শালবানিতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস মুখ্যমন্ত্রীর

IMG-20250421-WA0248

পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সজ্জন জিন্দালের উপস্থিতিতেই সোমবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চ থেকে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ১৬০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্ল্যান্টের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রকল্পকে ‘ল্যান্ডমার্ক’ প্রজেক্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, ১৫ হাজার মানুষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কর্মসংস্থান হবে এই প্রকল্পে। এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের জেরে রাজ্যের ২৩ জেলার মানুষই উপকৃত হবেন বলে দাবি তাঁর। জিন্দাল গোষ্ঠীর পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এটা ল্যান্ডমার্ক প্রোজেক্ট। আমি জিন্দাল পরিবারকে ধন্যবাদ জানাব। পূর্ব ভারতে এমন প্রকল্প নেই। বিশেষ ইকো ফ্রেন্ডলি প্রজেক্ট, দূষণ হবে না। ২৩ জেলাই এর জেরে উপকৃত হবে। রাজ্য সরকার এখান থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেবে। প্রায় ১৫ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে।’ এই পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধনের পরই রাজ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের পরিস্থিতি তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে লোডশেডিং হয় না বলেও জানিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্যে লোডশেডিংয়ের সমস্যা পুরোপুরি মিটে গিয়েছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাড়লে বিদ্যুতের সরবরাহ আরও বাড়বে। এতে বিদ্যুতের দাম কমবে।’ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলার ঐতিহাসিক প্রকল্প। শালবনির তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে এ রাজ্যের ২৩ জেলাই উপকৃত হবে। ১৫ হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হবে। আগামিকাল সোলার প্ল্যান্টের উদ্বোধন করব। আগে বলা হত, লোডশেডিংয়ের সরকার, আর নেই দরকার। এখন ২৪ ঘণ্টাই বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আরও দুটো তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র হবে জিন্দলদের।’’ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘বাংলায় ছ’টি ইকোনমিক করিডর হয়েছে। শুধু পশ্চিম মেদিনীপুরেই ৩৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। ডেউচা-পাঁচামিতে বিশাল কোল ব্লক তৈরি হচ্ছে। ১ লক্ষ কর্মসংস্থান হবে। ৩০ তারিখ জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হবে দিঘায়। পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে পাঁচটি বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করবে।’’ বিরোধীদের বিরুদ্ধেও তোপ দাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ”যারা বলছেন, কিছু হচ্ছে না, তারা নিজের চোখে দেখুন কী ছিল আর কী হয়েছে। এখানে মনে আছে, জিন্দলদের সিমেন্ট কারখানারও উদ্বোধন করেছিলাম আমি। এখানে এখন কাজ চলছে। বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে কত প্রস্তাব এসেছিল, কত কার্যকর হয়েছে। সেসব হিসেব আমি দিয়েছি। ১৯ হাজার কোটি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছিল। ১৬ হাজার কোটির কাজ চলছে। বাকি প্রকল্পের কাজও দ্রুত শুরু হবে। তাই বলছি, আমার সমালোচনা করুন, কিন্তু অবহেলা করতে পারবেন না। আমরা কথা নয়, কাজে বিশ্বাস করি।ডাক্তার দেবী শেঠি কথা দিয়েছিলেন আমাদের সঙ্গে কাজ করবেন। সেইমতো কাজ শুরু করেছেন রাজারহাটে একটি হাসপাতালের, আমরা শিলান্যাস করব।” অনুষ্ঠানে সজ্জন জিন্দাল বলেন, ‘‘শালবনিতে গত ১০ বছরে অনেক উন্নতি হয়েছে। দেখে মনে হয়, এ রকমই হওয়া উচিত। এখানকার জমি কৃষকদের। তাই তাঁরা যাতে উপকৃত হন, সেটা আমাদের দেখতে হবে। দিদিও আমাকে সে কথা বার বার বলেছেন। এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনও দূষণ হবে না, এটা আমরা নিশ্চিত করব। এই রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। তা মাথায় রেখেই এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র।’’ জিন্দাল আরও বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের উন্নতিতে দিদি অনেক কাজ করছেন। পশ্চিমবঙ্গের উন্নতি হলে গোটা দেশের উন্নতি হবে। সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি।’’ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি শালবনিতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তুলছে জিন্দাল গোষ্ঠী। সেই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে একটি স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার গড়ে তোলার জন্য জিন্দাল গোষ্ঠীকে অনুরোধ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার সাহায্য করবে বলেও জিন্দালদের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাওয়ার প্ল্যান্ট উদ্বোধনের পাশাপাশি রাজ্যের বিভিন্ন প্রকল্পের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে ৯টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হয়েছে। ৬টি ইকোনমিক করিডর হচ্ছে। আরও ৫টি বড় কোম্পানি আসছে। পশ্চিমবঙ্গকে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল গেটওয়ে’ হিসেবেও অভিহিত করেছেন মমতা। সভা থেকে তাঁর বার্তা, আবার ট্রেনিং সেন্টার হবে শালবনিতে। প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে স্থানীয় যুবক-যুবতীদের। এ দিন এই অনুষ্ঠানে জিন্দাল গ্রুপের কর্ণধার সজ্জন জিন্দাল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, সাংসদ দেবও উপস্থিত ছিলেন। সকলেই রাজ্যে ‘শিল্প বান্ধব’ পরিবেশের কথা তুলে ধরেছেন।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement