অপরাধীদের রেয়াত নয়, হুঁশিয়ারি মোদীর
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় কড়া হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তাঁর হুঙ্কার, অপরাধীরা কেউ রেহাই পাবে না।মঙ্গলবার ভূস্বর্গে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়। সেই খবর পেয়ে সৌদি আরব সফর কাটছাঁট করে বুধবার দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী। দিল্লিতে পৌঁছেই নরেন্দ্র মোদি বলেন, অপরাধীরা রেহাই পাবে না। বুধবার সকালে বিমানবন্দরে নেমেই সৌদি আরব থেকে দিল্লি পৌঁছানোর পর প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে দিল্লি বিমানবন্দরেই একটি বৈঠক করেন। সন্ত্রাসবাদী হামলার খবর পেয়ে প্রধানমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন তাঁদের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তদের সকল সম্ভাব্য সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এই জঘন্য কাজের পিছনে যারা রয়েছে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। তাঁদের রেয়াত করা হবে না। তাঁদের দুষ্ট উদ্দেশ্য কখনও সফল হবে না। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার আমাদের সংকল্প অটল এবং এটি আরও শক্তিশালী হবে।’ কাশ্মীর নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির জরুরি বৈঠকে জঙ্গি হামলার ঘটনার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এ ছাড়া প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর রয়েছেন এই কমিটিতে। বুধবারের এই বৈঠকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও উপস্থিত ছিলেন। পহেলগাঁওয়ের হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে সৌদি আরব সফরে কাটছাঁট করে সকালেই দেশে ফেরেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। নয়াদিল্লিতে ফিরেই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ডোভাল এবং বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথও আলাদা করে ডোভালের সঙ্গে একটি বৈঠক সারেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বায়ুসেনার এয়ার চিফ মার্শাল এপি সিংহ এবং অন্য আধিকারিকেরা। সূত্রের খবর, কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে। মঙ্গলবার পহেলগাঁওতে জঙ্গিদের গুলিতে অন্তত ২৬ সাধারণ পর্যটকের মৃত্যুর পর থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে দেশবাসী। নিহতদের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গেরও তিন জন রয়েছেন। হামলার চক্রীদের বিরুদ্ধে প্রত্যাঘাতের দাবি উঠতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদীও আশ্বস্ত করেছেন, হামলায় জড়িত কাউকে রেয়াত করা হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে মঙ্গলবারই কাশ্মীরে পৌঁছে গিয়েছেন শাহ। সেখানে স্বজনহারাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। শাহও জানিয়েছেন, ভারত সন্ত্রাসের কাছে নত হবে না। এই নৃশংস জঙ্গি হামলার দোষীরা কেউ ছাড় পাবে না বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। বুধবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। কাশ্মীরে সন্ত্রাস-হামলা নিয়ে বুধবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারতের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া, জার্মানি, ইজরায়েলের মতো বেশ কয়েকটি দেশ। বুধবারই কাশ্মীরে যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেখানে শাহ বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ও উপ রাজ্যপালের সঙ্গে। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। মঙ্গলবারের এই হামলার দায় স্বীকার করেছে পাক জঙ্গিগোষ্ঠী লশকর-ই-ত্যায়বার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’। পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তান ইতিমধ্যে এই ঘটনার দায় এড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দাবি, “পহেলগাঁও হামলায় আমাদের কোনও হাত নেই।” বস্তুত, টিআরএফের উত্থান ২০১৯ সালে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলোপ হওয়ার পর। টিআরএফের জন্ম হয়েছিল কাশ্মীরি জঙ্গি শেখ সাজ্জাদ গুলের হাতে। সে সময় জম্মু ও কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’-র সদ্য অবলুপ্তি হয়েছে। ঠিক সেই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেই লশকরের ‘ছায়া সংগঠন’ হিসাবে উঠে আসে টিআরএফ। উপস্থিতি জানান দিতে সে সময় লশকর, জৈশ-ই-মহম্মদ-সহ একাধিক জঙ্গিগোষ্ঠীর থেকে এই সংগঠনে সদস্যদের নিযুক্ত করা হয়। এদের মূল লক্ষ্য ছিল, কাশ্মীরের স্থিতাবস্থায় বিঘ্ন ঘটানো এবং ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলা।