সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে উত্তাল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। সংশোধিত ওয়াকফ আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনের মাঝেই অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে মুর্শিদাবাদের সুতি, সামশেরগঞ্জ এলাকায়। জায়গায় জায়গায় বিক্ষেভ, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অশান্তির ঘটনায় তিনজনের মৃত্যুও হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই এলাকায় শান্তি ফেরাতে হাইকোর্টের নির্দেশে মোতায়েন করা হয়েছে আধাসেনা।রবিবার মুর্শিদাবাদের অশান্ত এলাকায় চলে আধাসেনার টহল। কোথাও কোথাও আবার বসানো হয়েছে পুলিশ পিকেট। রবিবার এলাকা ছিল থমথমে। আতঙ্কে ভুগছে মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। এখনও পর্যন্ত অশান্তির ঘটনায় মোট ১৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংঘর্ষে শনিবার রাতে আরও এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সামশের নাদার নামে ওই যুবককে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন ওই যুবক। কোমরে গুলি লেগেছে বলে খবর। সামসের নাদার সামশেরগঞ্জ থানার ধুলিয়ান পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের হিজলতলা এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের অভিযোগ, শনিবার গন্ডগোলের সময় বিএসএফের গুলিতে আহত হয়েছেন যুবক। আহতের পরিবারের অভিযোগ, শনিবার সামসেরের কোমরে গুলি লেগেছে। তাঁদের অভিযোগ বিএসএফ গুলি চালিয়েছে। তবে কে গুলি চালিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানা যায়নি। রবিবার সকালেও সুতি, সামশেরগঞ্জ-সহ বিভিন্ন এলাকায় ছিল থমথমে পরিবেশ। এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রুট মার্চ করে কেন্দ্রীয় বাহিনী। রাজ্যের একাধিক দক্ষ পুলিশ আধিকারিকদের মুর্শিদাবাদে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার জঙ্গিপুরের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় নতুন করে কোনও অশান্তির ঘটনা ঘটেনি। তবে গোটা এলাকায় এখন থমথমে পরিবেশ। রাতে রাজ্য পুলিশের এডিজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা এলাকা পরিদর্শনে বের হয়েছিলেন। রাতে দু’টি গোষ্ঠীর লোকজনকে নিয়ে শান্তি কমিটির বৈঠক হয় ধুলিয়ানে। শনিবার রাতেই জঙ্গিপুরে এসে উপস্থিত হন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। মুর্শিদাবাদে পৌঁছে কিছু এলাকা ঘুরে দেখেন এবং পরে পুলিশ আধিকারিকদের নিয়ে তিনি দফায় দফায় বৈঠক করেন।সামশেরগঞ্জ এবং সুতি মিলিয়ে মোট ন’টি স্পর্শকাতর জায়গায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বাহিনীর সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় পুলিশও। রবিবার সকাল ৯টা থেকে পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী স্পর্শকাতর কিছু এলাকায় রুট মার্চ করে। জেলার সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতে বাড়তি নজরদারি চালানো হচ্ছে। জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুল আহমেদ দাবি করেছেন, অশান্তি পাকানোর জন্য বাইরে থেকে লোক ঢোকানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘আমি সকলকে শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছি। আমরা কয়েকজন বিধায়ক এবং স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা দিতে একটি রুট মার্চ করেছি। পুলিশ এখানে সক্রিয় রয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সহযোগিতা করছে। আমরা আশা করি এবং প্রার্থনা করি যে, আমরা সবাই একসঙ্গে থাকব।’ এদিকে ধুলিয়ান এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ আতঙ্কে মালদা জেলার বৈষ্ণবনগরে চলে গিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। ভাগীরথী পার করে নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে গিয়েছেন রবিবার ভোরের আলো ফুটতেই। যদিও এ দিন সকাল থেকে নতুন করে অশান্তি ছড়ায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে শুক্রবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান। সুতির সাজুরহাটে একের পর এক সরকারি বাস, গাড়ি, মোটর বাইকে ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। রেহাই পায়নি অ্য়াম্বুল্য়ান্সও। ট্রাফিক গার্ড, পুলিশ কিয়স্কে চলেছে তাণ্ডব-ভাঙচুর। সামশেরগঞ্জে ট্রাফিকগার্ডেও তাণ্ডব চালানো হয়। পুলিশ পিছু হঠতে বাধ্য় হয়। ভিতরে যা যা আসবাবপত্র ছিল, সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভেঙে খান খান করে দেওয়া হয় রেলগেট। গেটম্যানের অফিসে চলে ভাঙচুর। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় একের পর এক দোকানে।সংশোধিত ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত মুর্শিদাবাদের কয়েকটি এলাকা। হিংসার ঘটনা ঘটেছে শমসেরগঞ্জ, সুতি, ধুলিয়ানে। ওই পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশের পর শনিবার রাতে সেখানে পৌঁছে গিয়েছিলেন ডিজি। সূত্রের খবর, তিনি বিএসএফের সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। এর পরেই জেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নেমে রুটমার্চ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। সঙ্গে রয়েছে পুলিশের বিশাল বাহিনীও। রবিবার মুর্শিদাবাদে পৌঁছেছেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি করণি সিংহ শেখাওয়াত। তিনি বলেছেন, ‘‘যত দিন পুলিশ চাইবে, তত দিনই বিএসএফ মোতায়েন থাকবে ওই এলাকায়। জওয়ানদের আরও সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ পুলিশকেও সব রকম ভাবে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন বিএসএফের আইজি। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি।