ওয়াকফ-হিংসায় উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট, আগামীকাল ফের শুনানি

IMG-20250416-WA0213

ওয়াকফ আইন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সহ নানা রাজ্যে অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। সেই অশান্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল সুপ্রিম কোর্ট। বুধবার এই আইনের বৈধতা সংক্রান্ত মামলার শুনানি ছিল। সেই শুনানিতেই ওয়াকফ-হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। তাঁর পর্যবেক্ষণ, অবিলম্বে হিংসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। চলতি মাসের গোড়ায় সংশোধিত ওয়াকফ আইন পাশ হয় সংসদের উভয় কক্ষে। সেই আইন পাশ হওয়ার পরই দেশের একাধিক রাজ্যে ওই আইনের প্রতিবাদে অশান্তির অভিযোগ উঠছে। প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘একটা বিষয় খুবই উদ্বেগের, তা হল হিংসা। বিষয়টি বিচারাধীন, আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’ অবিলম্বে হিংসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বুধবার থেকে সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা একাধিক আবেদনের শুনানি শুরু হয়েছে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বে বিচারপতি সঞ্জীব কুমার এবং বিচারপতি কে ভি বিশ্বনাথনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে।তবে এদিন ওয়াকফ আইন নিয়ে অন্তর্বর্তী আদেশ দেয়নি সুপ্রিম কোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টোয় ফের এই মামলার শুনানি হবে। আজ প্রস্তাবিত অন্তর্বর্তীকালীন রায়ের বিষয়ে সব পক্ষের মতামত শুনে রায় দেবে আদালত।
বুধবার ওয়াকফ আইন নিয়ে শুনানি চলাকালীন কেন্দ্রের আইন নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলে শীর্ষ আদালত। ওয়াকফ বোর্ডের ২২ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৮ জন কেন মুসলিম, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। এতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার সঙ্গে কার্যত বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার। সেই নিরিখে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চে মামলার শুনানি হওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মেহতা। এতে প্রধান বিচারপতি বলেন, “বিচারপতির আসনে যখন বসি আমরা, ধর্ম থাকে না আমাদের। আমাদের কাছে সবপক্ষই সমান।”। এর পরই প্রধান বিচারপতি জানতে চান, “তার মানে কি বলতে চাইছেন, হিন্দুদের দাতব্য ট্রাস্টের বোর্ডে মুসলিমদের জায়গা হবে? প্রকাশ্যে বলুন।” প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, “২৬ নং ধারা ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলে। এটা সব সম্প্রদায়ের জন্য প্রযোজ্য।” এদিনই অন্তর্বর্তী রায় দেওয়ার কথা বলতে শোনা যায় প্রধান বিচারপতিকে। কিন্তু মেহতা আরও একটি দিন সময় চান। সরকারের বক্তব্য আরও একদিন শোনা হোক বলে আবেদন জানান তিনি। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় এদিন আইনজীবীরা জানান, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে নিয়ম আজকের নয়, বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। কোনও রকম আলাপ-আলোচনা না করে সংশোধনী বিল আনায় নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তাঁদের অধিকারে হস্তক্ষেপ করা হবে। আদৌ এমন অধিকার আদৌ কেন্দ্রীয় সরকারের রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন ওয়াকফ বিরোধী আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয়কুমার এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চে ওয়াকফ বিরোধী মোট ৭৩টি আবেদনের শুনানি চলছে। বুধবার আবেদনকারীদের পক্ষে উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল জানান, শুধুমাত্র মুসলিমরাই ওয়াকফ তৈরি করতে পারবে, সংশোধিত আইনের এই বিধানটি যুক্তিযুক্ত নয়। আরও এক সিনিয়র আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি, মামলাটি হাইকোর্টে না পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেন। তিনি জানান এই আইনের সর্বভারতীয় প্রভাব রয়েছে। আবেদনকারীদের পক্ষের আরও এক সিনিয়র আইনজীবী হুজেফা আহমাদি যুক্তি দেন, ওয়াকফ-বাই-ইউজ়ার একটি প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রীতি এবং এটা কেড়ে নেওয়া যায় না।অন্য দিকে আইনটির পক্ষে কেন্দ্র যুক্তি দেয়, যৌথ সংসদীয় কমিটির ব্যাপক পর্যালোচনা করেছে এই আইন। তারা ৩৮টি বৈঠক করেছে। ৯৮ জন সাক্ষীর বক্তব্য শুনেছে। তার পরই পাশ হয়েছে সংশোধিত ওয়াকফ আইন ২০২৫। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জানান, সংসদে বিলটি পাশ হওয়ার আগে দুই লক্ষেরও বেশি স্মারকলিপি বিবেচনা করা হয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement