মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সাংবাদিক বৈঠকে তাঁদের উদ্দেশে জানান, ”আমরা আমাদের কাজ করছি। সেটা করতে দেওয়া হোক। চাকরিহারাদের ধৈর্য ধরতে হবে। অনুরোধ করব, আপনারাও আপনাদের কাজ করুন।তাঁর কথায়, যে পরিস্থিতি তৈরি করেছেন চাকরিহারারা তাতে রিভিউ পিটিশনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর সেটার জন্য তাঁরাই দায়ী থাকবেন। চাকরিহারাদের ব্রাত্যর অনুরোধ, এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে আপনাদেরই সমস্যা বাড়ে।প্রশ্নের উত্তরে ব্রাত্য বলেন, “তালিকা তো সুপ্রিম কোর্ট দিয়ে দিয়েছে। আমাদের তো চিহ্নিত করার কিছু নেই। সুপ্রিম কোর্টই জানিয়েছে। সেটি প্রকাশ্যেই (পাবলিক ডোমেন)-এই রয়েছে।তালিকা কেন প্রকাশিত হয়নি সেই বিষয়ে তিনি জানান, আইনি পরামর্শ না-পাওয়ার কারণেই তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কাউকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়নি, কাজে যোগ দিতে কারও সমস্যা হয়নি, কারও বেতন বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর উত্তর, ”সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা যে নির্দেশ দিয়েছেন তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।এদিন ব্রাত্য বলছেন, ইতিমধ্যে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে, আগামী দিনে আরও একাধিক বৈঠক করতে তাঁরা রাজি। কিন্তু তিনি চান আগে চাকরিহারারা দ্রুত সম্ভব আন্দোলন থেকে সরে আসুন।শিক্ষকদের উদ্দেশে ব্রাত্যের বার্তা, “আমরা আইনি পরামর্শ নিয়ে প্রতিটি ধাপ এগোচ্ছি। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন। আপনারা গিয়ে আপনাদের কাজ করুন।” এমন কিছু করবেন না যাতে রিভিউ পিটিশন দুর্বল হয়। আইনি পথেই যা করার করা হবে।’ সাংবাদিক সম্মেলন থেকে এমনই বার্তা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর। পাশাপাশি বিরোধীদেরও বিদ্ধ করে বলেন,’কারা চাকরি খেয়েছে আপনারা জানেন। আমরা আপনাদের জন্যই কাজ করে চলেছি। সরকার আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। শিক্ষকরা শিক্ষকদের কাজ করুক।’ এখানেই শেষ নয়, এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে ব্রাত্য বসু এও বলেন,‘আমরা রিভিউ পিটিশন করছি। তাই এমন কোনও কিছু করা উচিত নয় যাতে আপনাদের রিভিউ পিটিশনকে দুর্বল করে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘিত হয় কিংবা আপনাদের বা আমাদের আদালত অবমাননা না হয়, তা আপনাদের বজায় রাখতে অনুরোধ করছি। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে যোগ দিতে অনুরোধ করছি উপযুক্ত শিক্ষকদের। বেতনের বিষয়ে আমাদের দফতর কাজ করে যাচ্ছে। এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমরা নিচ্ছি। আগামিকালও ডিভিশন বেঞ্চে এসএসসির মামলা রয়েছে। আপনাদের জন্যই এসএএসসি লড়ছে। একমাত্র সরকারই আপনাদের পাশে রয়েছে।পাশাপাশি তিনি জানান,যে কোনও তালিকা প্রকাশ করা হবে না। এক্ষেত্রে অজুহাত,সুপ্রিম কোর্ট কোনও তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেয়নি। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে যে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত ‘স্বচ্ছ’ শিক্ষকরা সেক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট নির্দেশিকার ভিত্তিতে কাজে ফিরবেন তা নিয়েই। আন্দোলনরত শিক্ষক শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের দাবি তারা বেতন নিয়ে আন্দোলন করছেন না। সুপ্রিম কোর্টের কথা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বরের পর তাদের কাজ থাকবে না। তারা যোগ্য, কেন তাদের ফের পরীক্ষায় বসে তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে হবে তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। কিন্তু শুধু মৌখিক আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হল না, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে সোমবার। ‘যোগ্য-অযোগ্যে’র কোনও তালিকাই প্রকাশিত হয়নি। আর কথা দিয়ে কথা না রাখায় এসএসসি আর মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ভবনের সামনে রাতভর ধরনায় বসে রইলেন ‘যোগ্য’ শিক্ষকরা। ভুখা পেটে সকালেও চলছে একরোখা প্রতিবাদ। তাঁদের ঘেরাওয়ের মাঝে পড়ে নিজেদের দপ্তরে ‘বন্দি’ এসএসসি এবং পর্ষদের আধিকারিকরাও। শোনা যাচ্ছে, সকালে ডিরোজিও ভবন ও আচার্য সদনে চা নিয়ে যেতেও বাধা দেওয়া হয়েছে প্রতিবাদীদের তরফে। যুক্তি একটাই, তাঁদের পেটের ভাত জোগানোর রাস্তা প্রায় বন্ধ হয়েছে, অভুক্ত থেকে তাঁদের জ্বালা বুঝুন অপর পক্ষ।