সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। সেই অশান্তির মাঝে বাবা-ছেলেকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই জোড়া খুনের তদন্তে নেমে দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের বীরভূম ও সুতি এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয়েছে। মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠক করে এমনটাই জানান এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম কালু নাদাব ও দিলদার নবাব। তারা সামশেরগঞ্জের জিগরি এলাকার বাসিন্দা। সম্পর্কে ভাই। গোপন সূত্রের খবর পেয়ে একজনকে বীরভূমের মুরারই ও অন্যজনকে সুতির বাংলাদেশ বর্ডার এলাকা থেকে গ্রেফতারকরা হয়েছে। ধৃতরা বাংলাদেশ পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিল। জোড়া খুনের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে সোমবারই জানিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের এডিজি (আইনশৃঙ্খলা) জাভেদ শামিম। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, দোষীদের কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না। জাভেদের হুঁশিয়ারির এক দিন পরেই দু’জনের গ্রেফতারির কথা জানাল পুলিশ। সুপ্রতিম সরকার এদিন বলেন, ‘‘রাতভর অভিযান চালানো হয়। এক জনকে ধরা হয়েছে বীরভূম থেকে। অন্য জনকে মুর্শিদাবাদ থেকে।’’ পাশাপাশি, মুর্শিদাবাদে অশান্তির ঘটনাতেও ধরপাকড় জারি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুপ্রতিম। পুলিশ সূত্রে খবর, এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ানের ভিত্তিতে দু’জনের জড়িত থাকার খবর মিলেছিল জোড়া খুনের ঘটনায়। এর পরেই দু’জনের মোবাইল টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করা শুরু করে পুলিশ। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, এক জন বীরভূমের মুরারইয়ে রয়েছেন। সেইমতো সোমবার রাতে অভিযান চালানো হয় সেখানে। ধরা পড়েন এক অভিযুক্ত। এর পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আর এক জনের হদিস মেলে। তাঁকে গ্রেফতার করা হয় মুর্শিদাবাদের সুতি থেকে। দু’জনে সম্পর্কে ভাই। উল্লেখ্য, ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে প্রতিবাদের নামে তাণ্ডব শুরু হয় মুর্শিদাবাদে। অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে ওই জেলার বিভিন্ন এলাকা। পুলিশ-জনতা খণ্ডযুদ্ধে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেই অশান্তির সময় সামশেরগঞ্জে বাড়ি থেকে টেনে এনে বাবা-ছেলেকে খুনের অভিযোগ ওঠে একদল দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। সেই ঘটনায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে দু’জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এদিকে শান্ত হতে শুরু করেছে মুর্শিদাবাদ। সোমবার থেকেই শান্তি ফিরতে শুরু করেছিল। তবে আতঙ্ক এলাকায় কাটেনি। মঙ্গলবার ১লা বৈশাখেও পুলিশি টহল জারি ছিল। চলে রুটমার্চও। ব্লক স্তর থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত, এমনকি পাড়ায় পাড়ায় পুলিশের উদ্যোগে শান্তি বৈঠক হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় এমন শতাধিক শান্তি বৈঠক হয়েছে। নববর্ষের সকালে তার প্রভাবও দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকালে ধুলিয়ান বাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান খোলা ছিল। এ ছাড়া দু’টি কাপড়ের দোকান এবং তিনটি ওষুধের দোকানও খোলা ছিল। সামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে বিড়ি শ্রমিকদের মহল্লাতেও কাজ শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকা বিড়ি কারখানাগুলিও খুলতে শুরু করেছে। রাজ্য পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর যৌথ তৎপরতায় ফের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে শুরু করেছে এলাকাগুলি। পুলিশের উদ্যোগে শান্তি বৈঠকগুলিতে কোথাও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় থানার ওসিরা, আবার কোথাও থেকেছেন রাজ্য পুলিশের অফিসাররা। নতুন করে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হওয়া আটকাতে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বুথ স্তরে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে শান্তি কমিটি। কোনও রকম অশান্তি বা গুজবের খবর মিললে তা পুলিশের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছে কমিটির উপরে। কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে, স্থানীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যক্তিকে। রবিবার থেকেই এই ধরনের শান্তি বৈঠক শুরু হয়েছিল। এর মধ্যে নতুন করে কোনও অশান্তির প্ররোচনা এড়াতে পুলিশকর্মী এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা যৌথ ভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।