই অনুষ্ঠানের সময় আয়োজিত বিভিন্ন কর্মশালার মাধ্যমে যুবসমাজ এআই,এক্সআর সহ বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে পরিচিত হবে। মোদী বলেন”ওয়েভস ভারতের ডিজিটাল কন্টেন্ট ভবিষ্যতকে উজ্জীবিত করবে”। তিনি ভারতের যুবসমাজের অন্তর্ভুক্তির প্রশংসা করেন। সাম্প্রতিক ইউপিএসসি ফলাফলের উদাহরণ দিয়ে সেখানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মহিলাদের সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমলাতন্ত্র থেকে মহাকাশ এবং বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রেই দেশের নারীরা নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছেন। আমাদের সরকার স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বীমা, ব্যাংক এবং কৃষির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নের উপর নজর দিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে হাজার হাজার মহিলা এখন ড্রোন দিদি হিসেবে কাজ করছেন ও তাদের পরিবার এবং গ্রামের উন্নয়ন নিশ্চিত করছেন। মোদী আরও বলেন যে দেশে ৯০ লক্ষেরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে, যার মধ্যে ১০ কোটিরও বেশি মহিলা যুক্ত। এই গোষ্ঠীগুলিকে শক্তিশালী করার জন্য, সরকার তাদের বাজেট পাঁচগুণ বৃদ্ধি করেছে এবং ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জামানত-মুক্ত ঋণের ব্যবস্থা চালু করেছে। মোদী উল্লেখ করেন যে মুদ্রা যোজনার সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হলেন মহিলারা এবং দেশের ৫০,০০০ এরও বেশি স্টার্টআপের পরিচালক হিসেবে মহিলারা রয়েছেন। তিনি বলেন যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধরনের রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ভারতের উন্নয়নের সংকল্পকে শক্তিশালী করছে এবং কর্মসংস্থান ও স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য আরও সুযোগ তৈরি করছে।কর্মসংস্থান পত্র প্রাপ্ত যুবকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে ব্যক্তিরা যে পদ পেয়েছেন, তা তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার ফল। তিনি বলেন যে এখন সময় এসেছে তাদের জীবনের পরবর্তী পর্যায়গুলি কেবল নিজেদের জন্য নয়, জাতির জন্যও উৎসর্গ করার। তিনি বলেন জনসেবার মনোভাব সর্বাগ্রে থাকা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে যখন কেউ দায়িত্ব ও শ্রদ্ধার সঙ্গে কাজ করে, তখন তাদের প্রচেষ্টা দেশকে এক নতুন দিকে পরিচালিত করার শক্তি অর্জন করে।ব্যক্তিরা যখন দায়িত্বশীল পদে পৌঁছায়, তখন নাগরিক হিসেবে তাদের কর্তব্য এবং ভূমিকা আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে, এই বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন মোদী। তিনি চলতি প্রচারণা, ‘এক পেঢ় মা কে নাম’-এর উপর আলোকপাত করেন এবং প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং সেবার নিদর্শন হিসেবে সকলকে তাদের মায়ের নামে একটি গাছ লাগানোর জন্য উৎসাহিত করেন। তিনি নবনিযুক্তদের তাদের কর্মক্ষেত্রে এই অভিযানে আরও বেশি মানুষকে যুক্ত করার আহ্বান জানান। জুনে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস, সফল কর্মজীবনের পাশাপাশি সুস্থ জীবন শুরু করার এক দুর্দান্ত সুযোগ বলে উল্লেখ করে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে স্বাস্থ্য কেবল ব্যক্তির জন্যই অপরিহার্য নয়, বরং কর্মদক্ষতা এবং দেশের উৎপাদনশীলতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী নবনিযুক্তদের তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মিশন কর্মযোগী উদ্যোগকে কাজে লাগাতে উৎসাহিত করেন। তিনি বলেন যে তাদের কাজের উদ্দেশ্য কেবল পদমর্যাদা অর্জন নয় বরং ভারতের প্রতিটি নাগরিকের সেবা করা এবং দেশের অগ্রগতিতে অবদান রাখা। সিভিল সার্ভিস দিবসে প্রচারিত ‘নাগরিক দেবো ভব’ মন্ত্রটি স্মরণ করে এবং মোদী বলেন যে নাগরিকদের সেবা করা ঐশ্বরিক উপাসনার অনুরূপ। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী ১৪০ কোটি ভারতীয়ের স্বপ্ন এবং আকাঙ্ক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য যুবসমাজকে আহ্বান জানান।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement