চাকরি বাতিল-মন্তব্যে আদালত অবমাননায় মমতাকে আইনি নোটিস

IMG-20250410-WA0265

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল হয়েছে।সেই রায়ের কড়া সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।সেই মন্তব্যের জেরেই এবার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিস পাঠালেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত। নোটিসে তিনি জানিয়েছেন, দেশের শীর্ষ আদালতের রায় সকলকেই মেনে নিতে হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী এই রায় কার্যকর করবেন না বলেই দাবি ওই আইনজীবীর। তাঁর হুঁশিয়ারি, মুখ্যমন্ত্রী যদি নিজের মন্তব্যের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা না চান, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশে চাকরি গিয়েছে প্রায় ২৬ হাজার জনের।
এই রায়ের প্রেক্ষিতে ‘অযোগ্য’দের ফেরত দিতে হবে বেতনও। মানবিকতার খাতিরে এই রায় মানতে পারছেন না বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “বিচারব্যবস্থার প্রতি আমাদের পূর্ণ সম্মান আছে। সমস্ত বিচারপতির প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা প্রত্যেককে সম্মান করি। দয়া করে আমার মন্তব্য বিকৃত করবেন না।” রায়ের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর এমন সরাসরি মন্তব্য আদালত অবমাননা করেছে বলে দাবি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্তের। তাঁকে ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন ওই আইনজীবী। সিদ্ধার্থের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী আদালত অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। সেই মর্মে মুখ্যমন্ত্রী এবং নবান্নে আইনি চিঠি পাঠানো হয়েছে।” যদিও রাজ্য সরকারের তরফে বার বার আইনি পথে এগোনোরই বার্তা দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও সে কথা বলেছেন। বুধবার এ কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায় কার্যকর করা হবে না বলে আইনজীবী যে দাবি করেছেন, সে রকম কোনও ইঙ্গিত প্রশাসনের তরফে দেওয়া হয়নি কখনও। চাকরিহারাদের নিয়ে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে গত ৭ তারিখে সভা হয়। সেই সভায় বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে। সংস্থার পক্ষ থেকে আইনজীবী সিদ্ধার্থ দত্ত আইনি নোটিস পাঠিয়ে বলেছেন, চাকরিহারাদের সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী যে বক্তব্য রেখেছেন, তা সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল। তিনি তাঁর বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছেন। যেটা কখনোই কাম্য নয়। তিনি সংবিধানের উল্লেখ করেছেন। যেখানে ১৪১ এবং ১৪২ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, আদালতের রায় কার্যকর করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এর অন্যথা হলে সেটা আদালত অবমাননার শামিল।নোটিসে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের যে অবমাননা হয়েছে এরজন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। গত ৭ তারিখে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমা চাইতে হবে। আদালত নির্দেশিত রায় কার্যকর করতে হবে। এ ব্যাপারে যে বিভ্রান্ত তৈরি দূর করতে যথাযথ পদক্ষেপ করতে হবে। যদি সেটা না হয় সেক্ষেত্রে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হবেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবেন।
মুখ্যমন্ত্রীকে আইনি নোটিস নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডলে করা পোস্টে তাঁর বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যাঁরা চাকরিহারা, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের চাকরি কী ভাবে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, মুখ্যমন্ত্রী সেই চেষ্টা করছেন। সেই প্রক্রিয়ার গতি কমাতেই এই আইনি নোটিস দেওয়া হয়েছে। কুণালের কথায়, ‘‘জটিলতা তৈরি করে প্রক্রিয়ার গতি কমানোর চক্রান্ত। চাকরিহারারা কী চান? মুখ্যমন্ত্রীর চেষ্টা সফল হোক। আপনাদের চাকরি বাঁচুক। না কি এ সব আইনি জট পাকানোর চক্রান্তকারীরা জটিলতা বাড়াক? অবস্থান নিন আপনারা।’’ ২০১৬ সালের এসএসসির সম্পূর্ণ প্যানেল সম্প্রতি বাতিল করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার জেরে চাকরিহারা প্রায় ২৬ হাজার জন। এই পরিস্থিতিতে চাকরিহারাদের একাংশকে নিয়ে নেতাজি ইন্ডোরে সভা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে নিজের মতামত জানিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‘আমি এই রায় মানতে পারছি না।’’ তবে এর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেছিলেন, ‘‘বিচারব্যবস্থার প্রতি আমার আস্থা আছে। আমি বিচারপতিদের সম্মান করি।’’
মুখ্যমন্ত্রীকে আদালত অবমাননার যে নোটিস পাঠানো হয়েছে, তাতে নেতাজি ইন্ডোরের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার কিছু অংশ তুলে দেওয়া হয়েছে।

About Author

[DISPLAY_ULTIMATE_SOCIAL_ICONS]

Advertisement