সল্টলেকে ধরনা অব্যাহত ‘যোগ্য’ শিক্ষকদের

IMG-20250422-WA0320

কলকাতা: এসএসসি ভবনের বাইরে বিক্ষোভে চাকরিহারা শিক্ষকেরা। একটাই পণ, হকের চাকরি না নিয়ে বাড়ি ফিরবেন না। সোমবার দুপুর থেকে যে অবস্থান শুরু হয়েছে, মঙ্গলবার সকালেও তা একই অবস্থায় আছে। আচার্য সদনের বাইরে দফায় দফায় উঠছে স্লোগান। সোমবার তাঁরা বারবার আবেদন করেছিলেন, স্কুল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান যেন একবার বাইরে আসেন। তবে রাত পেরলেও বাইরে আসেননি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার। সাত সকালে তাঁর জন্য চা আসতেই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন চাকরিহারারা।অভিযোগ, রাতে তাঁদের একটু জল পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমনকী টয়লেট পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সকালে চাকরিহারা আন্দোলনকারীরা জানান,’আমরা রাত জেগে রাস্তায় বসে আছি, আর চেয়ারম্যান ভিতরে আরামে ঘুমোচ্ছেন। আমাদের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না কেউ।এই পরিস্থিতির মধ্যে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ হঠাৎ দেখা যায়, এক ব্যক্তি চায়ের ফ্লাস্ক ও মাটির ভাঁড় নিয়ে এসএসসি ভবনের দিকে যাচ্ছেন। বুঝতে অসুবিধা হয়নি, চেয়ারম্যান ও আটকে থাকা অন্যান্য আধিকারিকদের জন্য ওই চায়ের ব্যবস্থা। আর তা দেখেই ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন চাকরিহারারা। সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান গেটের দিকে। ওই ব্যক্তিকে আটকাতে না পারলেও হাত থেকে টেনে মাটিতে ফেলে ভেঙে দেন চায়ের ভাঁড়। এর পাশাপাশি বাইরে আন্দোলনকারীরা বলতে থাকেন, ‘কোনও লজ্জা নেই। কীভাবে চা খায়! আমাদের তো একটু জল পর্যন্ত জুটছে না।’ সোমবার রাতেও দেখা গিয়েছে এমন ছবি। এ দিন রাতে এসএসসি ভবনে খাবার অর্ডার আসছিল। ঢুকছিল পিৎজা সহ বিভিন্ন খাবারের থালি। তবে ভিতরে পৌঁছয়নি সেই খাবার। তার আগেই সেই খাবার মাটিতে ফেলে দেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ক্ষুব্ধরা প্রশ্ন তোলেন,তাঁদের পেটে ভাত নেই। তাঁরা খেতে পাচ্ছেন না। অথচ সেই খাবার এসএসসি ভবনের কর্মীরা খাবেন? এরপরই নষ্ট করে দেন তাঁরা। পা দিয়ে মাড়িয়ে খাবার নষ্ট করা হয়। এই ছবি দেখে কারও বুঝতে অসুবিধা হয়নি মানুষের রাগ-ক্ষোভ কোন পর্যায়ে পৌঁছলে তবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আন্দোলনকারীদের গো-ব্যাক স্লোগানের মুখে পিছু হটতে হল পুলিশ আধিকারিকদেরও।স্কুল সার্ভিস কমিশনের দফতরে রাতভর আটকে চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সহ ২৫ জন। এদিকে মঙ্গলবার সকালে পুলিশ এসএসসি দফতরের ভিতরে ঢুকলে গেলে এবার বাধা দেওয়া হল আন্দোলনকারীদের তরফ থেকে। কারণ, আন্দোলনকারীরা আশঙ্কা করছেন, হয়তো পুলিশ কোনওভাবে চেয়ারম্যানকে দফতর থেকে বাইরে বের করে নিয়ে যেতে পারে। আর সেই কারণেই পুলিশের কোনও আধিকারিক এসএসসি ভবনের সামনে গেলেই, তাঁকে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে ফিরে যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে।মঙ্গলবার বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিককে চাকরিহারাদের তরফ থেকে এ প্রশ্নও করতে শোনা যায়,’আপনি কাকে বাঁচাতে এসেছেন স্যার? আমরা ভাল করে বলছি স্যার ফিরে যান। আপনি গিয়ে আপনার অফিসারকে জানিয়ে দিন।’ যদিও ওই পুলিশ কর্তার বক্তব্য,’আমি বাইরে থেকে ভেতরে ঢুকছি না, আমি দফতরের ভেতরেই ছিলাম।’ শেষমেশ আন্দোলনের মুখে পড়ে বাধ্য হয়েই ফিরত চলে যান ওই পুলিশ আধিকারিক। পাশাপাশি যে ২৫ জন্ আটকে তাঁদের খাবার দিতে দেওয়া হচ্ছে না কেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন তোলা হয় পুলিশের তরফ থেক। সঙ্গে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়, এখানে জড়িয়ে রয়েছে মানবাধিকারের প্রশ্ন। এরপরই আন্দোলনকারীদের কাছে পুলিশের আর্জি, ‘পুলিশের কাজে বাধা দেবেন না, জল-খাবার আটকাবেন না।মঙ্গলবার আন্দোলন চলাকালীন পুলিশকে ঘিরে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান ওঠার পর বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসিপি অনীশ সরকার আন্দোলনকারীদের বার্তা দেন, এই ধরণের কাজ আইনসম্মত নয়। তাঁর দাবি, এসএসসি ভবনে চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার সব যাঁরা আটকে আছেন, তাঁদের খাবার, জল দিতে দেওয়া হচ্ছে না। সেক্ষেত্রে মানবাধিকারের একটা প্রশ্ন ব্যাপার আছে। পাশাপাশি, পুলিশকে কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে না বলেও দাবি করেন তিনি। সঙ্গে এও জানান,’শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে কোনও আপত্তি নেই। তবে কাল থেকে পুলিশ অফিসারদের ধাক্কা দেওয়া হয়েছে, আটকানো হয়েছে। খাবার-জল আটকানো হচ্ছে। পুলিশকে যদি এভাবে কর্তব্য থেকে বিরত করা হয়, তাহলে সেটা আইনসম্মত হবে না।’এরপরই পুলিশের আর্জি, পুলিশকে বাধা দেবেন না। পুলিশ নিজের কাজ করছে। সেটা ঠিক হচ্ছে না। পুলিশকে যেন হেনস্থা না করা হয়।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement