দলকে কার্যত জানতে না দিয়ে বেশ কয়েকটি জেলা পরিষদে মেন্টর এবং কো-মেন্টর পদের নিয়োগ তথা রদবদল করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পদক্ষেপের সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হল,রাজ্য সংগঠনে কাউকে কিছু না জানিয়ে নবান্ন থেকে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া। সূত্রের দাবি, এ ব্যাপারে রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি বা সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারও কিছু জানতেন না। পঞ্চায়েত দফতরের মাধ্যমে এই বিজ্ঞপ্তি তৈরি করে জেলায় পাঠানো হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ওই সব জেলার মন্ত্রীরা অনেকেই তা জানতে পারেননি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে,নতুন করে কিছু জেলায় মেন্টর ও কো-মেন্টর পদে রদবদলের অর্থ হল,যাঁরা সংগঠনে পদ পাবেন না, তাঁদের আগে থেকে ঠান্ডা রাখা। তাই এবার ধরে নেওয়া যেতে পারে, খুব শিগগিরি জেলা সভাপতি পদে রদবদলের তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হবে। এদিকে তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর অনুসারে, এই প্রক্রিয়া খুবই অর্থবহ। জেলা সংগঠনে তথা জেলা সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক পদে যাঁদের নিয়োগ করা হয় না বা যোগ্য মনে করা হয় না, তাঁদেরও সঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা দিতে জেলা পরিষদে মেন্টর ও কো-মেন্টর পদ তৈরি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এঁরা জেলা পরিষদের দফতরে অফিস পান, ও একটি গাড়িও পান। অর্থাৎ কেউ যেন নিজেকে ব্রাত্য বলে মনে না করেন।
সূত্রের খবর অনুসারে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় মেন্টর করা হয়েছে প্রবীণ নেতা দীনেন রায়কে। কো-মেন্টর করা হয়েছে প্রদ্যুৎ কুমার ঘোষকে। বাদ যায়নি নদিয়াও। কারণ, এই জেলা বরাবরই তৃণমূলের অন্তর্কলহের জন্যই সংবাদ শিরোনামে থেকেছে। সেখানে এবার মেন্টর পদে কোনও বদল করা হয়নি। কো-মেন্টর করা হয়েছে নীলিমা নাথ মল্লিককে। ঝাড়গ্রামে মেন্টর করা হয়েছে স্বপন পাত্রকে। কো-মেন্টর করা হয়েছে প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামল মাহাতোকে। বাঁকুড়া জেলায় মেন্টর করা হয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ খানকে। আর কো-মেন্টর করা হয়েছে মৃত্যুঞ্জয় মুর্মুকে। সূত্রে খবর, আরও কিছু জেলায় মেন্টর ও কো-মেন্টর নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রস্তুত করা হচ্ছে। তৃণমূলে জেলা সভাপতি পদে রদবদল হওয়ার কথা হাওয়ায় ভাসছে অনেকদিন ধরে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কিছুদিন আগে একবার বলেছিলেন, এ বিষয়ে তাঁর মতামত ও তালিকা তিনি তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরে দলের কেউ কেউ দাবি করছিলেন, রদবদলের ব্যাপারে দিদি ও অভিষেকের মধ্যে মতান্তর রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে দেরি হচ্ছে।
তবে জেলা সভাপতি পদে বদলের পরেই ব্লক স্তরে সংগঠনে তথা ব্লক সভাপতি পদে রদবদল হওয়ার কথা। এই রদবদলের জন্য প্রত্যেক বিধায়কের থেকে ব্লক-প্রতি তিন জনের নাম চেয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আর এই প্রসঙ্গে এ খবরও মিলছে,অন্তত ১৭টি জেলায় জেলা সভাপতি পদে বদল হতে পারে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের জেলা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে দক্ষিণের কিছু জেলা। উত্তরবঙ্গে আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুর ও মালদহে জেলা সভাপতি বদল করা হতে পারে। দক্ষিণবঙ্গে মুর্শিদাবাদ, রানাঘাট, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর ইত্যাদি জেলায় সভাপতি পদে বদল করা হতে পারে।
জেলা সভাপতি পদে এই রদবদলের পরেই ব্লক স্তরে সভাপতি বদলের তালিকা প্রকাশ করা হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যস্তরে সংগঠনেও কিছু বদল করা হতে পারে।