পার্টি কংগ্রেস শেষ হয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক দিন হল। এর মধ্যেই রাজ্যে সামনে এসেছে একের পর এক জ্বলন্ত ইস্যু। কিন্তু এত ইস্যু থাকা সত্ত্বেও শীতঘুমেই রয়েছে সিপিএম। চাকরি বাতিল ও মুর্শিদাবাদ ইস্যুতেও কি দল নিষ্ক্রিয় থাকবে? এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিপিএমের অন্দরে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। সেই ইস্যুতে উত্তাল রাজ্য। প্রতিবাদী শিক্ষকদের উপরে পুলিশি নির্যাতনও চলেছে। কিন্তু সেসব নিয়ে সিপিএমের আন্দোলনের ঝাঁঝ কোথায়? এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরে। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদ। সেই ইস্যুতেও তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। বিজেপি প্রায় প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে। কিন্তু এত জ্বলন্ত বিষয় হাতের কাছে থাকা সত্ত্বেও তেড়েফুঁড়ে আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে না বিরোধী দল সিপিএমকে। আর এই নিয়েই প্রশ্ন উঠছে লাল শিবিরে।
পরিস্থিতির নিরিখে সিপিএমের বড় অংশই অবশ্য ময়দানে নেমে শোরগোল ফেলতে এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে সম্মুখ সমরে যেতে আগ্রহী। কিন্তু দলের তরফে সে ভাবে সমন্বয় হচ্ছে না। যদিও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের যুক্তি, আর জি কর-কাণ্ডের মতো নিয়োগ-দুর্নীতির ক্ষেত্রেও তাঁরা শিক্ষকদের প্রতিবাদকে হাইজ়্যাক করতে চান না। তবে সিপিএমের একাংশ মনে করছে, চাকরি বাআতিল ইস্যুকে হাতিয়ার করে তৃণমূলের ওপর চাপ তৈরি করা যায়। সেক্ষেত্রে মানুষের সমর্থন তাদের দিকে আসতে পারে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি দল নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে? যদিও সেকথা মানতে নারাজ আলিমুদ্দিন। সিপিএমের প্রথম সারির নেতৃত্বের বক্তব্য, আন্দোলন যে হচ্ছে না, সেটা বলা যাবে না। শিক্ষক, ছাত্র, আইনজীবী সংগঠন রাজ্যের নানা জায়গায় সক্রিয় ভাবেই প্রতিবাদ, আন্দোলন করছেন। তবে শিক্ষকদের আন্দোলনে রাজনীতির রং লাগুক, সেটা দল চায় না। মানুষের জীবন-জীবিকা, দৈনন্দিন সমস্যার প্রশ্নে নানা ভাবে দল পথে আছে বলেই মনে করছে সিপিএমর প্রথম সারির নেতৃত্ব। পরের বছরেই রাজ্যে রয়েছে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে সিপিএম ঝিমিয়ে পড়েছে বলেই মনে করছেন অনেকেই। আগামী ২০ এপ্রিল ব্রিগেড সমাবেশের ডাক দিয়েছে সিপিএম। সেই ব্রিগেডের মাঠ ভরাতে দলের যুবকর্মীদের আহ্বানও জানানো হয়েছে। ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক তথা সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ও ব্রিগেড ভরানোর ডাক দিয়েছেন। সিপিএমের ব্রিগেড মানেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। জ্যোতি বসু বা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাম জমানাতে তো বটেই, ক্ষমতা হারানোর পর সীতারাম ইয়েচুরির সময়কালেও সিপিএমের ব্রিগেডে ভিড় জমেছে। কিন্তু এমুহূর্তে রাজ্য রাজনীতিতে ক্রমশ বিলীয়মান দশার কারণে ২০ তারিখের ব্রিগেডে ভিড় কতটা হবে, তা নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে সংশয় প্রকাশ করেছেন বহু সিপিএম নেতাই। তার ওপর জ্বলন্ত ইস্যু হাতে পেয়েও যেভাবে সিপিএম নিষ্ক্রিয় মনোভাব দেখাচ্ছে, তাতে দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।